রাশেদ রাজন : নতুন কালচারে জড়াচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। হিংসা বিদ্বেষের পর এবার সরাসরি নানান কৌশলে শুরু করেছে লুটতরাজ। ক্ষমতাশীল শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের একদল কর্মীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ঘটেছে এই লুটতরাজ। বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। জানাগেেছে এই অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের প্রভাবশালী এক কর্মীর বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে অনেকেই জড়িত আছেন বলে ক্যাম্পাসে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
রাবির ভর্তিচ্ছুদের মোবাইল জমা রাখার নাম করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে । বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি না থাকার পরও বসানো হয়েছে এমন অনেক বুথ। এদের মধ্যে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে ব্যাগ জমা রাখার নামে মোবাইল হাতিয়ে নেয়ায় বিপাকে পড়েন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভর্তিচ্ছুরা। তারা এসব দেখে নির্বাক।
বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে প্রতারক সিন্ডিকেটের মূলহোতা মার্কেটিং বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান চঞ্চল ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের রাকিব খান। এদের মধ্যে চঞ্চল ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে তাদের সাথে টাকার বিনিময়ে কাজ করা আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ছবি অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে।
ভুক্তভোগী ভর্তিচ্ছুরা পরীক্ষা শেষ করে যখন বের হন ততক্ষণে জমা রাখা বুথের লোকজন লাপাত্তা হয়ে পড়ে। এসময় সেখানে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন বিএনসিসির সদস্য ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী জিল্লুর রহমান এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নূর।
সোমবার (২১ অক্টোবর) বেলা ১১ টা ৪৫ এ অনুষ্ঠিত পরীক্ষা শেষে ১৮-২০ জন পরীক্ষার্থী ফোন হারিয়ে গেছে বলে তাদের কাছে অভিযোগ করেন। ভর্তিচ্ছুরা তাদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ভবনের সামনে একটি ডেস্কে ব্যাগ ও ফোন জমা রেখে তারা পরীক্ষা দিতে যাই। ওই ডেস্কে ১০ টাকার বিনিময়ে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে ফোন ও ব্যাগ রাখতে দেয়া হয়েছিল। পরীক্ষা শেষে তাদেরকে ফেরত দেয়া হবে এই শর্তে পরীক্ষার্থীরা ফোন জমা দেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জিল্লুর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, "আমি তখন দুপুরের খাবার খেতে যাচ্ছিলাম। বের হয়ে মোবাইল জমা রাখা বুথের খোঁজ না পেয়ে কান্না করতে করতে থাকে। এসময় ১৭-১৮ জন ভর্তিচ্ছু আমার কাছে মোবাইল জমা রাখা বুথের খোঁজ নিতে আসেন। কিন্তু ততক্ষনে লাপাত্তা হয়ে যান তারা। আমি খেতে যাওয়ায় গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিএনসিসির সদস্য নূরকে বিষয়টি দেখতে বলি।"
এসময় স্বেচ্ছাসেবকরা পরীক্ষার্থীদেরকে ওই ভবনের পাশে প্রশাসনের বসানো ৭ নম্বর হেল্প ডেস্কে তা জানাতে বলেন। তবে এ বিষয়ে ৭ নম্বর হেল্প ডেস্কের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর সুমন হোসেন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমি থাকাকালে এরকম কোন অভিযোগ পাইনি।
আমার অনুপস্থিতিতে কেউ এমন অভিযোগ করেছে বলে আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করে থাকলে আমি অবশ্যই জানতাম। কিন্তু বিএনসিসির সদস্যদের জানানোর পরেও নির্বিকার থেকেছেন তারা।
গতকাল (২১ অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবলিশ চত্ত্বর, ডিনস কমপ্লেক্সের সামনে, শহীদুল্লাহ কলাভবনের পাশ সহ বিভিন্ন জায়গায় ১০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল জমা রাখা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত জড়িতদের কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
ভর্তিপরীক্ষার প্রথমদিনে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে 'মোবাইল,ঘড়ি,ব্যাগ' জমা রাখছেন এমন এক শিক্ষার্থীর কথা হয়। এই বুথ বসাতে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমি চঞ্চল ভাইয়ের হয়ে এখানে বসেছি। ভাই আমাকে বসিয়েছেন। "
একইভাবে ব্যানার টানিয়ে 'মোবাইল, ব্যাগ, ঘড়ি ' জমা রাখছেন মমতাজ উদ্দীন কলা ভবনের সামনের চা-দোকানী নজরুল। একটা মোবাইল বা ঘড়ি যাই রাখুক ১৫- ২০ টাকা করে নিয়েছেন তিনি। সহায়তা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, "ভাই পরীক্ষা চলছে এখন দুটো টাকা ধরে না নিলে কবে নিব? সারাবছর লস দিয়ে ব্যবসা করি। প্রক্টর অনুমতি দিয়েছেন বলেও জানান।
মোবাইল হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান চঞ্চল ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, "আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবন, ২য় বিজ্ঞান এবং ৩য় বিজ্ঞান ভবনের পাশে বুথ ৩ টা বসিয়েছি আবার তুলেও ফেলেছি। তবে এধরণের কাজের সাথে আমি জড়িত না।''
এ ধরনের বুথ বা যেকোন হেল্প ডেস্ক বসানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান। পরীক্ষার আগের দিন ২০ অক্টোবর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু বুথ ভেঙে দেন তারা। কিন্তু এরপরও ছাত্রলীগ সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বুথ বসিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, "বিষয়টি নিয়ে ডিবির সাথে কথা হচ্ছে এবং তারাই ঘটনা তদন্ত করছে।''
পরীক্ষাকেন্দ্রে এসব জিনিস নেয়ার অনুমতি না থাকায় বাধ্য হয়ে টাকার বিনিময়ে জমা রাখেন ভর্তিচ্ছুরা। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ইচ্ছেমতো টাকা হাতিয়ে নেন সুযোগসন্ধানী মহল।
তবে ব্যতিক্রমী আয়োজনও ছিল শিক্ষার্থীদের। গ্রীন ভয়েজ নামের একটি সংগঠন বিনামূল্যে ভর্তিচ্ছুদের ব্যাগ, মোবাইল ইত্যাদি সরঞ্জাম জমা রেখেছে।
ঢাকা, ২২ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: