Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১২ই মে ২০২৪, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শাবিতে ৩ লাখে ভর্তির সুযোগ, ছাত্রলীগ কর্মীর স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বার ২০১৬, ১৯:০৭

লাইভ প্রতিবেদক : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়ে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। পুলিশের হাতে আটকদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে নানা তথ্য। রিমান্ডে থাকা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী জড়িত এমন তথ্য প্রমাণও মিলেছে। ৩ লাখ টাকায় শাবিতে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হবে এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে চুক্তি হয় জালিয়াতকারীদের।


জানা গেছে, ভর্তিচ্ছুদের নিয়ে বিশেষ বাস পাঠানো হয়েছিল বগুড়ার গুগল ইনফরমেশন সেন্টার অ্যান্ড কোচিং সেন্টার থেকে। গুগোলের ব্যানারে আসা ওই বাসের তত্ত্বাবধানে ছিল তিন জালিয়াত। বাসের মোট যাত্রী ছিলেন ৩২ জন। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ছাড়াও ওই বাসে ছিলেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও। তাদের সঙ্গেই ছিল ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর পাঠানোর জন্য বিশেষ ডিজিটাল যন্ত্র।

জালিয়াত চক্রের অন্যতম সদস্য শাবি ছাত্রলীগ কর্মী আল আমীন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ওই ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সখ্যতা রয়েছে। ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে তারা জড়িত কিনা এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতার কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে নেপথ্যের ক্রীড়নকরা এমন অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রলীগ কর্মী আল আমীন আদালতকে জানান, বগুড়ার আজিজুল হক কলেজেপড়ার সময়েই কলেজের পাশে থাকা গুগোল কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সিলেটে আসার পরও মোবাইলে যোগাযোগ ছিল। শাবির ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবীর ফোন করে বলে, ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী থাকলে সে ব্যবস্থা করতে পারবে। এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গত পরীক্ষায় চান্স না পাওয়া বন্ধু নাজিম আহমেদ দীপ্তর কথা আবিরকে বলে আল আমীন।

তখন আবির বলে, দীপ্তর মূল সনদপত্র জমা দিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেলে দিতে হবে ৩ লাখ টাকা। এমন শর্তে রাজি হলে দীপ্তকে একটি ক্যালকুলেটর দেয়া হবে। ওই ক্যালকুলেটর নিয়ে হলে ঢুকলে তাকে প্রশ্নের উত্তর পাঠিয়ে দেয়া হবে। এতে আল আমীনের বন্ধু দীপ্ত রাজি হয়। এরপর আবির বলে, পরীক্ষার আগেই লোকজন গিয়ে দীপ্তকে ক্যালকুলেটর ব্যবহারের নিয়ম জানিয়ে দেবে। এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধু দীপ্ত পরীক্ষার আগে আল আমীনের হলে যায়।

পরীক্ষার আগের দিন আবির ফোন করে বলে, ২ জন ছোট ভাই আসবে আল আমীন যেন তাদের থাকার ব্যবস্থা করে। এছাড়াও পরীক্ষার আগের রাতে আল আমীনের হলে ১৭-১৮ জন পরীক্ষার্থী ছিল। ভোর সাড়ে ৬টায় আবিরের ২ জন লোক আল আমীনের কাছে যায়। তবে আবির আসেনি। আবিরের বদলে সিলেট আসে ঈশান ইমতিয়াজ হৃদয়। পরে তাকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আরো বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।


উল্লেখ্য, সিলেটের দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধলক্ষাধিক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে নকল সরবরাহের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল বগুড়ার গুগল ইনফরমেশন সেন্টার এন্ড কোচিং সেন্টারের জালিয়াত চক্র। তবে ২৬ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশসহ সিলেটের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে ধরা পরে জালিয়াতকারী চক্র। ১৭টি ডিভাইসসহ জালিয়াত চক্রের ৮ জন গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে বগুড়ার গুগল এডমিশন এন্ড ইনফরমেশনের শিক্ষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঈশান ইমতিয়াজ হৃদয়, শাবির ছাত্রলীগকর্মী আল আমীন, শাবির ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দিন দীপ্ত, মাহির আসেফ, মাসরুর হোসেন বাপ্পী, মোস্তফা গালিব আল ফায়সাল, সেলিম রেজা ও জিয়াউর রহমান। তবে জালিয়াত চক্রের মুল হোতা বগুড়ার গুগল ইনফরমেশন সেন্টার এন্ড কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবির হোসেন জিসান ও সৈকত হাসান এখনও গ্রেফতার হয়নি। তাদের ধরার জন্য চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে ওই জালিয়াত চক্রের সঙ্গে শাবি শাখা ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতাকর্মী জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হলেও রহস্যজনক কারণে তাদের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাদের ধরার ব্যাপারে কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু তাদের বাঁচাতে অনেকটা মরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নেপথ্যের হোতাদের গ্রেফতার করা হলে প্রকৃত রহস্য জানা যেতে পারে বলে সচেতন মহল মনে করছে।  



ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ