Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালোবাসা, বিয়ের পর পরকীয়ায় সর্বনাশ!

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৮, ১৯:৩৮

লাইভ প্রতিবেদক : মৃত্তিকা রহমান পড়াশোনা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন আবদুল্লাহ জুবেরি। একই জেলায় বাড়ি হওয়ায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে বিয়ের পরই বদলে যেতে থাকেন আবদুল্লাহ। কারণে অকারণে অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন মৃত্তিকা। কারণটা অবশ্য পরে জানতে পেরেছিলেন মৃত্তিকা। আবদুল্লাহ পরকীয়ায় মজেছেন, তাই এখন তাকে অবহেলার শিকার হতে হচ্ছে। তবে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাধা দেয়ায় শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। এসব বিষয় মৃত্তিকা তার পরিবারের সদস্যদের জানালেও তারা কর্ণপাত করেননি। তাই বান্ধবীদের কাছে দুঃখ শেয়ার করে কিছুটা হালকা হতেন মৃত্তিকা। দিনে দিনে অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। নিজেকে আর সামলাতে পারেননি মৃত্তিকা। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। নিজ ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলে প্রাণ দিয়েছেন তিনি। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা এনিয়ে রহস্য কাটছে না।

মৃত্তিকার এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুতেও টনক নড়েনি তার পরিবারে। অনেকটা রহস্যজনক আচরণ তার নিজ পরিবারের সদস্যদের। কোন অভিযোগ নেই। ময়নাতদন্ত ছাড়াই মৃত্তিকার লাশ দাফন করে দিয়েছেন তারা। মৃত্তিকার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে যেন তাদের কোন ইচ্ছাই নেই। এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রীর অপমৃত্যুকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।

এদিকে প্রিয় সহপাঠীকে হারিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিবেক নাড়া দিয়েছে। মৃত্তিকার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে ফুঁসে উঠেছেন তারা। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নানা সমালোচনা চলছে। মাঠেও নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে মৃত্তিকার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন তারা। এসময় সহপাঠীরা মৃত্তিকার স্মৃতিচারণ করে তার সংসারে ঘটে যাওয়া নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের বর্ণনাও দিয়েছেন। এতকিছুর পরেও মৃত্তিকার পরিবারের রহস্যজনক নিরবতায় তাদের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

জানা গেছে, পঞ্চগড়ের বোদা থানাপাড়া সংলগ্ন এলাকায় মৃত্তিকা রহমান নামে ওই ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকায় নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। অপমৃত্যুর এ ঘটনা নিয়ে চাপা ক্ষোভ ও স্থানীয়ভাবে বিরুপ প্রতিক্রিয়া থাকলেও মুখ ফোটে কেউ কিছু বলছে না। মৃত্তিকা রহমান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স পাশ করেছেন।

গত ৩ জুলাই শ্বশুরবাড়িতে মৃত্তিকা রহমানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পরিবার বা অন্য কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ না করায় বোদা থানা পুলিশ পোষ্ট মর্টেম ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেয়। এভাবে মৃত্তিকার মৃত্যুরহস্য চাপা পড়ে যায়।

আটোয়ারী উপজেলার সাতখামার এলাকার প্রবীন আইনজীবী এ্যাড. শফিউর রহমানের মেয়ে মৃত্তিকা রহমানের সাথে বোদা উপজেলার তিতোপাড়া গ্রামের এ্যাড.আসাদুল্ল্যাহর ছেলে আব্দুল্লাহ জুবেরির ২ বছর আগে বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ জুবেরি বর্তমানে সোনালী ব্যাংক তেঁতুলিয়া উপজেলা শাখায় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, মৃত্তিকার সংসারে স্বচ্ছলতা থাকলেও বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তেমন বনিবনা ছিল না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি বা মনোমালিন্য লেগেই ছিল। এরই জের ধরে তাকে প্রায়ই শারীরিকভাবে নির্যাতন করা ছাড়াও জুবেরির পরকীয়া প্রেমের কথা মৃত্তিকা রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধবীদের কয়েকবার জানিয়েছিলেন। মৃত্তিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর এখন তার সহপঠীরা এসব অভিযোগ করেছেন।

এদিকে, ঘটনার দিন সকালে আব্দুল্লাহ জুবেরি মৃত্তিকাকে বাসায় রেখে ব্যাংকে তার কর্মস্থলে চলে যান। এরপর তার ফোনও বন্ধ করে রাখেন। পরে মৃত্তিকা ফোনে তার সাথে আর যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পায়নি। বিকেলে মৃত্তিকার লাশ সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু মৃত্তিকার বাবা মা বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে কোন অভিযোগ করা হয়নি।

আশ্চর্য্যরে বিষয় হচ্ছে, হঠাৎ করে একটি মেয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে কেন আত্বহত্যা করলো বা কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নীরবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হলো, এমন প্রশ্ন পরিবার কিংবা অন্য কোনভাবে কেউ তুলেনি।

তবে শাবি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী মৃত্তিকা রহমানের ব্যাক্তিত্বের (সংস্কৃতিকর্মী) সাথে তার আত্মহত্যা কোনভাবেই মেলানো যায় না। তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এ রহস্য উদঘাটন করা দরকার। ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৩-০৪ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ জুবেরির সাথে তারে বিয়ে হয়। সমাবেশে বক্তারা জানান, গত দেড় বছর যাবত জুবেরি মৃত্তিকাকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করতো বলে তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে। শিক্ষার্থী আনিকা তাসনিম বলেন, আব্দুল্লাহ জুবেরির পরকীয়া ছিল বলে মৃত্তিকা আমাদের জানিয়েছিল। শারীরিকভাবে নির্যাতনের কারণে মৃত্তিকা পরিবারের কাছে আসলেও তাকে সহায়তা করা হয়নি। এমনকি মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও স্বামীর নির্যাতনের কারণে নিজ বাড়িতে চলে এসেছিল মৃত্তিকা। পরবর্তীতে পরিবার থেকে সহায়তা না পেয়ে সে আবার স্বামীর বাড়ি ফিরে যায় এবং তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ রহস্যজনক মৃত্যুর পরও উভয় পরিবারের নিরবতা তার উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি উঠে আসে। উক্ত ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও নিজ পরিবার এবং শশুর বাড়ির মানুষেরা পোস্টমর্টেম ছাড়াই মৃতদেহ দাফন করে। মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং মৃত্তিকার আত্মহত্যার প্ররোচণাান ও নির্যাতনকারীর বিচার দাবি করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের দাবি অবিলম্বে মৃত্তিকার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হবে। দোষীদের শাস্তি দেয়া হবে।

ঢাকা, ১৭ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ