Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ভাগ্যে কী ঘটছে!

প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০১৭, ২০:৫৫

লাইভ প্রতিবেদক : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ও সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ ক্যাডারের ভাগ্যে কী ঘটছে এনিয়ে এখন ক্যাম্পাসে আলোচনা শুরু হয়েছে। ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনার তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটি দল সরেজমিনে তদন্তের জন্য সিলেটে গিয়েছেন। তারা হলেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দারুস সালাম শাকিল ও প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু। তারা ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে ভিকটিম ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তারা। তাদের রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করছে শাবি ছাত্রলীগ নেতাদের ভাগ্য।

এদিকে সাংবাদিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। শাবি ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল হক বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি শাবি এলে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আপাতত এঘটনার তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় শাবি সাংবাদিকরা সদ্য স্থগিত হওয়া শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থসহ জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। দাবি মানা না পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।


ছবি : বাঁ থেকে সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ, উপরে রুদ্র, নজরুল, সাজ্জাদ, নিচে অমিও, রাহাত এবং ঝুটন

অন্যদিকে শাবি ছাত্রলীগের একটি বড় অংশের নেতাকর্মীরাও পার্থর বহিষ্কার দাবি করেছেন। তারা বলছেন শাবি ছাত্রলীগের অপকর্মের দায় তারা নেবেন না। শুধুমাত্র পার্থর কারণে শাবিতে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত হয়েছে এটা মেনে নেয়া যায় না বলেও নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তবে এ মুহূর্তে শাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এবিষয়ে কোন মুখ খুলতে নারাজ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

এদিকে শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থসহ ৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নামে নারী নির্যাতন মামলায় দায়ের করায় তাদের ভাগ্যে কী পরিণতি অপেক্ষা করছে তাও আলোচনার বিষয়। নারী নির্যাতনের বিষয়ে সরকার জিরো টলারেন্সে থাকায় এবিষয়ে কোন ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ বলে ধারনা করা হচ্ছে।
 
একদিকে যৌন হয়রানি অন্যদিকে সাংবাদিকদের পেটানোর ঘটনায় সদ্য স্থগিত হওয়া শাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ
নেতা পার্থসহ তার অনুসারীরা ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন। তবে এরই মাঝে কয়েকজন নেতাকর্মী নিজেদের ব্যাক্তিগত ফেইসবুকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কি সিদ্ধান্ত নেন তা এখন দেখার বিষয়। যদিও ছাত্রলীগের সভাপিত সাইফুর রহমান সোহাগ জানিয়েছেন যারা ফেইসবুকে উস্কানি ও হুমকি দিচ্ছে তাদের বহিষ্কার করা হবে। যদিও সেটা কথা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। 


এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্ষদ অঙ্গীকার করেছেন, তাদের দ্বারা আর কোনদিন সাংবাদিক নির্যাতন ঘটবে না। ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ক্ষমা চেয়ে ঢাবিতে ছাত্রলীগ নিজেদের দায় এড়ালেও শাবিতে সাংবাদিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানিকারীদের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত কী আসছে তা এখন দেখার বিষয়।

এক্ষেত্রে সাংবাদিক পেটানো ও যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িতদের ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হতে পারে। এমনই নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্র থেকে। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে সবকিছু।
অন্যদিকে নারী নির্যাতন মামলা থাকায় গ্রেফতার হতে পারেন শাবি ছাত্রলীগের সভাপতিসহ মাহমুদুল হাসান রুদ্র ও সাজ্জাদ রিয়াদ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।

এব্যাপারে শাবি সাংবাদিকদের দাবি পার্থসহ জড়িতদের বহিষ্কার করা না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন। ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল বা স্থগিত নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। শীর্ষ নেতার জন্য সবাই শাস্তি ভোগ করুক এটা তাদের কাম্য নয়। তাদির দাবি এক এবং অভিন্ন, দোষীদের শাস্তি হতেই হবে। একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিমধ্যে বিবৃতি জানিয়ে ছাত্রলীগের প্রতি ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে শাবি, রাবি, জাবি, ইবি, বাকৃবি, পবিপ্রবি, কুবিসহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনে রয়েছেন। কালোব্যাজ ধারণসহ মানববন্ধন  বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তারা। জড়িতদের বহিস্কার করা না হলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে সাথে নিয়ে কঠোার আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে শাবির সাবেক সাংবাদিকদের সংগঠন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামও পার্থসহ জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রলীগের সদস্য পদ আজীবন বাতিলের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন। তারাও আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন।

এর বাইরেও যৌন হয়রানি ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ইমেজ সংকটে পড়েছে শাবি। সব মিলিয়ে চাপের মুখে রয়েছে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। দলের অপর একটি বড় অংশও তাদের চাপের মুখে রেখেছেন বলে জানা গেছে। শেষতক সাংবাদিক নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের ভাগ্যে কী ঘটছে তা জানা যাবে শিগগিরই। এমন আভাস পাওয়া গেছে।  

উল্লেখ, গত শনিবার শাবি ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসে যৌন হয়রানির শিকার হন এক ছাত্রী। এঘটনার প্রতিবাদ করায় মাহমুদুল হাসান রুদ্র নামে এক ছাত্র ওই ছাত্রীর গালে সরাসরি চড় বসিয়ে দেন। এসময় সাজ্জাদ রিয়াদসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ওই ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন। তারা সবাই পার্থ গ্রুপের অনুসারী। এঘটনায় সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের নাজেহাল করা হয় চরমভাবে। একপর্যায়ে শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ ঘটনাস্থলে গিয়ে যৌন নিপীড়কদের পক্ষ নেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছবিও ডিলিট করে দেন।

এঘটনার পর ওই ছাত্রী শাবি প্রশাসনের কাছে যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে পার্থর নির্দেশে শাবির দুই সাংবাদিক নেতা সরদার আব্বাস ও সৈয়দ নবীউল আলম দিপুকে পিটিয়ে আহত করে। হামলায় সমাজকর্ম বিভাগের মাহমুদুল হাসান রুদ্র, পরিসংখ্যান বিভাগের সাজ্জাদ রিয়াদ, লোক প্রশাসন বিভাগের অনিরুদ্ধ দেব রায় অমিয়, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাহাত সিদ্দীকি, গণিত বিভাগের নজরুল ইসলাম রাকিবসহ আরো বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে কয়েকজন এর আগে যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। নজরুল ইসলাম রাকিব যৌন হয়রানির দায়ে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও রাহাতের বিরুদ্ধে এক সিনিয়র ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন। বিচার না হওয়ায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এর বাইরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার পর বিলুপ্ত শাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৃন্ময় দাশ ঝুটন সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। আন্দোলনরত সাংবাদিকরা তারও বহিষ্কার দাবি করেছেন।

এঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে শাবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।



ঢাকা, ১৪ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ