Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

রাবি ছাত্রলীগে স্থানীয় নেতাদের প্রাধান্য

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বার ২০১৬, ০০:৫০

 



মনিরুল ইসলাম নাঈম, রাবি লাইভ: বাংলাদেশ আ’লীগ সরকারের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার এই সংগঠনটি বিগত এবং বর্তমান কমিটি রাজশাহীর স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্ব  প্রাধান্য দেখা গেছে।

সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুইটি পদের একটি কিংবা দুইটি পদই দখলে রয়েছে রাজশাহীর স্থানীয় ছাত্রনেতাদের হাতে। এতে করে একদিকে যেমন স্থানীয় নেতৃত্বের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা ছাত্রলীগ নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটির একাধিক নেতাকর্মীরা।

৮ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কাউন্সিলে স্থানীয়দের পুনরাবৃত্তি এবং বাইরের নেতাদের মূল্যায়নের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্যাম্পাসে একক রাজত্ব শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের। এই সংগঠনের সময়কালে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত ভিন্ন মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মারধর, শিক্ষক-সাংবাদিক লাঞ্ছিত, সিট বাণিজ্য এবং অনেক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়তে হয়েছে। ছাত্রলীগের একক আধিপত্যের কারণে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনায় বাধা না থাকলেও অন্য ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে সে সুযোগটুকু পাচ্ছে না। তবে ছাত্রলীগের হাতে সবচেয়ে বেশি মারধর এবং নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে শিবিরের নেতাকর্মীরা।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হওয়ার পর অর্থাৎ ২০০৯ সালে পাবনার ইব্রাহীম হোসেন মুন সভাপতি এবং রাজশাহীর মোহনপুর এর আয়েন উদ্দীন আয়েন সাধারণ সম্পাদক, ২০১০ সালে পাবনার আওয়াল কবির জয় সভাপতি এবং রাজশাহী নগরীর মাজেদুল হক অপু সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। জয় ও  অপুর পূর্ণ কমিটি হয়নি এবং মেয়াদও এক বছরেরও বেশি ছিল না বলে জানা যায়।

এরপর ২০১১ সালে নাটোরের আহম্মদ আলী মোল্লা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক দিনাজপুর বীরগঞ্জের আবু হোসাইন বিপু বর্তমান কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে রাজশাহীর মিজানুর রহমান রানাকে সভাপতি এবং বাঘার তৌহিদ আল তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এই কমিটির দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতাই দল থেকে বহিস্কার এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার হয়ে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে দুই জন ভারপ্রাপ্তের বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী কাজলা এবং তালাইমারীতে অবস্থিত।

২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দশ জন দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন। উপরের তথ্যাদি থেকে দেখা যায় একজন দিনাজপুর এবং তিনজন পাবনা ও নাটোর ছাড়া বাকী ছয় জনই রাজশাহীর স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা। অর্থাৎ প্রত্যেক কমিটিতেই স্থানীয়দের প্রাধান্য দেখা গেছে।

বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজশাহীর স্থানীয় নেতৃত্বের কারণে দেশের বাইরের জেলাগুলো থেকে আসা নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ দ্বারা নিয়ন্ত্রীত হওয়ার কারণে এমনটিই হয় বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ রয়েছে।

শুধু স্থানীয় বা বাইরের বলে কোন কথা নয়; যারাই সৎ, যোগ্য এবং নির্ভীক হবে তারাই আগামীতে নেতৃত্বে আসবে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্য অনুযায়ী যারাই কাজ করবে তাদেরই গুরুত্বপূর্ণ পদে দেওয়া হোক বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সভাপতি প্রার্থী মিনারুল ইসলাম।

বর্তমান কমিটির ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক ও নির্যাতিত ছাত্রলীগ নেতা এবং সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী টগর মো. সালেহ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ স্থানীয় আওয়ামী লীগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাইরের নেতাদের তেমন কোন মূল্যায়ন করা হয় না। যার কারণে অনেক বাইরের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ থেকে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

তাছাড়া তিনি আরো বলেন, বাইরের ছাত্ররা আবাসিক হলে অবস্থান করে। ক্যাম্পাসে কোন কিছু হলেই তাদেরকে মোকাবেলা করতে। কিন্তু স্থানীয় নেতারা বাড়ীতে থাকেন। তাৎক্ষনিক কিছু হলে তারা সময়মত আসতে পারেন না। স্থানীয় সুত্রে না, যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং ‘ক্লিন ইমেজধারী’ নেতাদের মূল্যায়ন করার আহবান জানান তিনি।

নাম না প্রকাশে একাধিক ছাত্রলীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, রাবি শাখা ছাত্রলীগ মহানগর আ’লীগ দ্বারা নিয়ন্ত্রীত। লিটন ভাই যাই করবেন তাই হবে। তিনি বরাবরই রাজশাহীর স্থানীয়দের বেছে নেন। এটা তাঁর রাজনৈতিক কৌশল। আমরা আশা করব বাইরের নেতাদের যথার্থ মূল্যায়ন করার।

এর আগে চলতি বছরের ২২ জুলাই কাউন্সিল হবার কথা থাকলেও তা ভেস্তে যায়। অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে রাজশাহীর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতের মিল না থাকায় এমটি ঘটে। বিশেষ করে আ’লীগ সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটন এ ব্যাপারে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকনে।

আগামী ৮ ডিসেম্বর রাবি শাখা ছাত্রলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আসন্ন কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদে মরিয়া পদ প্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতারা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাগম হয়ে ওঠছে। চলছে পার্টি অফিসে নেতাদের সাথে বসে আড্ডা, বিভিন্ন প্রগ্রামে উপস্থিতি, নেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন কলাকৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে। থেমে নেই লবিং-গ্রুপিং থেকে শুরু করে উপর মহলের তদবির।
 
এলাকার কোন বড় ভাই, আত্মীয়-স্বজন কিংবা অন্য কোন মাধ্যম দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে রাজশাহীর স্থানীয় নেতাদের সাথে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ বজায় রাখার প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে ক্যাম্পাসে কার কি ভূমিকা, কে কি কাজ করেছে, কে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে, ভিন্ন ছাত্রসংগঠনের হাতে কে বেশি নির্যাতিত হয়েছে, শিবিরকে ক্যাম্পাস থেকে বের করতে কার সাহসী ভূমিকা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি...। চলছে ক্যাম্পাসে শোডাউন আর মহড়া।
 
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।


রাবি, ২৭ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// এআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ