Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

‘হাওরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রয়েছে’

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:৩৫



বাকৃবি লাইভ: নেত্রকোনা জেলার হাওর এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের একটি বিশেষজ্ঞ দল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি ও প্রো-ভিসি চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ জসিমউদ্দিন খান এর নির্দেশক্রমে গতকাল সোমবার কৃষি, মৎস্য, পশুপালন ও কৃষিঅর্থনীতিবিদের নিয়ে একটি সমন্বয়ক দল নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রামের ডিঙ্গাপোতা হাওরের বিভিন্ন  এলাকা পরিদর্শন করেন।


বাকৃবির হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও কৃষিতত্ত্ববিদ প্রফেসর ড. মো. আবদুর রহমান সরকারের নেতৃত্বে গবেষক দলে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন প্রফেসর ড. আবু হাদী নূর আলী খান, প্রফেসর ড. সুবাস চন্দ্র দাস,প্রফেসর ড.মোঃ সাইদুর রহমান, ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. জাকির হোসেন।


গবেষকদলটি হাওরটির বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি ও মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে। পানির বেশ কিছু পরীক্ষা ওখানেই করেন দলটি ।


তাৎক্ষণিক নমুনা পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে তাঁরা জানান, গভীর হাওর থেকে শুরু করে কয়েকটি স্থানের পানি পরীক্ষা করে পানির পিএইচ গড়ে (৭.৫), পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেন (৪-৬.৫), অ্যামোনিয়া গ্যাসের (.০২%),ইলেকট্রিক কনডাকটিভিটি ৮৪,টিডিএস ১৩৫ পিপিএম পাওয়া গেছে যা পরিমানগত স্বাভাবিক মাত্রা বলেও জানান তারা।  তারা পানিতে ভারী ধাতু আছে কিনা ও অধিক গবেষণার জন্য মাটি ও পানির নমুনা সাথে নিয়েছেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হবে।


তাঁরা আরও বলেন, কচি ধান পানিতে তলিয়ে এনঅ্যারোবিক ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার ল্যাকটিক এসিড তৈরি হওয়ায় পানির পিএইচ, পানিতে অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইট গ্যাসসহ অন্যান্য গ্যাস তৈরি হওয়ায় মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মৃত্যুও হয়েছে। কয়েকদিন ধরে ক্রমাগত বৃষ্টি পানি মিশে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ দল এ এলাকায় কোন মরা মাছ কিংবা হাঁসের সন্ধান পাননি বলেও জানিয়েছেন।


সরজমিনে পরিদর্শনে শেষে ড. মো. আবদুর রহমান সরকার বলেন, বোরো ধান পাকার আগেই টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যায় চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জের বোরো আবাদের ৯০ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একমাত্র ফসল হারিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন সাধারণ কৃষকরা। তবে ধান পাকা কিংবা আধা পাকার আগেই এমনটি হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ শতভাগ হবে জানান এই কৃষিতত্ত্ববিদ।


গবেষকগণ জানান, হাওরের পানির বর্তমান অবস্থা ভালো। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে মাছ কিংবা জলজ এলাকায় বসবাসরত প্রাণির মারা যাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই। আরও জানান ফসল ও মাছের ক্ষতির বিষয়টি সঠিক হিসাব তারা দ্রুত সরকারকে জানাবেন।

তিনি বলেন এর আগে এ ধরনের ক্ষতিতে ফসলহানি হলেও পরবর্তীতে হাওরের মাছের উপর নির্ভর করে কাটিয়ে উঠতে পারতেন হাওরবাসী। কিন্তু এ বছর এ সুযোগটা কম। কারণ  প্রচুর পরিমাণ মাছ মারা যাওয়ায় কঠিন সমস্যায় পড়েছেন তারা। এক্ষেত্রে তিনি সরকারের ঘোষণাকৃত ত্রাণ ও আর্থিক সহযোগিতা পৌঁছানোর তাগিদ দেন।


তিনি  আরো বলেন,  হাওর এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য বিনা সূদে ঋণ, কৃষি উপকরণ সুবিধা দিলে দ্রুত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেরও এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়া যেসকল জমিতে আমন ফসল করা সম্ভব সেখানে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে আগাম আমন ধানের চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে । রবি মৌসুমে আগাম সরিষা, ডালজাতীয় ফসল, চিনা বাদাম, ভ’ট্টা, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি চাষে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করতে হবে।


বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দলটিকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন এবং হাওর এলাকা পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহমেদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মফিজুল ইসলাম,উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ দিলীপ সাহা।

এছাড়া জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু, গবেষণা সহকারী মোঃ হাবিবুর রহমান, দৈনিক সমকাল ও দৈনিক জনকন্ঠ এর সাংবাদিক আহাদ আলম শিহাব ও মোফাজ্জল হোসেন মায়া এবং বাকৃবি এর সহকারী ফটোগ্রাফার মোঃ আলমগীর পরিদর্শনকালে বাকৃবির গবেষক দলের সাথে উপস্থিত ছিলেন ।


উল্লেখ্য উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী আগাম বন্যায় নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার মোট বোরো আবাদকৃত ১৬,৮২০ হেক্টর জমির মধ্যে ১৪,০০০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তারমধ্যে শুধুমাত্র হাওরেই ডুবে গেছে ৬,৫০০ হেক্টর জমির ধান।এসকল জমির শতকরা ৯০ ভাগ ফসলই সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সংখ্যা ২৩,৪০০টি।

 

 

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ