Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

কলেজে শিক্ষকদের মারধর, ছাত্রলীগের ২ নেতাকর্মী শ্রীঘরে

প্রকাশিত: ৩ জুলাই ২০১৮, ০২:৩৭

পাবনা লাইভ: এখন আর শিক্ষকদের মান সম্মানের দিকে কেউ তাকায় না। কখন কোন শিক্ষক লাঞ্ছিত হবেন এটাও কেউ জানে না। এদিকে পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল-ভাইস প্রিন্সিপালসহ কয়েকজন শিক্ষককে মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রধান আসামি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি ও ছাত্রলীগকর্মী শিশিরকে আটক করা হয়েছে। পরে আজ তাদের আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

সোমবার দুপুরে পাবনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমলি আদালত ২-এর বিচারক আবু বাছেদ বুলু মিয়ার আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন করেন রনি ও মামলার ৮ নম্বর আসামি শিশির। পরে আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট রেজাউল হাসান। পাবনা জজকোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন আক্তারুজ্জামান মুক্তা।

পুলিশ জানায়, ২৭ জুন ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ড. আব্দুস সবুর খান, ভাইস প্রিন্সিপাল আব্দুল জলিলসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তারা প্রিন্সিপালের কক্ষের টেবিলের কাঁচ, সিসি ক্যামেরা, দরজা, জানালা ভাঙচুর করে। তছনছ করে বিভিন্ন আসবাবপত্র।

কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল আবদুল জলিল ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতারা কলেজের প্রসপেক্টাস ও পাঠ্যসূচি মুদ্রিত করে নিয়ে এসে কলেজ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে বিক্রি করাতে বাধ্য করান। বিক্রির পর সব টাকা তারা গুণ্ডাদের মতো এসে নিয়ে যান। আমরা এ কাজের বিরোধিতা করলেই আমাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে।’

তিনি বলেন, ‘প্রিন্সিপাল স্যারের গায়ে হাত তুলতে নিষেধ করায় তারা আমার গলা ধরে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম করেন।’

কলেজের শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, ওই দিন ছাত্রলীগের ২৫ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী প্রিন্সিপালের রুমে এসে প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে প্রসপেক্টাস ও পাঠ পরিকল্পনার জন্য টাকা আদায় করে দিতে বলেন। কিন্তু এতে রাজি না হলে তারা প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালকে মারধর করেন এবং ভাঙচুর করেন।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে পরে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার আরমান বলেন, ‘স্যাররা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতি করেন। সম্প্রতি ভর্তি ও ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছিলেন। আমরা এর প্রতিবাদ করলে শিক্ষকরা আমাদের ওপর চড়াও হয়। সামান্য কথা কাটাকাটি হয় মাত্র। এখানে চাঁদা দাবির তো কোনো প্রশ্নই আসে না।’ আমরা এসব পছন্দ করিনা।

এলাকাবাসী জানান, ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি উচ্চস্বরে বাকবিতণ্ডার কথা স্বীকার করলেও মারপিটের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে কথা বলার সময় স্যারদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। শিক্ষকরা যদি এই ধরনের অপকর্ম করতেই থাকে তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে যাব বলেও জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় নেই।

 

 

ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল হাসান রনি।

এই দু:খজনক ঘটনায় ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল ড. আব্দুস সবুর খান বাদী হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রনি, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার মো. আরমান, সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হাসান, ছাত্রলীগকর্মী শুভ ইসলাম, মো. রাতুল, মো. আসাদ, জাহিদ হাসান, মো. শিশির, মো. শিপন ও হাসানসহ ১১ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ থানায় একটি মামলা করেছেন।

প্রফেসর ড. আবদুস সবুর খান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘সরকারি কাজে বাধাদান, জীবনের নিরাপত্তা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আমি ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি। আমি কোনো প্রকার অন্যায় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নেই।’ আমাদের গা দেয়ালে ঠেকে গেছে। এরা খুবই সমস্যা করছে।

 

শিক্ষকদের কর্মসূচী:

প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল এবং শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।

সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয় ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে । এ ছাড়া বিসিএস শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, কালোব্যাচ ধারণ ও পথসভা করেন। হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে সমিতির উদ্যোগে আজ সারা দেশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচি পালন করে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের বিবিএস শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুরালী মোহন দাস, রসায়ন বিভাগের প্রধান রোকনুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদ, সহযোগী অধ্যাপক কবিতা চাকলাদার, প্রভাষক রাকিবুল হাসান, নাফিউল ইসলাম, টিটন হোসেন, সোহেল রানা ও সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। এ ছাড়া কলেজের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বক্তারা বলেন, বিসিএস শিক্ষকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এসব সন্ত্রাসীরা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করছে। এদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত না করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে।

শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যথেষ্ট ধৈর্য ধরেছি। কিন্তু আর পারছি না।

ঢাকা, ০২ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)/বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ