মাসুদ রানা : সংসারে অভাব। ক্লাস টেন পর্যন্ত টেনেটুনে পড়লাম। তারপর আর হলোনা।
ঢাকা চলে গেলাম। গার্মেন্টে চাকরি। বেশকবছরই চাকরিতে ছিলাম। এত কষ্ট কোনদিনই করিনি। এরমধ্যেই বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করলাম। এবার বুঝতে পারলাম আসলে জীবন কি আর সংসার কি!
অভাবের সংসারে আবার নতুন বউ। আমি অনেক কষ্টে থেকেও গ্রামে টাকা পাঠাতাম। তবু অভাব ছাড়লোনা। হতাশা, কষ্ট আর চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ভাবলাম গ্রামে গিয়ে একটা বিজনেস করবো। চলে আসলাম জয়পুুরহাট। বিজনেসের জন্যতো টাকা লাগে! আমারতো টাকা ছিলনা। অনেক চেষ্টা করেও কোন বিজনেসই করতে পারলাম না।
নিজের অল্প জমিতেই চাষবাস শুরু করলাম। খুব শখ ছিল একটা টিভি কিনব। এত খাটলাম। ফসল ফলালাম, ধান বিক্রি করলাম! তবু সংসার চালাতেই আমার কষ্ট।
টিভি কিনব বলে পাঁচশ টাকা জমাইতো পরদিনই অন্য কোন ঝামেলায় খরচ হয়ে যায়! কোনদিকেই হচ্ছিল না!
রাজশাহীতে আমার শ্বশুরবাড়ি। বেড়াতে আসলাম একবার। আমার শ্বশুরবাড়ির অনেকেই বিভিন্ন ব্যবসা করে! দুয়েকজনকে সব খুলে বললাম। ওরা আমাকে এই ঝালমুড়ির ব্যবসার কথা বললো। এতকিছু না ভেবেই, সবকিছু কিনে প্রথমদিন পথে দাঁড়িয়ে গেলাম। কিভাবে মাখাতে হয় মুড়ি তাও জানিনা আমি তখন! কেমন যেন ভয় ভয় লাগে আমার।
হঠাৎ দুজন মামা এসে বললো, দুইটা ৫ টাকার ঝালমুড়ি দেন! আমার কেমন যেন লাগছিলো বলতে পারবোনা! মুড়ি মাখাচ্ছিলাম আর হাত কাঁপছিলো, সাথে পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো! ওনারা জিজ্ঞেস করলেন, মামা আপনি অসুস্থ নাকি? আমি বললাম, মামা জীবনে এই প্রথম আমি ঝালমুড়ি মাখাচ্ছি। আপনারাই আমার প্রথম কাস্টমার। ওই দশটাকা আমার ভাগ্য বদলে দিল। এরপর আমার আর কোনদিন হাত কাঁপেনি! বাড়িতে আমি কালার টিভি কিনেছি! আরও অনেক জিনিস কিনেছি।
এই ক্যাম্পাসে আর শহরেই আমি মুড়ি বিক্রি করি। যখন গ্রামে যাই, বেচতে বেচতে যাই! ফিরিও এই ঝালমুড়ি নিয়ে...
মাসুদ রানা
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি : SM Fahim Ahmed
ঢাকা, ২১ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: