Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

আমেরিকায় বাংলাদেশী ছাত্রের স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প

প্রকাশিত: ৩০ আগষ্ট ২০১৭, ০৭:২৪

আসাদুজ্জামান ও সফিউল আলম : ‘মানুষ ঘুমিয়ে যা দেখে তা স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন হলো সেটাই যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’ স্বপ্ন নিয়ে এপিজে আবদুল কালামের অনুপ্রাণিত উক্তি এটি। তিনি সব সময় ছিলেন স্বপ্নের পক্ষে। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘স্বপ্ন ও স্বপ্নবাজরা সবসময় সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারেন।’ তাই তিনি সবাইকে স্বপ্ন দেখতে ও স্বপ্নের পেছনে তাড়া করতে উদ্বুদ্ধ করতেন।

তার মতে, ‘স্বপ্ন দেখতে হবে। কারণ, স্বপ্নটা চিন্তায় পরিণত হয়। আর চিন্তা মানুষকে কর্মে অনুপ্রাণিত করে।’

কথাগুলো বেশ গুরুত্ব সহকারেই মনে গেঁথে নিয়েছিলেন মাদারীপুরের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মানিক চন্দ্র মিত্র।

বাবা পূর্ণচন্দ্র মিত্র সবসময় ছেলেকে নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। মানিক অংকে বেশ পটু। অন্যান্য বিষয়ে তার প্রতিভা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাইতো একদিন স্কুল শিক্ষক তার বাবাকে বলেছিল “ছেলে আপনার মুখ উজ্জ্বল করবে।” সেই মানিক পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন।

স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। সেই স্বপ্নের পথে হাঁটতেই বুয়েটে (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নেয়া।

২০০৩ সালে খালিয়া রাজারাম স্কুল থেকে স্টার মার্কস পেয়ে এসএসসি পাশ করেন মানিক। পরে ভর্তি হন নটরডেম কলেজে। সদালাপী মানিক অল্প সময়েই হয়ে গেলেন নটরডেম সাইন্স ক্লাবের সক্রিয় সদস্য। অভিনয়ের প্রতিও ভালোলাগা ছিল তার। হলেন নটরডেম নাট্য ক্লাবের সদস্য। ফেস্টিভাল নামে একটি নাটকেও অভিনয় করেন। কিন্তু নিজের স্বপ্নের প্রতি অবিচল থাকায় সেখানে খুব একটা সময় দিতে পারেননি মানিক।

এভাবেই কেটে গেল বছর দুই। পরে এইচএসসি পরীক্ষায় আবারও জিপিএ-৫ পাওয়া। স্বপ্ন এবার শুধুই বুয়েট। সুযোগটাও পেয়ে গেলেন ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জেনিয়ারিং বিভাগে। এ যেন স্বপ্নের পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া।

এবার পড়াশোনার পাশাপাশি বুয়েটেও যুক্ত হলেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে। কাজ শুরু করলেন ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সাথে। সাধারণ সদস্য থেকেই হয়ে গেলেন সভাপতি (২০০৯-২০১০ সেশন)।

লেখাপড়ার পাশাপাশি মানিক ফুটবল, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টনে ছিলেন সমান পারদর্শী। কোন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করাটা যেন রুটিনমাফিক কাজ হয়ে গিয়েছিল মানিকের।

বুয়েটে চতুর্থ বর্ষে পড়াকালীন উচ্চতর ডিগ্রির স্বপ্ন বুনেন মানিক। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তার জন্যওতো জিআরই কিংবা টোফেলে ভালো পয়েন্ট চাই। পেয়ে গেলেন সেটাও। ফুল ফ্রি স্কলারশিপসহ সুযোগ পান আমেরিকার স্বনামধন্য ট্যাক্সাস ইউনিভার্সিটিতে। সেন এন্টোনিও প্রদেশের এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

“ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে” এমন প্রবাদটা যেন মিলে যায় মানিকের সাথে। সেখানেও নেতৃত্বের গুণাবলি ধরে রাখেন। নির্বাচিত হন আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স (এএসসিই) হোস্টন ব্রাঞ্চের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া বর্তমানে তিনি এইচ.আর গ্রীণের ওয়াটার রিসোর্স বিভাগের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও নিজেদের মধ্যে ইউনিটি তৈরি করার জন্য গড়ে তুলেছেন “বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন” নামে একটি সংগঠন।

নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য মাত্রায়। তাই নিজের দেশের জন্য কিছু করতে চান মানিক। কি পরামর্শ দেবেন নিজ দেশের অনুজদের। এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে তিনি ‘ইংরেজি শিক্ষার দক্ষতা’র উপর জোর দেন।

কীভাবে তা করা যায়? মানিকের উত্তর- “এক্ষেত্রে বিভিন্ন ইংরেজি মাধ্যমের টিভি শো, মুভি কিংবা ডকুমেন্টারি নিয়মিত দেখা যেতে পারে। এগুলো থেকে প্রতিদিন যেসব নতুন শব্দ শোনা যায় তা লিখে রাখতে হবে। স্পিকিংয়ের দক্ষতা বাড়াতে প্রতিদিন অন্তত ৩০মিনিট বন্ধুদের সাথে কথা বলতে হবে।”

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে শুধু ফেসবুকিং না করে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও এর ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন মানিক।

বাংলাদেশকে নিয়ে মানিকের স্বপ্ন :

“আমি গর্বিত যে আমি একজন বাংলাদেশি। আমার দেশ আমাকে বেড়ে উঠতে ও সঠিক শিক্ষা অর্জন করতে মূল ভূমিকা পালন করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক লেভেলে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় অবদান রাখতে চাই”

এমনটাই প্রত্যাশা করেন মানিক মিত্র। এজন্য তিনি গ্রামে আন্ত:স্কুল বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করার পরিকল্পনার কথা জানালেন। সবাইকে আরও সচেতন করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

বাংলাদেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিক এই স্বপ্ন সবার। তবে এর পেছনে যাদের ভূমিকা মূখ্য তারা যেন এগিয়ে আসেন সবার আগে। এমন মানিকের সংখ্যা যখন গুটিকয়েক থেকে সহস্রাধিক হবে, ঠিক তখনই বাংলাদেশ বিশ্বের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে স্বমহিমায়। এমনটাই প্রত্যাশা সবার...


ঢাকা, ৩০ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ