আরাফাত আবদুল্লাহ : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি ছেলে মেয়ের জীবনে একটা করে গল্প আছে। হয়তো সেই গল্পটা কখনো প্রকাশ পায়। হয়তোবা কখনোই প্রকাশ পায় না।
ইমরান নামের ছেলেটা কখনো বাড়িতে যেতে পারে না। কেন জানেন? কারণ কলেজে থাকতেই ওর মা মারা গিয়েছিল। বাবা সাথে সাথেই দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়েছেন। সংসারে যে নতুন মা এসেছেন সেই মা ইমরানকে পছন্দ করেন না। বাসায় গেলেই অশান্তি শুরু হয়। বেচারা ইমরান ঈদের দিনগুলাতে তাই ক্যাম্পাসেই থাকে। কেউ জানে না ঈদের দিনে ফাঁকা ফাঁকা হলগুলোতে ইমরানের মতো নিঃসঙ্গ মানুষগুলা কিভাবে সময় পার করে।
সাবিহার মতো মেয়েগুলাকে আমরা চোখের সামনেই দেখি। কিন্তু তার গল্পটা জানি না। সাবিহার বাবা নেই। তিন ভাই বোনের সংসার। সেই সাথে লেখাপড়া !! কল সেন্টারে তাই জব করে সে। মুখ বাকিয়ে "কল সেন্টারের মেয়েরা খারাপ হয়" বলার আগে জানার চেষ্টা করবেন এই মেয়েটা তার পরিবারের জন্য কতো বড় আশ্রয় হয়ে আছে।
সুবলের রেজাল্ট খারাপ ।
হুম ... ছেলেটা পড়াশোনাই করে না। কিন্তু যে গল্পটা আপনারা জানেন না তা হচ্ছে, সুবল একসময় ভালো ছাত্রই ছিল। ক্যাম্পাসে এসে কেন ডিরেইল হয়ে গেল সেটা ঘাটলে দেখতেন, ছেলেটা কাউকে পাগলের মত ভালোবাসতে গিয়ে প্রতারিত হয়ে এখন আধ পাগলা সাইকোতে পরিণত হয়েছে। এমনি এমনি ডবল এ প্লাস পেয়ে বোর্ড স্ট্যান্ড করা ছেলেটা আজকে অকারণেই সাপ্লি ইম্প্রুভ রেখে বেড়ায় না।
রাতুলের মতো নিপাট ভদ্র ছেলেটা আজকে পলিটিক্যাল ক্যাডার হয়ে মাঠে ময়দানে মারামারি করে। রাতুল খারাপ। রাতুল বদমাইশ। কিন্তু একটু মমতা নিয়ে যদি তার অতীতটা ঘেটে দেখতেন তাহলে হয়তো জানতে পারতেন এই ভদ্র ছেলেটাকে একদিন বিনা অপরাধে হলের করিডোরে শুইয়ে পেটানো হয়েছিল। কেউ এগিয়ে আসেনি সেদিন। মিথ্যা বানোয়াট মামলার আসামি হয়ে ছেলেটা বুঝতে পারলো শক্ত পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া সে টিকতে পারবে না। শুরু হল বাঁচার সংগ্রাম। ভদ্র রাতুল হয়ে গেল ক্যাম্পাসের আতংক ক্যাডার রাতুল !!
প্রত্যেকের একটা গল্প আছে।
পরিপাটি মেকাপে যে মেয়েটা ফেসবুকে ছবি দিয়ে নিজেকে সুখী প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, খোঁজ নিয়ে দেখুন তার মনের কষ্টগুলা মেকাপ দিয়ে সে ঢেকে রাখতে পারেনি। সময় সময় ঠিকই সেগুলা তাকে পীড়া দেয়।
যে ছেলেটাকে আপনার কাছে ফ্রড, জালিয়াত বলে মনে হয় খোঁজ নিয়ে দেখুন, আপনার জন্য তার মনে আকাশসম ভালোবাসা জমে আছে। সে প্রকাশ করতে পারেনি। বুঝাতে পারেনি। অবুঝের মতো দেখে গেছে সব। কিন্তু তার ভালোবাসাটা মিথ্যে নয়।
আলোছায়ার খেলার মতোই রহস্যময় এই গল্পগুলোর কেন্দ্রীয় চরিত্রে যারা মিশে থাকেন সেই মানুষগুলো কিন্তু আজীবনই সবার কাছে অপ্রকাশিত হিসেবেই থাকে। কখনো সিগারের ধোঁয়ায় সেই গল্পটা সোডিয়াম লাইটের আলোতে মিশে যায়। আবার কখনো একা পথ চলতে থাকা ঘামে ভেজা মেয়েটার চিবুক বেয়ে সেই গল্পটা রাতের আঁধারে চিক চিক জ্বলতে থাকে।
হ্যাঁ... চিক চিক করেই জ্বলতে থাকে।
Arafat Abdullah (মধ্যরাতের অশ্বারোহী)
University Of Chittagong
ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: