Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

রাবিতে সেইদিনও প্রক্টর ছিলেন, এখনও আছেন!

প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০১৮, ০১:১৫

রাবি লাইভ: ৪৯ বছর আগেও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাবির মেইন গেটের সামনে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। খবর পেয়ে ড. জোহা মেইন গেটে ছুটে যান।

প্রক্টর হিসেবে তিনি ছাত্রদের শান্ত করার এবং ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। ছাত্ররা পিছু হটতে না চাইলে পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন হাদী ছাত্রদের গুলি করার নির্দেশ দেন। তখন জোহা পাক বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে আমার গায়ে যেন গুলি লাগে।’

ড. জোহা ডোন্ট ফায়ার ডোন্ট ফায়ার বলে চিৎকার করতে থাকেন। এসময় বেলা ১১টার দিকে ক্যাপ্টেন হাদী তার পিস্তল বের করে ড. জোহাকে গুলি করে। ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে এভাবেই প্রাণ দিয়েছিলেন তৎকালীন রাবি প্রক্টর ড. জোহা।

একইভাবে দেশব্যপী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাবি ছাত্ররা ২ জুলাই পতাকা মিছিল কর্মসূচী পালন করতে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে। খবর পেয়ে আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেয় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ‘ছাত্রলীগ’।

তবে ঊনসত্তরের মত এদিন পুলিশ হামলা করেনি, বরং পুলিশ উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছিল রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ড. জোহা যে স্থানে শহীদ হয়েছিলেন সেই একই স্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তরিকুলকে হাতুড়ি, রড, জিআই পাইপ, চাপাতি, রামদা, বাঁশ দিয়ে পেটায় ১০-১৫জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এদিন রাবির প্রক্টরের দায়িত্বে ছিলেন প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান। কিন্তু ড. জোহার মত ছাত্রদের রক্ষা করতে তিনি এগিয়ে আসেননি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘কোটা সংস্কারে মত একটি যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা প্রক্টর স্যারের কাছ থেকে যে ধরনের সহযোগীতা আশা করেছিলাম তা পাইনি।’

প্রক্টরের ভূমিকা নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক কেবিএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যখন সবকিছুই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয় তখন পরিস্থিতি এর চেয়ে ভাল হয়না। প্রক্টরের নিরপেক্ষ ব্যক্তি হওয়া উচিত ছিল। কারন প্রক্টর ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিবাবক। তাকে যদি পলিটিক্যালি নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে এমনি হবে। সে এতগুলো শিক্ষার্থীর স্বার্থের চেয়ে প্রশাসনের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে এবং এটাই স্বাভাবিক।’

এ ব্যাপারে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক ড. আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, ‘প্রক্টরকে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে তিনি একজন শিক্ষক। আর সকল ছাত্রই তার কাছে সমান। সর্বাগ্রে শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তারপর কোন শিক্ষার্থীই কারো দ্বারা আক্রান্ত হোক এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি যাতে না হয় এমনভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করতে হবে।’

এবিষয়ে রাবির আইবিএর শিক্ষক মোহা. হাছানাত আলী বলেন, ‘প্রক্টরকে ছাত্রদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। একজন নিরাপরাধ ও দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি আন্দোলনের কর্মীকে রাস্তায় ফেলে পিটানো হয়েছে।

সেদিন যদি প্রক্টর তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন তাহলে এ ধরনের ঘটনা হতো না। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ড. জোহা নিজের জীবন দিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন সেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টরের আরো অনেক বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রক্টর তার সে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলে আজ এ ঘটনা ঘটেছে।’

রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর আমজাদ হোসেন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ছাত্রদের রক্ষায় প্রক্টরের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল তিনি তা পালন করতে পারেননি। আমি মনে করি তিনি ব্যর্থ।’

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় নিজের ভূমিকা নিয়ে রাবি প্রক্টর ড. লুৎফর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, তরিকুলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে মারধর করা হয়। যখন আন্দোলনকারীদের উপর হামলা হয় তখন আমি সেখানে ছিলাম না।

পরে পুলিশ সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে তরিকুলকে জোরপূর্বক ছাড়পত্র দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি। ডাক্তার জানান আমরা এভাবেই সব রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। চিকিৎসা বিষয়ে ডাক্তারের মতকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। এছাড়া আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি।’

 

ঢাকা, ০৯ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ