Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

সাপের বিষে ছটফট, ফেইসবুকে বাঁচার আকুতি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর!

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বার ২০১৭, ২০:২১

লাইভ প্রতিবেদক : আর কদিন বাদেই তিনি বিসিএস ক্যাডার হতেন। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল সেটাই। নিজেও সেই স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন। ৩৬তম বিসিএস ভাইভা দিয়েছেন তিনি। এমনকি ৩৭তম লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। ওই পরীক্ষায় ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এরই মাঝে নিজের এলাকায় একটি স্কুলে শিক্ষকতার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন।

পরিবারের আশার আলো ওই মেধাবী ছাত্রীটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। মেধাবী ওই ছাত্রী শিমু ইসলামের জীবনের গল্পটি এখানেই শেষ। সামনে এগুনোর আগেই তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

মোবাইলে কথা বলার সময় নিজের গ্রামের বাড়িতে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এখানেই শেষ নয় তার মৃত্যুর জন্য দায়ি হাসপাতালে অব্যবস্থপনা। টাঙ্গাইলের হাসপাতালে ভ্যাকসিন না পেয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে ভ্যাকসিন দিতে হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। বিষের প্রভাবে নীলাভ শিমুকে ভ্যাকসিন দেয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।

মৃত্যুর আগে শিমুও বাঁচার অনেক চেষ্টা করেছেন। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সাপের বিষের ভ্যাকসিন কোথায় পাওয়া যায়? কিন্তু তার ওই প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারেনি। মৃত্যুর আগে তার নিজের ফেইসবুক আইডিতে দেয়া ওই স্ট্যাটাসে একের পর এক কমেন্ট, লাইক শেয়ার হয়েছে কিন্তু কেউ কোন সমাধান দিতে পারেননি। সবাই কেবল সমবেদনাই দিয়েছেন। এদিকে শিমুকে বাঁচাতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি।

তার মৃত্যুর পর ফেইসবুকে আরেকদফা ঝড় উঠে। তবে এবার কিন্তু শিমু আর কোন রিপ্লাই দিতে পারেননি। কারণটা সবার জানা। না ফেরার দেশ থেকে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া যায় না...

মৃত্যুর আগে শিমুর দেয়া লাস্ট ফেইসবুক স্ট্যাটাসে এখনও একের পরে এক কমেন্ট পড়ছে। যেখাকে কেবল আফসোসের সুর।

আর কত মেধাবী এভাবে অকালে ঝড়ে যাবে তার উত্তর হয়তো কারো জানা নেই।

জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের (৩য় ব্যাচের) শিক্ষার্থী ছিলেন শিমু ইসলাম। ৩৬ তম বিসিএস ভাইভা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ৩৭ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। স্বপ্ন পূরণের আগেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। স্বাভাবিক কোন মৃত্যু নয় সাপের বিষে ছটফট করতে করতে তিনি মারা গেছেন।

বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিমু ইসলম বাড়িতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলেন। এসময় তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে শিমু জানান তাকে সাপে কামড় দিয়েছে। তবে এসময় শিমুর পরিবারের কেউ ছিল না সেখানে।

ঘটনার পরে আত্মীয়দেরকে যোগাযোগ করেন আক্রান্ত শিমু। পরে স্বজনরা এসে তাকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সাপে কাটার ভ্যাকসিন না থাকায় রাত একটার দিকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে সাপের বিষে নীলাভ শিমুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায় আনেক। ভ্যাকসিন তখন আর কোনো কাজে আসেনি। বিষাক্ত এই দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে ততক্ষণে মৃত্যুপথে পা বাড়িয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারের গর্ব হতে চেয়েছিলেন তিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় ব্যাচের এই মেধাবি বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বিসিএস ক্যাডারশীপের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ৩৬ তম বিসিএসে ভাইভাবোর্ডে চমৎকার পার্ফর্মেন্স দিয়ে আসা এবং ৩৭ তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার গৌরব অর্জন করে আসা শিমু জীবনের হেরে গেলেন বিষের কাছে। তিনি বাসাইলের কাঞ্চনপুর দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাও ছিলেন। ওই এলাকার নুরু মিয়ার মেয়ে তিনি।

এই অত্যাধুনিক যুগে এসেও তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা ও উপযুক্ত সময়ে ভ্যাকসিনের অভাবে বিষের যন্ত্রণায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তার এমন অকাল মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।


ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ