Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

নতুন বছরের প্রত্যাশা; শিক্ষক রাজনীতির বলির পাঁঠা না হোক শিক্ষার্থীরা!

প্রকাশিত: ১ জানুয়ারী ২০২১, ১৮:২৮

রাশেদ রাজনঃ মানুষ সামাজিক জীব হওয়ায় কাউকে বাদ রেখে কেউ একা ভাল থাকতে পারে না। করোনা ভাইরাসের আক্রমণের ফলে ২০২০ সালের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল এটিই। একটি পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষ যদি নিজেকে ভাল রাখতে চায় তবে অন্যকে ভাল থাকতে সহযোগীতা করতে হবে এটিই প্রকৃতির নিয়ম। এর ব্যতিক্রম হলে ভোগান্তি পোহাতে হবে সবাইকে।

সর্বস্তরের মানুষের জন্য ২০২০ সাল ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি বছর যেটি ২১ সালে শেষ হবে বলে আশাবাদী সকলেই। এই বছরে অসংখ্য বেকারত্ব বাড়ালেও নতুন নতুন উদ্যোগক্তা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে সময়ের প্রয়োজনে যেটি আলোর পথ দেখাতে পারে তরুণ প্রজন্মকে।

উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় শিক্ষা খাতের অবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে সরকারের পাশাপাশি সবাইকেই এগিয়ে আশা উচিৎ এমনটিই মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা ২০ সালের সকল গ্লানি মুছে ফেলে ২০২১ সালে প্রত্যাশা করছেন, শিক্ষকদের দ্বারা ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মত শিক্ষক রাজনীতির কারণে শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পরিক্ষার ফলাফল বিপর্যয় হওয়ার মত ঘটনা আর যেন মতিহারের সবুজ চত্বরের এই ক্যাম্পাসে আর যেন না হয়।

এরকম কিছু বিশ সালের ব্যর্থতা ও ২১ সালের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন দর্শন বিভাগের ছাত্রী রেহেনা পারভিন রিনা, ২০২০ সাল বিশ্ববাসীর কাছে কোভিট-১৯ এর মত মহামারী রোগের প্রার্দুভাবের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়। এরপর দীর্ঘ নয়মাস ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিক্ষা শেষ না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন অর্নাস ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

ব্যাংক, বিসিএস কিংবা ভাল কর্পোরেট চাকুরীতে আবেদনের সুযোগ হারাতে হয়েছে বিশ্বের এই ক্লান্তিলগ্নে। এর ফলে হতাশার ছাপটাও বেশ বড়। এরকারণে আত্মহত্যায় ঝরে গেছে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ। আর্থিক সংকট, অপর্যাপ্ত ইন্টারনেটের গতি ও সংযোগ থাকায় মহামারীতে অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি বেশিরভাগ ছাত্র্র-ছাত্রী। যার ফলে পিছিয়ে পড়েছেন তারা। নতুন বছরে প্রত্যাশা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ও গবেষণার মান বৃদ্ধিতে আমুল পরিবর্তন নিয়ে কাজ করবে সরকার ও প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ ও নিরাপত্তার স্বার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ আবাসিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রদক্ষেপ নেবে প্রশাসন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আছে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না যাদের মেসের খরচ চালানো সম্ভব নয় তাই প্রশাসনের কাছে আশা থাকবে সকলের জন্য নিরাপদ আবাসিকের ব্যবস্থা করবে। নতুন বছরের প্রত্যাশাই হোক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যেখানে শিক্ষক রাজনীতির বলির পাঁঠা হবে না শিক্ষার্থীরা।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভে দেয়া বক্তব্য বলছিলেন, ২০২০ সাল, প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তির হিসেবে হতাশার গল্প বেশি শোনায় আমার বন্ধুরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিবাদী শিক্ষার্থী হিসেবে আমার বছরটা শুরু হয়েছিল উপাচার্য মহোদয়ের স্বৈরাচারী কার্যক্রমের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে।

২০১৯/২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরিক্ষায় অকৃতকার্য ৪৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল উপাচার্যের স্বজনপ্রীতিতে। বরাবরের মতই প্রতিবাদীদের যেভাবে টুটি চেপে ধরা হয়, আমাদের তাই করা হয়েছে। এরপর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও রেজিষ্টার মহোদয়দের অব্যাহত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্নসাৎ, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগসহ অসংখ্য অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।স্বজনপ্রীতিতে নিয়োগকৃত উপাচার্যের মেয়ে ও জামাতার নিয়োগ বাতিল হয়েছে।

আমরা রাবির শিক্ষার্থী হিসেবে লজ্জা পাই, নৈতিক স্খলন হয়েছে এমন উপাচার্য, উপ- উপাচার্য, রেজিষ্টার মহোদয়গন আমাদের অভিভাবকের আসনে বসে আছেন। ২০২০ সালে দেখেছি অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক ছাত্রদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হতে। রাবির ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না আমার জানা নেই।

২০২০ সালে আমাদের চরম পাওয়া, গবেষনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষস্থান অর্জন করেছে (স্পেনভিত্তিক গবেষনা প্রতিষ্ঠান শিমাগো ল্যাব এর তথ্যমতে)। এ সাফল্য ধরে রাখতে ও গবেষনাকে বিশ্বমানের করতে বাজেটে গবেষনা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল ছাত্র সংগঠনগুলো,আমরা আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু আশার প্রতিফলন হয়নি।

সম্প্রতি আবাসিক হল বন্ধ রেখে, আটকে থাকা স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর চুরান্ত পরিক্ষা নেওয়ার স্বৈরাচারী সিদ্ভান্ত নেওয়া হয়েছে,তাতে প্রশাসনিক স্বৈরাচারীতা ও শিক্ষার্থী বিরোদী মনোভাব স্পষ্ট।

২০২১ সালে আমার চাওয়া-
দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি মুক্ত এবং শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন, ছাত্র রাজনীতির সহাবস্থান, বিশ্বমানের গনেষনা, শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার(চুরি,ছিনতাই, ধর্ষন রোধ),স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন ও সেবার পরিধি বৃদ্ধি।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে ধর্ষণ, লুটপাট, বিচার বহিরভূত হত্যাকান্ড তথা সামগ্রিক ভাবেই জনগণ চরম নিরাপত্তা হীনতার মধ্য দিয়েই পার করলো ২০২০ সাল। পাহাড়ে-সমতলে,বেডরুম থেকে সীমান্তে সর্বত্র জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হয়েছে রাষ্ট্র। এমন কি এই রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণেও চরম অনীহা দিখিয়েছে। উল্টো সরকার স্বৈরাচারি কায়দায় মানুষের উপর চালিয়ে নিপীড়ন। এমন হতাশাকে ছাপিয়ে আমরা অনেক আকঙ্ক্ষা নিয়ে সামনের বছরে জনগনের প্রতিনিধিত্বশীল বাংলাদেশকে দেখতে চাই। যেখানে থাকবে সাম্য, মাননিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার। প্রতিষ্ঠিত হবে জনগনের কথা বলার স্বাধীনতা।


এদিকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বিজয় জানান, অনেক স্বপ্নের মধ্য দিয়ে শুরু ছিল ২০২০, কিন্তু কথায় আছে, ২০ মানে 'বিষ' এই। হয়তো এ কথার যথার্থতা প্রমানের জন্য ২০২০ এর আগমন। বছরের শুরুতে করোনা পরিস্থিতে ১৭ই মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আটকে যেতে থাকে এই পরিস্থিতিতে। বিশেষ করে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থীদের অবস্থা হয় সবচেয়ে শোচনীয়।

তবে আশার আলো এই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্য চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্স এর আটকে থাকা পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। আশা করব, ২০২১ এর নতুন আগমনে অতীতের অচল অবস্থা, করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে, রাবি ফিরে পাবে তার পুরনো যৌবন। আবার আড্ডায় মুখরিত হবে টুকিটাকি চত্বর, বন্ধ থাকা ভুতুড়ে পরিবেশের হলগুলো ফিরে পাবে তার প্রান। সেশনজট কাটিয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা ফিরে পাবে তাদের কাঙ্খিত স্বপ্নের সিড়ি। এই প্রত্যাশায় রইল ২০২১ এর আগমনে।

রাবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, রাবি ৭৪ এর অধ্যাদেশ অনুয়ায়ী স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্বেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারী লেজুড়বৃত্তি আমাদের হতাশ করেছে। তাছাড়া রাবি প্রশাসনের সীমাহীন দুর্নীতি ও আওয়ামী শিক্ষকদের লাগামহীন রাজনীতি আমাদের লজ্জিত করেছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নামে দীর্ঘ কাল ক্ষেপণ ছাত্রদের সাথে প্রহসন বলে আমরা মনে করি।

আগামী বছরে আমরা প্রত্যাশা করি অগণতান্ত্রিক আওয়ামী সরকারের লেজুড়বৃত্তি না করে জোহা স্যারের আদর্শ লালন করে আমাদের ছাত্র-শিক্ষকগণ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবেন।

ঢাকা, ০১ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআইটি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ