জয়পুরহাট লাইভ : তাদের জন্ম হয়েছে একসঙ্গে। মৃত্যুও হয়েছে একসঙ্গে। তবে এই মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়। একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাদের জীবন। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে একটি পরিবার। জয়পুরহাটের আরামনগর মহল্লায় বুধবার রাতে আগুনে পুড়ে ওই দুই যমজ ছাত্রীর সঙ্গে ভয়াবহ মৃত্যুর শিকার হয়েছেন মা-বাবা, মা-ভাই, বোন, দাদা ও দাদির। সব মিলিয়ে পরিবারটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে আগুনের ঘটনায়। বসতবাড়িতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ব্যবসায়ী মোমিন হোসেন (৪৫), স্ত্রী পরীনা বানু (৩০), তাদের চার সন্তান বৃষ্টি (১৪), হাসি (১২), খুশি (১২) ও তাইমুল ইসলাম নুর (২), মোমিনের বাবা দুলাল হোসেন (৬০) ও মা মোমেনা বেগমের (৫২)। মর্মান্তিক এ ঘটনায় জয়পুরহাটে শোকের ছায়া নেমেছে। তাদের সবাইকে স্থানীয় কবরস্থানে একে একে দাফনের সময় কান্নার রোল পড়ে উপস্থিতদের মধ্যে।
সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে আরামনগর মহল্লার বাড়িটিতে আগুন ধরেছিল বৈদ্যুতিক লাইন থেকে। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থলে। অন্য পাঁচজনকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুনের সূত্রপাত।
জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর সিরাজুল ইসলাম জানান, বাড়িটির রান্নাঘরে বৈদ্যুতিক রাইস কুকারের কানেকশনে শর্ট সার্কিট হয় বলে আলামত মিলেছে। আগুনে ওই বাড়ির চারটি ঘরের সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আলাদা দুটি কমিটি গঠন করেছেন। সংশ্লিষ্টরা গতকাল থেকেই তদন্ত শুরু করেছেন। জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া বিনতে তাবিবকে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়কে প্রধান করে গঠন করা আরেকটি কমিটি। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোমিনের বাড়ি থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায়। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে দেখতে পায় আগুন জ্বলছে। এ অবস্থায় তাদের ঘরের দেয়াল ভেঙে উদ্ধারের চেষ্টা হয়। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। দাউদাউ জ্বলতে থাকে আগুন। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পোড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় গৃহকর্তা মোমিন, তার বড় মেয়ে জেএসসি পরীক্ষার্থী বৃষ্টি ও মা মোমেনা বেগমের লাশ। গুরুতর দগ্ধ পরিবারের অন্য পাঁচ সদস্যকে দ্রুত নেওয়া হয় জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাদের রাতেই ঢাকায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পৌঁছার আগে মৃত্যু হয় তাদের।
ঢাকা, ০৯ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: