Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ১লা মে ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভালোবাসা : শুরুটা ‘ভাইয়া’ ডাক দিয়ে

প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বার ২০১৭, ০৮:০৮

অমিত হাসান : আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগের কথা। তখন আমার প্রধান কাজ ছিল নিয়মিত আড্ডা দেওয়া। আড্ডা দেওয়ার বাইরে আর একটা যে কাজ নিয়মিত করতাম তা হল সপ্তাহে তিনদিন টিউশনি করানো। মাঝেমধ্যে ডিপার্টমেন্টে যাই কিন্তু ক্লাস করিনা। পড়ালেখা করার মত স্থূল বিষয় নিয়ে সময় ব্যয় করার সময়, ইচ্ছে কিংবা দরকার কোনটাই নেই। ভাবনা ছিল কবি হব। কবিদের এত পাঠ্যপুস্তক পড়তে নেই। তবে কবিদের সাজ সাজ্জা একটু ভিন্ন হওয়া চাই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ দাড়ি গোঁফের মুখ ঢেকে আলখাল্লা পড়ে ঘুরতেন। আমিও তাই উস্কোখুস্কো চুল আর খোঁচা খোঁচা গোঁফ নিয়ে...

একদিন আই.ই.আর ক্যান্টিনের সামনে করিডোরে দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি।
হঠাৎ কোত্থেকে এক মেয়ে ঝড়ের বেগে এসে ‘ভাইয়া কেমন আছেন?’ জিজ্ঞেস করে উত্তর দেওয়ার আগেই ঝড়ের বেগে চলে গেল। এর ঠিক দুইদিন পর ফেসবুকে দেখি একটা মেসেজ, ‘সরি ভাইয়া সেদিন ভুল করে আর একজন ভাইয়া মনে করে আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি।’ প্রোফাইল চেক করে দেখি মেয়েটি আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই একুশতম ব্যাচ, ল্যাঙ্গুয়েজ স্টীমের। প্রোফাইল ইনফোতে একগাদা হিজিবিজি কিসব লেখা। এই হিজিবিজি লেখার মধ্যে তার নামটা আমার কাছে বেশ লাগল - নামটা ছোট্ট করলে হয় ঈষা।

ঈষার সাথে এরপর এক সন্ধ্যায় দেখা হয় টিএসসিতে। তখন নাট্যকলা ডিপার্টমেন্টের নাট্য উৎসব চলছিল। তাকে বললাম চল নাটক দেখি। বলেই পড়লাম বিপদে। পকেটে একটা পাঁচশ টাকায় নোট আছে। টিকিট কেটে টাকা খুচরা হয়না, অগত্যা ঈষাই টিকিটের টাকা দিল।

চারুকলার সামনে তার টাকা দিয়ে চিকেন ফ্রাই খেলাম। ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র মেয়ের কাছে এভাবে খাচ্ছি, ভেবে একটু কেমন যেন লাগছে। ভাবলাম কবিতা শুনিয়ে কিছুটা ঋণ শোধ করি। নাটক শেষে তাকে কিছুটা এগিয়ে দিতে গিয়ে শুধু কিছুটা ঋণ শোধের জন্য এক লাইনের একটা কবিতা বললাম,

‘একদিন বাগানে এসো
ফুলেরা তোমাকে দেখবে।’

ঈষা বোধহয় কবিতা টবিতা পড়ে না। জিজ্ঞেস করল, মানে কি? বুঝলাম না কিছুই।
তাকে বললাম, এটা একটা কবিতার লাইন। ঈষা এর ব্যাখ্যা জানতে চাইল। বললাম, এই নশ্বর পৃথিবীতে সবচেয়ে পবিত্র ও সুন্দরতম প্রাণ হল ফুল। তো এই ফুলেরা একদিন জানল এই পৃথিবীতে তাদের চেয়েও একটা পবিত্র ও সুন্দরতম প্রাণ আছে। তো সেই সুন্দরতম প্রাণটিকে দেখার জন্য ফুলদের খুব কৌতূহল হল, তাই ফুলেরমালা কবিকে সুন্দরতম মেয়েটিকে একদিন বাগানে আনতে বলেছেন।

নিতান্তই উদ্ভত কথা। মেয়েটি খুব সম্ভবত আমার রসিকতা ধরতে পারে নি, পরের দিন বিকালে সে আমার হলে এসে হাজির।

আমাকে বলে, কবি সাহেব কোথায় আপনার বাগান? চলেন ফুলদের আশা মিটিয়ে আসি, বলেই সে খিলখিল করে হাসতে লাগল। আমি চোখ মেলে মেয়েটির দিকে তাকালাম।
কালো শাড়ি, কপালে কালো রংয়ের ছোট্ট একটা টিপে মেয়েটিকে সত্যিই সুন্দরতম প্রাণ লাগছে।

মনে পড়ল জীবনানন্দের একটি কবিতার লাইন,
এই পৃথিবী একবার পায় তারে পায় নাকো আর।
জীবনানন্দদাশের কবিতাকে উপেক্ষা করে আমরা গেলাম, মেয়েটিকে একবার না, শত হাজার সহস্র বার পেতে হবে। সেদিন শিশু পার্কে মেয়েটি যে পরম মমতায় আমার হাত ধরেছিল আজ তার ঠিক দুই বছর পূর্ণ হল। পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা আজীবন যেন সেই হাত দুটি আমি ধরে রাখতে পারি।

অমিত হাসান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা, ০৬ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ