Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শাবির ঘটনায় মূল হোতাদের বাঁচাতে মরিয়া প্রশাসন-পুলিশ

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বার ২০১৬, ০১:৪৭



শাবি লাইভ: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বড় রকমের জালিয়াতি চেষ্টায় শাবি ছাত্রলীগের এক কর্মী আটক হওয়ার পর মূল অপরাধীদের বাঁচাতে পুলিশ মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শাবি প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায়ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা এবং ওই চক্রের কয়েকজনকে বাঁচাতে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ। এ ঘটনায় জড়িতদের বাঁচাতে দুর্বল আইনে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের অভিযোগ করেছেন স্বয়ং শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি। এ অবস্থায় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মূল হোতাদের বিচারের দাবিতে এবং প্রশাসনের ও পুলিশের বিতর্কিত ভ’মিকায় মাঠে নামছেন বলে জানা গেছে।

মামলা নিয়ে অসত্য তথ্য:

এদিকে ঘটনার দুদিন পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর রাশেদ তালুকদারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সামনে ছাত্রলীগের কারও জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি। অথচ গ্রেফতার হওয়া আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুলের রাজনীতি করতো।

এদিকে শাবি ছাত্রলীগের সব গ্রæপের নেতারা ঘটনার পর থেকেই গ্রেফতার হওয়া আল আমিন এবং তাকে আশ্রয়দানকারীদের বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন।

মামলার বিষয়ে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূইয়ার সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মামলার বিষয়ে অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার রেজিস্ট্রারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

এদিকে মামলা নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়েছেন শাবি রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। অথচ তিনি মামলার কোন তথ্য সাংবাদিকদের দিতে পারেননি।

পরে যোগাযোগ করা হলে এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি বলে জানান জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) ওমর ফারুক। তিনি বলেন, পুলিশের অনুরোধ সত্বেও শাবি প্রশাসন কোন মামলা করেনি।

দীর্ঘক্ষণ থানায় নজরুলের অবস্থান:

আটকের পর থেকে গত তিনদিন যাবত জালালাবাদ থানায় আসা যাওয়া এবং অবস্থান করছেন ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম। পরীক্ষার আগের রাত (২৫ নভেম্বর) থেকে জালালাবাদ থানায় দৌড়ঝাপ শুরু করেন নজরুল।

শনিবার এবং রোববার সারাদিনও তাকে ওসি আখতার হোসেনের কক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে শুরু থেকেই নজরুলকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন ওসি আখতার হোসেন বলে অভিযোগ ওঠে। জালিয়াতি চক্রের আটক হওয়ার পর থেকেই নজরুল ইসলামের দৌড়ঝাপ লক্ষনীয়।

নজরুলের স্বপক্ষে ওসির সাফাই:

এদিকে নজরুল ইসলামের অনুসারী জালিয়াত চক্র সদস্য আল আমিনকে আটকের পর থেকেই ওসি আখতার হোসেন নজরুলকে রক্ষায় সাফাই গেয়ে চলেছেন। তিনি বলেন, রাতের ঘুম হারাম করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ও আরো কয়েকজনের সহযোগীতায় পরীক্ষা শুরুর আগেই পুরো চক্রকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। অথচ একটি কুচক্রি মহল নজরুলের এমন ভাল একটি কাজের প্রশংসার বদলে তাকে উল্টো জালিয়াত চক্রের সদস্য বানাতে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বাপ্পীকে প্রক্টর অফিস থেকে ছাড়িয়ে নেয়া:

এদিকে ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে (২৫ নভেম্বর) ওমর ফারুক বাপ্পীকে ছাড়িয়ে নেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, শুক্রবার রাতে জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মী এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পিকে আটক করা হয়। পরে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম তার অনুসারী বাপ্পিকে জালালাবাদ থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু নজরুল ইসলাম ওমর ফারুক বাপ্পী নামে কোন শিক্ষার্থী নেই বলে দাবি করেন। অথচ বাপ্পী এবং আল আমিন একই বিভাগের সহপাঠী বলে জানা গেছে।

আসামীর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন:

এদিকে এ ঘটনায় ৮জন গ্রেফতার হলেও মামলা হয়েছে মাত্র ১০ জনের নামে। কোন অজ্ঞাতনামা আসামীও রাখা হয়নি। আড়ালের নায়ক এবং মূল হোতাদের বাঁচাতে এমন মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওমর ফারুক বাপ্পীকে ছাড়িয়ে আনা এবং আটককৃত আল আমিনকে প্রশ্রয়দানকারী নেতা নজরুলকে বাঁচাতে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আগের দিন ৭জনকে আটকের কথা বলা হলেও পরের দিন ৮জনকে পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

এ বিষয়ে জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) ওমর ফারুক বলেন, মামলার প্রধান দুই আসামীর রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরীক্ষার্থীদের আড়াল করার চেষ্টা, ছবি তুলতে বাধাদান:

শনিবার(২৬ নভেম্বর) আটকের পর জালিয়াতিতে জড়িত ভর্তিচ্ছুদের ছবি তুলতে বাধা দেন ওসি আখতার হোসেন ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া ভর্তিচ্ছুরা পরিস্থিতির স্বীকার এবং তাদের কেবল জিজ্ঞাসাবদের জন্যে আটক করা হয়েছে বলে তারা সাংবাদিকদের সাথে দেনদরবার করেন।

প্রথমে জালালাবাদ থানার বারান্দায় ভতিচ্ছুদের আটক রাখা হলেও পরে সাংবাদিকরা ছবি তুলতে কিংবা কথা বলতে চাইলে আটককৃতদের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চক্রের সদস্যদের সাথে কথা বলতে দেয়া হয়নি। শুধু জালিয়াতি চক্রের দু’জন সদস্যের ছবি তুলতে দেয়া হয়।

নজরুল কিভাবে চোর চক্রকে ধরলো? ব্যাখ্যা নেই:

এদিকে জালিয়াতিতে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীকে আশ্রয়দানকারী নেতার পক্ষে পুলিশ এবং শাবি প্রশাসনের সরাসরি পক্ষাবলম্বনে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা, কর্মী, সাংস্কৃতিক সংগঠকসহ সবাই ওই চোর চক্রকে ধরতে দাবি জানলেও প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায় সাধারণ শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। নজরুল পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা প্রশাসনের কেউ না হলেও সে কিভাবে জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িতদের ধরিয়ে দিল তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তার পক্ষে আগে থেকেই ওসির প্রচারণা চালানোয় সন্দেহ দানা বেধে ওঠে।

আটককৃতদের পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য:

এদিকে আটককৃত জাবি শিক্ষার্থী ইশরাত ইমতিয়াজ হৃদয়ের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয় পুলিশ এবং প্রশাসন। শাবি প্রশাসন এবং পুলিশ ইশরাতকে জাবির আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী উল্লেখ করলেও মামলার নথিতে দেখা যায় ইশরাত জাহাঙ্গীরনগরের আইন বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী।

সাংবাদিকদের প্রক্টরের ফোন:

এদিকে নজরুলের জড়িত থাকার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তিনি ফোন করে সাংবাদিকেদের ভর্ৎসনা করেন ড. রাশেদ। এসময় ড. রাশেদ তালুকদার প্রকাশিত সংবাদের সোর্স বলার জন্যে বলেন। এ বিষয়ে অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার নিউজের সোর্স জানতে চাওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেন।

হল থেকে আটকের বিষয়ে অস্বীকার, পরে স্বীকার:

এদিকে ওসি আখতার হল থেকে আটকের বিষয়ে অস্বীকার করলেও ড. রাশেদ তালুকদার হল থেকে জালিয়াতি চক্রকে আটকের বিষয়ে স্বীকার করেন। কিন্তু ওসি আখতার হল থেকে কাউকে আটকের বিষয়টি বারবার অস্বীকার করায় এ ঘটনায় মূল হোতাদের বাচাতে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। অথচ ২১০ নং কক্ষ থেকে আল আমিনকে আটক করা হয় বলে হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাবি করে আসছেন।

আবাসিক হল থেকে কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে(হল থেকে) নিয়ে আসা হয়েছে। অপরদিকে পুলিশ হল থেকে আটকের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে আসছে।

মূল হোতাদের বাঁচানোর চেষ্টায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মী-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ:

ফেসবুকে শাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ লিখেন, শাবির ছাত্র হিসেবে মনের মাঝে অজানা ভয়ের ধাক্কা লাগে, যখন শুনি জালিয়াতির মাধ্যমে একদল প্রতারক চক্র শাবিপ্রবিতে অনৈতিকভাবে ভর্তির চেষ্টা চালাচ্ছে ।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রতারকচক্রের রাঘববোয়ালরা কোথায়? আটককৃত প্রতারকদের বিরুদ্ধে বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা না দিয়ে পুরোনো আইনে মামলা কেন ?
তিনি বলেন, যদি তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা হত, তাহলে শাস্তি বেশি হত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন বাদী হয়ে মামলা করে নাই ? তিনি বলেন, চুনোপুঁটি ধরতে যেয়ে যেন রাঘববোয়ালদের ছাড়তে না হয় ।

সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান বলেন, অপরাধীর কোন দল নেই। যত বড় নেতাই হোক, যত বড় মাথাই ভর্তি জালিয়াতির সাথে জড়িত হোক, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সহ-সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। আশা করি শাবি প্রশাসন সময় থাকতে সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। তিনি ছাত্রলীগের ওই নেতাকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ছাগল চোর, ছিনতাইকারীরা ভর্তি জালিয়াতি করছে।

প্রশাসনের মামলা না করায় নূরা আলম বলেন, চুরি হইলো নিজের ঘরে, মামলা করবে পাশের ঘরের কর্তা। জাহাঙ্গীর নোমান বলেছেন, প্রশাসনের ভিতরের লোকের সহায়তা ছাড়া জালিয়াতি সম্ভব হতোনা।



শাবি, ২৯ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// এআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ