লাইভ প্রতিবেদক : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এলাকার কতিপয় বখাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির পর আবার শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে। ভাংচুর করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে। কিন্তু ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেকটাই নিশ্চুপ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি। এমনকি যৌন হয়রানিরও বিচার করা হয়নি। যৌন হয়রানি নিয়েও কোন মামলা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রীকে নাজেহাল ও পরে এর বিচার না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাবির শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেছেন এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার না হলে অনাকাঙ্খিত ঘটনা আরও বাড়বে। একসময় এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন হাতই থাকবে না। বিষটি সুরাহা না করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।
এদিকে যৌন হয়রানির শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বিষয়টি নিয়ে ভয় আর আতংকের মধ্যে আছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে আর সামনের দিকে এগুতে চান না। এমনটাই জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে। এব্যাপারে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরারবর একটি চিঠি দিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, ওই ছাত্রী এঘটনায় কোন মামলা করতে রাজি নন। একারণে কোন মামলা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে যৌন হয়রানির মত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরবতা প্রমাণ করে তারা এর প্রশ্রয় দিচ্ছেন। একই সঙ্গে ভাংচুরের ঘটনায় কোন মামলা না হওয়া মানে বহিরাগতদের ন্যাক্কারজনক কাজকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে এসব ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। নয়তো শাবিতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হবে বলে মন্তব্য তাদের।
শাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মুনসি নাসের ইবনে আফজাল ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ওই ব্যাপারে ভিকটিম ছাত্রী কোন মামলা করতে রাজি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়নি। ওই ছাত্রী এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সেদিন যৌন হয়রানির মত কোন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। যৌন হয়রানির ঘটনাটি স্বীকার করতে চাচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ক্যাম্পাসলাইভ প্রতিবেদককে বলেন, আপনি আসলে কেন ফোন করেছেন। আমি ব্যস্ত আছি পরে কথা হবে। এমন কথা বলে ফোন রেখে দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯ ফেব্রুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় শাবির প্রধান ফটকস্থ 'আড্ডা স্ন্যাকস' নামের দোকানে ফ্লেক্সিলোড করতে গেলে লিমন ও মোস্তাক নামে দুই যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে।
বিষয়টি ও শিক্ষার্থী তার পরিচিত কয়েকজনকে জানালে তারা লিমন ও মোস্তাকের সঙ্গে কথা বলতে যান। এক পর্যায়ে মোস্তাক এক শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও গালিগালাজ করে।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক অবরোধ করে। প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখলে এলাকাবাসী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষ থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন।
পরবর্তীতে এলাকাবাসী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে পুলিশ বেশ কয়েকরাউন্ড রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে পিছু হটে তারা।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আমিনুল হক ভূইয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
তবে শিক্ষার্থীরা 'মোস্তাক ও লিমনের গ্রেফতার এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি' না হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে বলে ভিসিকে জানান। এসময় তিনি 'শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছেন' বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ঢাকা, ১০ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: