লাইভ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় আসামি করা হয়েছে ১৯জনকে। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হত্যার ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর এদের বেশ কয়েকজনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আবরার হত্যায় এপর্যন্ত ২০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজহারের বাইরে নানা তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ৪জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কেউ কেই ডিবি হেফাজতে আবার কেউ কেউ রিমান্ডে রয়েছেন। আবার বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে আবরার হত্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে আসামি করে চার্জশিট প্রস্তুত করা হচ্ছে। আদালতে দেয়া বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত ৬ নেতার জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে তাদের নাম এসেছে। এরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ওই ৬ নেতার জবানিতে আরও অনেকের নাম এসেছে, যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। কৌতূহলবশত ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে এ ঘটনায় পরিকল্পনাকারী এবং নির্দেশদাতাদেরও চার্জশিটের অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপ, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা এবং ১৬১ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মশারি টানানোর রড-স্টাম্প, খুনিদের কল রেকর্ড এবং মেসেঞ্জার গ্রুপের কথোপকথন আলামত হিসেবে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে ফরেনসিক টেস্ট ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।
এদিকে মঙ্গলবার দিনাজপুর থেকে এজাহারভুক্ত আসামি এসএম নাজমুস সাদাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিন মনিরুজ্জামান মনির নামে এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আরেক আসামি আকাশ হোসেনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে শামসুল আরেফিন রাফাতকে আরও ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপ পর্যালোচনা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন আবরারকে নির্যাতনের নির্দেশ দেন ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন। ৫ অক্টোবর শনিবার বেলা পৌনে ১টায় ১৬তম ব্যাচকে ম্যানশন করে রবিন লিখেন, ‘সেভেনটিনের আবরার ফাহাদকে মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। দু’দিন টাইম দিলাম।’ পরদিন রোববার রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে সবাইকে হলের নিচে নামার নির্দেশ দেন মনিরুজ্জামন মনির। রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরারকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান সাদাত, তানিম এবং বিল্লাহসহ কয়েকজন। রাত ১টা ২৬ মিনিটে ইফতি মোশাররফ সকাল মেসেঞ্জারে লেখেন, ‘মরে যাচ্ছে। মাইর বেশি হয়ে গেছে।’
এদিকে যার রুমে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তিনি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এখনও নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেননি। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ২০১১ নম্বর রুমে আমি থাকি, ইফতি মোশাররফ সকাল থাকে, মোস্তফা রাফি থাকে। এ কারণেই আমার নামটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়েছে। তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে অমিত সাহার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই তাকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে।
ডিবি সূত্র জানায়, চার্জশিটে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম ওরফে মোজাহিদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির, ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এএসএম নাজমুস সাদাতসহ আরও অন্তত ১০ জন রয়েছে। ওই সূত্রটি জানায়, রবিন, অনিক এবং সকালকে গ্রেফতার করতে না পারলে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়ে যেত।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম সাংবাদিকদের বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২০ বা ততোধিকের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। সবাইকে ১৬৪ ধারার আওতায় আনা যাচ্ছে না। যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিচ্ছে না তাদের বিষয়টি প্রযুক্তির সহযোগিতায় প্রমাণ করা হবে। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনের নামে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আমরা ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছি। তাছাড়া মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও তদন্তে আসায় আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহারে থাকা ১৯ জন এবং এর বাইরে গ্রেফতার হওয়া ৪ জনসহ মোট ২৩ জনকে নিয়েই বিচার বিশ্লেষণ চলছে। তাদের মধ্য থেকে চার্জশিটে ২-১ জন বাদ যেতে পারে। তবে যারা ১৬৪ ধারা করেছে এবং এজাহারের বাইরে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সবার নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যে দুয়েকজনের নাম বাদ যাবে তাদের নাম এজাহারে থাকলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে বন্দর, গ্যাস ও পানি চুক্তি নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় গত ৬ অক্টোবর বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এনিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে।
ঢাকা, ১৬ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: