Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

নোট ফটোকপির উপর নির্ভর রাবির শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বার ২০১৬, ০০:০৩

মনিরুল ইসলাম নাঈম: হ্যান্ডনোট ও ফটোকপির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এই অভিযোগ এক দিনের নয় দুই দিনের নয় গত এক যোগ ধরেই চলছে। কিন্তু কিছুতেই আমলে নিচ্ছেননা সংশ্লিষ্ট শিক্ষর্থীরা।এতে করে যেমন বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে অপর দিকে মেধার বিকাশ তুলনামূলক ভাবে অনকেটাই কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বইনির্ভর পড়াশোনা কয়েকগুণ কমেছে বলে ধারনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহল।

কম পরিশ্রমে কেবল পরীক্ষা কেন্দ্রিক পড়াশোনার মোহে হাতে তৈরি করা এসব নোটে ভালো ফলাফল করলেও তা অন্তঃসারশূন্য বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করেনে। তারা একই সঙ্গে ফটোকপিনির্ভর পড়াশোনাকে আগামী প্রজন্মের জন্য মেধা হুমকি বলেও ধারণা করছেন।

এমনই সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মার্কেটে ‘বিশাল ফটোস্ট্যাট’ দোকানে দেখা গেল ইসলামের ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিভাগের, চতুর্থ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী নোট-ফটোকপিতে ব্যাস্ত। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, আগামী ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নোট সংগ্রহে কজে এসেছে।

আর দোকানী রবিউল ইসলাম ক্যাম্পালাইভ২৪.কম কে বলেন, এখানে বিভিন্ন বিভাগের বিগত কয়েক বছরের হাতে লেখা নোট প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পাওয়া যায়। সবাই দেকানে এসে বিভিন্ন নোট কপি করে নিয়ে যায়।

শুধু বিশাল ফটোস্ট্যাট নয়, বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক ফটোকপির দোকানে নোট-ফটোকপি পাওয়া যায়। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা সুলভ মূল্যে কোন রকম পরিশ্রম ছাড়াই নোট গুলো সংগ্রহ করতে পারে। অপর দিকে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় লাইেেব্ররী-বিভাগীয় সেমিনার লাইেেব্ররী গুলো থেকে বই উত্তোলনের হার গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে।

ইন্টারনেট ভিত্তিক পড়াশোনার কারণে অনেকেই পাঠ্য বই হাতে নিচ্ছেন না। ফলে মূল বইয়ের সঙ্গে সংযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে মেধার লালন সম্ভব হচ্ছে না।
অনেক শিক্ষার্থীই উচ্চ শিক্ষার বিদেশি বইগুলোর উচ্চ মূল্যে কেনা সম্ভব হচ্ছে না বলে হাতে লেখা হ্যান্ড নোট ফটোকপি করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। তারা বড় ভাইবোনদের নোট নিয়ে ফটোকপি করেই সেরে ফেলছেন পড়াশুনা।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্পটে অন্তত আড়াইশ' ফটোকপি মেশিনের দোকান রয়েছে। যাদের ফটোকপি ব্যবসার ওপর অন্তত ৪০০ জনের জীবিকা চলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের মাঝখানে রয়েছে তুহিন, জাহিদ, নূর ও রিভার ফটোকপির দোকান। এসব দোকানে সাধারণত বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের নোট বেশি কপি করা হয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফটোকপির দোকান। টিএসসি ভবনের পিছনে অথ্যাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মার্কেটে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ১৫-২০টি ফটোকপি মেশিনের দোকার সেখানে রয়েছে। এ সব দোকানে সাধারণত আইন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আরবি, ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের নোট পায়ো যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরেও রয়েছে আরও বেশ কিছু ফটোকপির দোকান। এসব দোকানে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় নোট কপি করে থাকেন। এখানে মূলত বাণিজ্য ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা বেশি আসে।
এসব দোকানের প্রতিটিতে অন্তত দুই থেকে তিনটি করে ফটোকপি মেশিন রয়েছে। প্রতিটি দোকানে কমপক্ষে ২-৩ জন করে কর্মচারী কাজ করে থাকেন।

সৈয়দ আমীর আলী হলের সামনে ফটোকপির দোকানদার মাসুদ হোসেন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমি ভাই গত দশ বছরের অধিক সময় ধরে এই ব্যবসা করে আসছি। প্রতিদিন তিনি গড়ে অন্তত দুই থেকে তিন হাজার ফটোকপি করেন। এখানে মূলত হাতে লেখা নোটগুলো বেশি কপি করতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর প্রশাসক প্রফেসর ড. সফিকুন্নবী সামাদী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, এখন ইন্টারনেটের যুগ। অনেক শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বই ডাউনলোড করে পড়াশোনা করছে। আমার দেখা মতে কয়েক বছর আগেও অনেক শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে এসে পড়াশোনা করত। মুখরিত থাকত শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এখানে শিক্ষার্থী আসছে কম।

তবে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এই মেশিন দ্বারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কপি করে পড়াশুনা করবে, এটা খারাপ কিছু নয়। তিনি আরো বলেন, তিনি আশা করবেন শিক্ষার্থীরা এই আধুনিক যন্ত্রকে ভালো কাজে ব্যবহার করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আমজাদ হোসেন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমরা যখন পড়াশুনা করেছি তখন ফটোকপি ছিল না। তাই কেন্দ্রীয় গ্রস্থাগারে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পড়াশোনায় কেটে যেত।

কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্য করছেন অনেক শিক্ষার্থীর কাছে মূল পাঠ্যবই থাকছে না। তারা পরীক্ষার প্রশ্ন নির্ভর পড়াশোনার জন্য বড় ভাইদের হ্যান্ডনোটের ওপরই নির্ভর করছে। মূলত উচ্চ শিক্ষার নির্দিষ্ট বই না থাকায় তারা পাঠ্য বই ব্যবহার থেকে বিরত থেকে কেবল সিলেবাস ভিত্তিক পড়াশোনা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. সারওয়ার জাহান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা যেভাবে চলছে তাতে এটিকে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা বলা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার নাম কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা ক্রমেই মেধার বিকাশ থেকে সিটকে পড়ছে।

এই ফটোকপির নোট পড়েই অনেকে শিক্ষক হচ্ছেন কিন্তু পাঠদান করতে গিয়ে কণ্ঠরোধ হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসছে। তিনি মনে করেন শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে, তাহলেই শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।


ঢাকা, ২১, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ