Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রহস্যময় পুকুর!

প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০১৭, ০১:৩২

ঢাবি লাইভ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পুকুর। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই পুকুর। বায়ান্নার মহান ভাষা আন্দোলনের সময় এই পুকুরের পাড়ে বসে সিদ্ধান্ত হয় ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে এখন এই পুকুর হয়ে উঠছে অনেকটা আতংকের নাম, মৃত্যুপুরী ও রহস্যময়! যদিও পুকুরের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা আছে এই পুকুরে গোসল নিষেধ। তবুুও কেউ সেই নির্দেশনা মানছেন না। এতে গোসলে নেমে অনেকের প্রাণ গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়মিত বিরতিতে এই পুকুরে গোসল করতে নেমে অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। একারণে ওই পুকুরকে ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ এখানে অলৌকিক কিছুর অস্তিত্ব আছে বলে উল্লেখ করলেও ক্যাম্পাসলাইভের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অজানা তথ্য।

চলুন জেনে নেয়া যাক সেই কারণগুলো। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ওই পুকুরে শিক্ষার্থীর মৃত্যৃর রহস্যে নিয়ে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হল পানির ঘনত্ব নিয়ে।

এর সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা হল। ওই পুকুরে গোসল করতে নেমে অল্প সাঁতারেই ক্লান্তি চলে আসে। এতে মৃত্যু হতে পারে। আবার অনেকেই সাঁতার কেটে পুকুরের মাঝখানে চলে গেলে ভয় পেয়ে যান। এতে তিনি আর পাড়ে আসতে পারেন না। পুুকুরে তলিয়ে যায়।

আরেকটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে ওই পুকুরে বেশিরভাগই বাইরের মানুষ গোসল করতে আসেন। তাই পুকুরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তাদের জানা থাকে না। এতের সাঁতারে নেমে অনেকে বিপদে পড়েন।

আরেকটি কারণ বের করা গেছে। তা হল, অনেক সময় শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা শেষে ক্লান্ত হয়ে ওই পুকুরে গোসল করতে নামেন। এতে সহজেই তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এর বাইরে অলৌকিক কিছু ওই পুকুরে থাকতে পারে বলে ধারনা করা হলেও বাস্তবে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। যদিও এনিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন।

জানা গেছে, সর্বশেষ ৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ বোস্তামি ওই পুকুরে ডুবে মারা যান।

সংশ্লিষ্টদের মতে, শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের মাঝখানে অবস্থিত এই পুকুরে এই পুকুরে এখন পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেছে তার সঠিক হিসেব নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ।

শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাশের পূর্বদিকে অবস্থিত ফজলুল হক মুসলিম হলে দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল খালেক। তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমি নিজে ১৫ হতে ১৬ জনের লাশ দেখেছি। এই পুকুরে জিন/ভূতের আছর আছে বলে শুনেছি। তবে তা কতটুক সত্য জানি না। পুকুরে মারা যাওয়া অধিকাংশই বাইরের ছাত্র। তারা গোসল করতে এসে মারা যায় জানান তিনি।

ফজলুল হক হলের সিনিয়র কর্মকর্তা মোঃ নাছিমুল গণি ভূইয়া বলেন, এই পুকুরে অনেক ছেলে মারা গেছে তবে আমাদের হলের আবাসিক ছাত্র রাহী ছাড়া আর কেউ মারা যায়নি।

পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা ডুবে মারা যায় উল্লেখ করে শহীদুল্লাহ হলের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন , আমার জানা মতে এই পর্যন্ত শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র পুকুরে ডুবে মারা গেছে প্রায় ৫-৬জন। তারা খেলাধূলা করে ক্লান্ত হয়ে পুকুরে গোসল করতে যায়। আর ওই পুকুরের পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে অল্প সাঁতার কেটে দুর্বল হয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করে তারা। আবাসিক ছাত্র ছাড়াও বাহিরের অনেক মানুষের লাশ পুকুরে পাওয়া গেছে। সে সংখ্যাও ২৫ থেকে ৩০ এর কম নয় বলে জানা গেছে।

এক পুকুরে এত মৃত্যু রহস্য কি জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো.খলিলুর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, কেউ যদি সাঁতার না জেনে পুকুরে নামলে তার ফলাফল খারাপ হবে। মূলত পুকুরের মাঝখানে গিয়ে ছেলেরা ভয় পেয়ে যায়। ফলে আর সাহস করে কূলে আসতে পারে না। তখন মৃত্যুটা হয়।

পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণকে এ ধরনের মৃত্যর জন্য দায়ী করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেস ও প্রাক্তন প্রো-ভিসি ড. সহিদ আকতার হোসাইন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পুকুর মাটি দিয়ে ভরাট করে গভীরতা কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।


তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এ ধরনের মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে নোটিশ সাঁটিয়ে দেয় অনেক আগে। যেখানে লেখা এই পুকুরে গোসল ও সাঁতার কাটা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। শিক্ষার্থীরা সচেতন হলে এ ধরনের হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা থেকে মুক্তি পেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

ঢাকা, ১১ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ