Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শাবিতে সাংবাদিক ও ছাত্রী নির্যাতন : পার্থর পাশে নেই কেউ!

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:২৮

লাইভ প্রতিবেদক : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হতে হয়েছে দুই সাংবাদিক নেতাকে। স্থগিতকৃত কমিটির সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থর নির্দেশে ওই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এনিয়ে শাবিসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সাবেক সাংবাদিকদের সংগঠন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকেও আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। তোপের মুখে শাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এব্যাপারে ৩ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা শাবিতে সরেজমিনে তদন্ত করে গেছেন। তাদের রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করছে জড়িতদের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

উদ্ভুত পরিস্থিতে স্থগিতকৃত কমিটির সভাপতি পার্থর পাশে নেই কেউ। তিনি এখন একাই হাঁটছেন। তার অনুসারীদের অপকর্মের দায়ভার কেউ নিতে চাচ্ছে না। তার জন্য শাবি ছাত্রলীগের কমিটি হুমকির মুখে পড়েছে বলেও মনে করছেন দলের অন্য নেতাকর্মীরা। সাংবাদিকদের পেটানো ও ছাত্রীকে যৌন হয়রানির মত ঘটনাকে ছাত্রলীগের একটি বিরাট অংশের নেতাকর্মীরা ন্যাক্কারজনক বলে মনে করেন। এঘটনায় জড়িতদের কঠিন শাস্তি হোক এ প্রত্যাশা তাদের।

শাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্থর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ তারা। তার কারণেই ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুন্ন হচ্ছে। এতে সরকারের সাফল্যও ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ইমেজ ক্ষুন্নকারীদের ছাত্রলীগের দেখতে চান না তারা। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন তারা। সেইসঙ্গে শাবির অস্থিরতা কাটাতে সহমর্মিতামূলক আচরণের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা।
নারী নির্যাতনের ঘটনায় পার্থসহ ৩ জনের নামে মামলা হওয়ায় এনিয়ে অনেকটা ইমেজ সংকটে রয়েছে শাবি ছাত্রলীগ। তবে বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এনিয়ে কোন মন্তব্য করেননি নেতারা।

স্থগিতকৃত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, শাবিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও যৌন হয়রানির ঘটনায় কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সরাসরি তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি শাবিতে এসেছিল। তাদের আমরা সহযোগিতা করেছি। এঘটনায় যারা জড়িত তাদের শাস্তি হোক তা আমরা চাই। এব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটি যা সিদ্ধান্ত নেবে তা আমরা মেনে নেব।

শাবি ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৩ জনের নামে যৌন হয়রানির মামলা হয়েছে। এব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে তিনি বলেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের সবাই দোষী বলে আমি মনে করি না। তবে বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। যেহেতু বিষয়টি বিচারাধীন তাই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।

ছাত্রলীগের একটি পক্ষ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের চেষ্টা করছে। এবিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কোন পক্ষ আন্দোলনে যাচ্ছে কিনা তা তার জানা নেই। তবে শাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা সচল রাখতে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের যাতে কোন অসুবিধায় পড়তে না হয় সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

ছাত্রলীগের অন্য নেতাদেরও একই মন্তব্য। কোন একটি পক্ষের জন্য পুরো ছাত্রলীগ ইমেজ সংকটে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য তাদের। দোষীদের শাস্তি দিয়ে ছাত্রলীগকে কলঙ্কমুক্ত করতে চান তারা। সব বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, গত শনিবার শাবি ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসে যৌন হয়রানির শিকার হন এক ছাত্রী। এঘটনার প্রতিবাদ করায় মাহমুদুল হাসান রুদ্র নামে এক ছাত্র ওই ছাত্রীর গালে সরাসরি চড় বসিয়ে দেন। এসময় সাজ্জাদ রিয়াদসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ওই ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন। তারা সবাই পার্থ গ্রুপের অনুসারী। এঘটনায় সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের নাজেহাল করা হয় চরমভাবে। একপর্যায়ে শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ ঘটনাস্থলে গিয়ে যৌন নিপীড়কদের পক্ষ নেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছবিও ডিলিট করে দেন।

এঘটনার পর ওই ছাত্রী শাবি প্রশাসনের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে পার্থর নির্দেশে শাবির দুই সাংবাদিক নেতা সরদার আব্বাস ও সৈয়দ নবীউল আলম দিপুকে পিটিয়ে আহত করে। হামলায় সমাজকর্ম বিভাগের মাহমুদুল হাসান রুদ্র, পরিসংখ্যান বিভাগের সাজ্জাদ রিয়াদ, লোক প্রশাসন বিভাগের অনিরুদ্ধ দেব রায় অমিয়, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাহাত সিদ্দীকি, গণিত বিভাগের নজরুল ইসলাম রাকিবসহ আরো বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে কয়েকজন এর আগে যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। নজরুল ইসলাম রাকিব যৌন হয়রানির দায়ে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও রাহাতের বিরুদ্ধে এক সিনিয়র ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন। বিচার না হওয়ায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এর বাইরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার পর বিলুপ্ত শাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৃন্ময় দাশ ঝুটন সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। আন্দোলনরত সাংবাদিকরা তারও বহিষ্কার দাবি করেছেন।

এঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে শাবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।


ঢাকা, ১৫ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ