পাবনা লাইভ: সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র সুমন হোসেন। কুদে ওই শিক্ষার্থীর উপস্থিত বুদ্ধিমত্তায় প্রাণে বেঁচে গেল দশজন নৌ-যাত্রী। চলনবিলে নৌকা ডুবে যাওয়া দেখে তাৎক্ষণিক পানিতে নেমে একে একে উদ্ধার করলেন দশজনকে।
সাহসিকতার সাথে সুমন হোসেন ঘটনার দিনে নিজেই দশজনকে উদ্ধার করে মানবতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এই বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্যে বীর উপাধি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন জেলা প্রশাসক।
সে হান্ডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পাইকপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুস সামাদ ও সুফিয়া খাতুনের ছেলে সুমন।
জানা গেছে, ঘটনার সময় শিশু সুমন বিলের মধ্যে ছোট একটি ডিঙ্গী নৌকা নিয়ে প্রতিবেশী এক চাচাকে পাড় করে বাড়ি ফিরছিল। এমন সময় তার পাশেই ২২ জন যাত্রী বোঝাই একটি একটি নৌকা ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া যাত্রীদের আর্ত চিৎকার শুনে তাৎক্ষণিক সুমন ঘটনাস্থলে এগিয়ে যায়।
সুমন ডুবন্ত যাত্রীদের নৌকা ধরতে বলে এবং তাদের নৌকায় না তুলে শুধু নৌকা ধরা অবস্থায় তাদের বিলের পাড়ে নিয়ে আসে। জীবনে বেঁচে যায় তারা পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীদেরকেও উদ্ধার কাজে সহায়তা করে সুমন।
ঘটনা বিষয়ে শিশু সুমন জানান, 'আমার ছোট নৌকাটি ধরে ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পারায় আমি খুশি। সে আরো জানান, ঘটনার সময় যাত্রীরা নৌকাটির মাচার (ছই) উপর দাড়িয়ে সবাই সেলফি তুলতে গিয়ে মাচা ভেঙ্গে যায়। এ সময় সবাই তারাহুরো করে মাচা থেকে নামতে গিয়ে নৌকাটি কাৎ হয়ে ডুবে যায়। এ সময় ওই নৌকার যাত্রীরা আমাকে বাঁচাতে বলে। তখন আমি সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি।'
সুমনের বাবা কৃষক আব্দুস সামাদ জানান, ছেলের এমন সাহসিকতার ঘটনায় আসি আনেক খুশি হয়েছি। আমার ছেলে বড় হয়েও যেন এমন আদর্শ ধরে রাখতে পারে। যদিও আমরা গরিব, তবে ছেলের এমন কাজ দেখে সব দু:খ কষ্টের কথা ভুলে গেছি। আমার ছেলে ডিসি স্যারের হাতে এমন কাজের জন্যে পুরষ্কার পাওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। আমার ছেলের মতো দেশের সব সন্তানই যেন এই ধরনের কাজে এগিয়ে আসে সেটাই প্রত্যাশা তার।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় চলনবিলের পাইক পাড়ায় নৌকা ডুবির ঘটনায় শত শত মানুষ ভিড় করে। এ সময় সবাইকে হতবাক করে দিয়ে সে একাই একটি ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে উদ্ধার তৎপরতায় ঝাঁপিয়ে পরে। তার সহায়তায় একে এক উদ্ধার হয় ১০ জন নৌকা যাত্রী। শিশু সুমনের এমন সাহসিকতা বড়দের জন্যে সত্যিই একটি বড় দৃষ্টান্ত।
গজাইল ডিগ্রী কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর জাকির সেলিম জানান, সুমন যে কাজ করেছে, তা অত্যন্ত মানবিক। ওই দুর্ঘটনার সময় নিজের জীবনবাজী রেখে অন্যের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসা শিশু সুমনের কর্মযজ্ঞ বড়দের জন্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রজ্জাক জানান, 'আমার বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মানবতার সেবায় যে ভূমিকা রেখেছে তাতে আমি গর্ববোধ করি। তার এই কাজের মুল্যায়ন করা খুবই কঠিন। আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যত, সেটা আবারও প্রমাণ হলো।'
পাবনার জেলা প্রশাসক মো: জসিম উদ্দিন বলেন, ডুবে যাওয়া নৌকা যাত্রীদের উদ্ধারে শিশু সুমনের কর্মতৎপরতার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সুমন একজন স্বেচ্ছা শ্রমে একজন বীর। দুর্ঘটনার পর পরই সে একাই দশ জনকে উদ্ধারে সাহসী ভূমিকা রেখেছে।
ঢাকা, ০২ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: