বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে বাসায় ফেরার জন্য পলাশী থেকে রিকশা ঠিক করলাম। ভাড়া ৮০ টাকা চাইল। সাধারণত ১০০ টাকা চায়। একজন কম চাইল। রিকশায় উঠে গেলাম।
বাসার কাছাকাছি যখন আসলাম তখন রিকশাওয়ালা আমাকে বলেন, "প্রতিদিন কী এইখান থেকে ক্লাসে যাওয়া আসা করেন?"
আমি বলি না। পাস করেছি ৩ বছর হলো।
রিকশাওয়ালা : "ও আচ্ছা! এখন কী করেন?"
আমি : "চাকরি করি।"
রিকশাওয়ালা : "ও আচ্ছা! আমার ছেলেও বুয়েটে পড়ে। এখন ফাইনাল ইয়ারে।"
আমি : "আপনার ছেলে বুয়েটে পড়ে!! "
রিকশাওয়ালা : "হা!"
আমি : "কোন ডিপার্টমেন্ট?"
রিকশাওয়ালা : "সিভিলে পড়ে।"
আমি : (যেহেতু ফাইলান টার্মে বলেছেন তাই HSC টা জিজ্ঞাসা করলাম) " ও HSC দিয়েছে কবে?" দেখলাম রিকশাওয়ালা ঠিক ঠিক answer দিলেন!
HSC year শুনে আমি নির্বাক!
তার ছেলে যে আসলেই বুয়েটিয়ান! কিছুক্ষণ অবাক বিস্ময়ে চুপচাপ বসে থাকলাম আর একটু পর জিজ্ঞাসা করলাম!
"আপনার কয় ছেলে মেয়ে?"
"২ ছেলে ১ মেয়ে।
মেয়েটা ইডেনে প্রাণীবিজ্ঞানে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ছেলেটা ক্লাস টেন এ বুয়েট স্কুলে পড়ে।"
আলাপ করতে করতে বাসার সামনে চলে এলাম।
রিকশা থেকে নেমে বললাম, "আপনি আগে কি করতেন?"
"পাঞ্জাবির কারখানা ছিল। টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।" তারপর বললেন "মানুষ জন বলে, তোমার ছেলে তো বুয়েটে পড়ে, তোমার রিকশা চালানোর কী দরকার। কিন্তু আমারটাতো আমি বুঝি।
কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাতে হয়। ছেলেটা টিউশনি করে নিজের টা নিজে চালায় ।"
আরো অনেকক্ষণ কথা বললাম আমরা, তিনি আমাকে বললেন কিভাবে ছেলেকে পড়াচ্ছেন, ছেলে ক্লাস ৫ এ বৃত্তি পেয়েছে, SSC তে A+ তারপর HSC তে গোল্ডেন A+ পেয়েছে। তেজগাও, কুয়েট, বুয়েটসহ আরো অনেক জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল। সব জায়গায় চান্স পেয়েছে সে। যখন দেখলো ছেলে বুয়েটে টিকেছে, তখন চোখ বন্ধ করে ছেলেকে বুয়েটে ভর্তি হয়ে যেতে বললাম।
আমি বললাম আপনি আসেন আমার সাথে ভাত খাবেন। বাসায় আম্মু আব্বু নাই এখন। আমিই আপনাকে ভাত রেঁধে খাওয়াব। আপনি একজন গর্বিত পিতা! আপনি রিকশা সাইড করে আমার বাসায় আসেন। তারপর উনি বললেন, না বাবা থাক! তোমার আম্মু আব্বু যেহেতু নাই আজ লাগবে না।
আমি বললাম "আচ্ছা আপনি একটু দাঁড়ান। আমি আসছি বাসার ভিতর থেকে। মানি ব্যাগে যা ছিলো পুরোটাই দিয়ে দিলাম উনাকে। বললাম এটা আপনি রাখেন। বেশি দিন না, আর মাত্র ৬ মাস! তারপর থেকে আপনার আর কষ্ট করা লাগবে না। আপনার ছেলে বুয়েটে পড়ে।
সামনে আপনার সুদিন।
[পাশে দাঁড়ানো আরেক যাত্রী আমার শেষের কথাগুলো শুনলেন এবং উনার রিকশা করে যেতে যেতে অবাক হয়ে কী কী যেন জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন ]
আমাদের এ দেশটা বড়ই অদ্ভুত!! গুণীজনরা রিকশা চালিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগান। আর ধনিরা দেশ চালায়, অৰ্থের পাহাড় গড়ে, ছেলে মেয়েদের বিদেশে পড়ান।
[কার্টেসি : আশিক]
ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: