রেজওয়ান হোসাইন : জীবনটা যে কত কষ্টের হতে পারে তা মাঝে মাঝেই টের পাই, বিশেষ করে যখন মা-বাবার কাছে টাকা চাই! তবে দোষটা তাদেরকে দেয়া কখনোই ঠিক হবেনা। কারণ, সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও যখন আমাদের চাহিদা মেটাতে পারেনা, তখন আমাদের চেয়ে তারাই বেশি কষ্ট পায়।
তাদের কমন কথা> কিছুদিন আগেইতো টাকা দিলাম, আবার কোথা থেকে দেই?
ফোনের ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজটা হয়তো শোনা যায়না, তবে তাদের ব্যর্থতার বুকফাটা আর্তনাদটা ঠিকই অনুভব করা যায়। একপর্যায়ে অভিমান করে হয়তো না বলেই ফোনটা কেটে দেই। তবে তাদের বুঝতে বাকি থাকেনা যে, ছেলে কেনো এভাবে কলটা কেটে দিলো?
ঘন্টা খানেক পরেই বিকাশ থেকে সেই পরিচিত মেসেজ (Cash In Tk 1,000.00 from 017********successful. Fee Tk 0.00. Balance Tk****. TrxID.......) আসে।
মেসেজ পেয়ে খুশি হলেও ভাবি কোথায় থেকে আর কেমনে দিলো?
যাইহোক, যেভাবে সম্ভব ম্যানেজ করে পাঠায়। কারণ তাদের সান্ত্বনা একটাই, ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাই অনেক কিছু করতে টাকা লাগেই। আর আমরা যারা এই ক্যাটাগরিতে আছি, সবাই মা-বাবার কষ্ট বুঝি। তাই বন্ধুদের সাথে সাহেব বাজার বা নিউ মার্কেট গেলেও নিজেদের কাপড় কেনার জন্য সেই পরিচিত স্টেশন বাজারকেই বেছে নেই। এক্ষেত্রে বন্ধুদের চেয়ে আমাদের সময় একটু বেশিই লাগে। কমদামী পোশাক অথচ সবার সাথে যাতে মেনে চলা যায়, এই ভেবে যাচাই বাছাইয়ে তো একটু সময় লাগেই!
খাবার-দাবারের বেলায় আমাদের ভাগ্যে কখনও চাইনিজ বা ফাস্টফুড জোটেনা। প্রকৃত ব্যাপারটা গোপন রেখে আমরা এগুলোকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মনে করি। রাত ২/৩টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে সকালের খাবারের সময়টা অনেকেই ঘুমের মধ্যই কেটে দেয়। নাস্তা করলেও দুইটা পরাটার বেশি নয়, নামমাত্র খরচেই সকালের নাস্তাটা হয়ে যায়। আর দুপুর ও রাতে হলের ডাইনিংয়ের ২০ ও ১৬ টাকার খাবার দিয়ে অনায়াসেই দিন পার করা যায়। এতে কেউ কিছু বললেও আমরা ধার ধারিনা। কারণ আমরা জানি, আজ যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আছেন, তারাও একসময় এই খাবারগুলোই খেয়ে গেছেন।
আরেকটা চরম সত্য হচ্ছে, মেয়েদের পেছনে টাকা ব্যয় না করার কারণে প্রেমের ক্ষেত্রেও দরিদ্র পরিবারের ছেলেরা অনেক পিছিয়ে! সত্যটা স্বীকার করলেও আমরা বলি, ক্যাম্পাস লাইফে প্রেম করা যাবেনা। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে বেশি বেশি পড়াশোনা করা দরকার।
তাই রাত জেগে ফোনে কথা বলা বা ফেসবুকে চ্যাট করার মত সময় আমাদের নেই।
এখানে কিন্তু ফ্লেক্সিলোডের ব্যাপারটাও গোপন! সত্যি কথা বলতে কী, ১০/২০ টাকার উপর ফ্লেক্সি দেয়ার সাহস সাধারণত আমরা পাইনা। তবে কিভাবে সবার সাথে মেনে চলতে হয়, সেটা আমাদের ভালোভাবেই জানা আছে।
ক্যাম্পাসের ওয়াইফাই সুুবিধা দিয়ে আমরা ইন্টারনেট, ফেসবুক চালাই। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলে জিরো ফেসবুক.....! এ সম্পর্কে কেউ কিছু বললে আমাদের যুক্তি থাকে, মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই চোখের সামনে খারাপ ছবি চলে আসে, সেগুলো থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই আমরা জিরো চালাই। আসলে আমরা অনেক ভালো তো.....!
এভাবেই চলতে থাকে আমাদের মত নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের জীবন। একসাথে বসবাস করা কয়েকজনের সাথে নিজের অবস্থান চিন্তা করলে মাঝরাতে নিজের অজান্তেই চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যায়। এতে অবশ্য খুব একটা সমস্যা হয়না। কারণ, এসময় আমাদের মত সংগ্রামী ছেলেরা ছাড়া কেউ জেগেও থাকেনা।
চোখের পানি মুছে তখনি শপথ নেই, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। মা-বাবার দুঃখ-কষ্ট দূর করতে হবে আর সুন্দর এই দেশটার জন্যকিছু করতে হবে।
পূরণ হোক আমাদের মত নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের মনের এই ছোট ছোট আশাগুলো!
রেজওয়ান হোসাইন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ৩১ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: