মেহেদী জামান লিজন, জাককানইবি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা থমকে আছে মেডিক্যাল অফিসারের মৃত্যুতে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের (মমেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার স্বপ্না কুণ্ডু (৩৫) মারা গেছেন ২২ মে।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোখলেছুর রহমান আকন্দ জানান, ‘ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিনের নামে একটি মামলা চলছে। গত ৪ মে ভুক্তভোগী নিজেই মামলাটি দায়ের করেন। গত ৭ মে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ডা. স্বপ্নার অধীনে ওই শিক্ষার্থীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু মেডিক্যাল অফিসার মারা যাওয়ায় প্রতিবেদনটি আর পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিভাগ থেকে বলতেও পারছে না, কবে ওই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’ এই মামলার তদন্ত ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও সময়মতো ফরেনসিক প্রতিবেদন না পাওয়ায় তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ময়মনসিংহ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, ‘সময়মতো ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়া না গেলে তদন্ত কাজ ব্যাহত হবে। এমনকি বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন।’
তবে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কাজী গোলাম মোখলেছুর রহমান দাবি করছেন, কর্মরত অবস্থায় কোনও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মৃত্যু হলে তার অসমাপ্ত প্রতিবেদন কে তৈরি করবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা নেই। এ কারণে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগও কিছু করতে পারছে না।
ডা. গোলাম মোখলেছুর বলেন, ‘ডা. স্বপ্নার দায়িত্বে নারী ও শিশু নির্যাতনসহ প্রায় ৫০টি মামলার ফরেনসিক প্রতিবেদন ছিল, যেগুলো তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। বিভিন্ন মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা ফরেনসিক প্রতিবেদন না পেয়ে বিভাগে এসে অভিযোগ করছেন। কিন্তু তাদের কোনও সদুত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিগগিরই অফিস আদেশের মাধ্যমে নিহত মেডিক্যাল অফিসার ডা. স্বপ্না কুণ্ডুর অসমাপ্ত প্রতিবেদন শেষ করার জন্য ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাতে আর প্রতিবেদন দিতে খুব একটা সমস্যা হবে না।’
উল্লেখ্য, গত ২ মে নির্যাতিত ওই শিক্ষার্থী বিভাগীয় ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর শিক্ষক মিনহাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে এবং ওইদিনই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ট্রেজারার প্রফেসর এএমএম শামসুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ৪ মে ওই শিক্ষার্থী বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করার পর গত ৭ মে পুলিশ আসামি মিনহাজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান। এরই মধ্যে গত ৭ মে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগে ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।
ঢাকা, ০৭ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: