সিকৃবি লাইভ: অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে গেছে সুনামগঞ্জের সব হাওর তলিয়ে গেছে। পঁচে গেছে টনকে টন কাঁচা ধান, মাছও মরে ভেসে উঠছে, হাঁসের খামারেও মরকের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
দুর্গতদের সেবা প্রদান করতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল সোমবার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গিয়েছে। ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এএফএম সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে টিমের সদস্যরা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিশেষজ্ঞরা দেখার হাওর, নলুয়ার হাওর, সাংহাই হাওরসহ আরো কয়েকটি হাওরে কৃষকদের তলিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেত এবং দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখেন।
বিশেষজ্ঞ টিম জানায়, সুনামগঞ্জ শহরে এখনও হাওরের পঁচা পানির দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেতের আধা-পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। শুধুমাত্র মাঝারি উঁচু জমির কিছু ফসলের শীষ দেখা যাচ্ছে। তা আবার অতি বৃষ্টিজনিত কারণে বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশংকার মধ্যে রয়েছে। কিছু কৃষক এখনো তাদের তলিয়ে যাওয়া ধান সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তা সংগ্রহ করে নিকটস্থ উঁচু রাস্তায় স্তুপ করার পর দেখা যায় যে অধিকাংশ ধান পরিপক্ক হয়নি। তাছাড়া এখনও প্রতিদিন বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং রৌদ্রের অভাবে ধান শুকানো যাচ্ছে না ফলে ঐ সমস্ত ধান থেকে প্রাপ্ত চাল খাওয়ার উপযোগী থাকবে বলে মনে হয় না।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের কৃষি বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে এই টিম গঠিত হয়েছে। টিমের সদস্যরা ডুবন্ত ধান গাছের পঁচন থেকে পানি দূষণ ঘটছে বলে মতামত প্রদান করেন। দূষিত পানির কারণেই মাছ মরে ভেসে উঠছে বলে তারা ধারনা করছেন। একই কারণে হাঁসও মারা যাচ্ছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তবে এই বিশেষজ্ঞ টিম হাওরের পানির নমুনা, মৃত হাঁস, মৃত মাছ এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছেন। পরবর্তীতে গবেষণাগারে সংগৃহীত পানি, মাটি, মৃত হাঁস এবং মাছের নমুনা বিশ্লেষণপূর্বক মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক কারণ জানানো হবে বলে জানিয়েছে যাবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর ।
তাৎক্ষণিকভাবে টিমের পক্ষ থেকে কৃষকের বাড়িতে অসুস্থ হাঁসের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে। এসময় কৃষকদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তন্মধ্যে আগামী বোরো মৌসুমে কৃষকদেরকে ব্রি ধান২৮ এবং ব্রি ধান৫৮ জাতের ধান চাষের পরামর্শ প্রদান করা হয়। যদিও এ বছর ব্রি ধান২৮ জাতের ধানও আকস্মিক বন্যার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
পানি নেমে যাওয়ার পরে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে আউশ ধান এবং বসত-বাড়ীর আঙিনায় সব্জি চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন সিকৃবির বিশেষজ্ঞ টিম। এসময় হাওর এলাকার জন্য শীতে কম তাপমাত্রায়ও ফুল-ফল উৎপন্ন করতে সক্ষম এমন জাতের ধানের জাত উদ্ভাবন করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। কেননা আবাদকৃত বোরো ধান মার্চ মাসের মধ্যেই সংগ্রহ করা গেলেই, হাওড় এলাকার কৃষিকে এমন বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।
বিশেষজ্ঞ টিমে ছিলেন ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ মোহন মিয়া, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. শাহাব উদ্দিন, ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ, মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কাশেম, কৃষি অর্থসংস্থান ও ব্যাংকিং বিভাগের প্রফেসর ড. জীবন কৃষ্ণ সাহা, কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস, কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোঃ শারফ উদ্দিন, কৃষি অর্থনীতি ও পলিসি বিভাগের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমেদ, মৎস্য জীববিদ্যা ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগের ড. নির্মল চন্দ্র রায়, জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ড. সবুজ কান্তি মজুমদার, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অজয় কুমার সাহা, মৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সৈয়দ মাশেকুল বারী এবং ফার্মাসিউটিক্যাল্স ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগের মাহমুদুল হাসান।
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: