Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেম : পাত্র বিসিএস ক্যাডার তাই ব্রেকআপ!

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০১৮, ১৯:২২

নাফিস ইকবাল : সময়টা ২০১১। চিরচেনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র হিসেবে পা রেখেছি। চিরচেনা বলছি এ কারণে যে ওই ক্যাম্পাসের টিএসসি চত্ত্বরটা অনেক আগে থেকেই আমার পরিচিত ছিল। কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায় প্রায় সময়ই সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া হতো। পরিচিত ক্যাম্পাসে আমার স্বপ্নের পথচলা শুরু হয়েছে।

ক্যাম্পাসটা আগে থেকেই চেনা ছিল বলে বন্ধু-বান্ধবও জুটে গেছে বেশ। হলে থাকার ইচ্ছে ছিল না। তবে মাঝে মাঝে হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতাম। এভাবে চলছিল বেশ। এরই মাঝে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত হয়ে যাই। ক্যাম্পাসে আড্ডা, পড়াশোনা আর রাজনীতি চলছিল বেশ। হঠাৎই একটি ঘটনা সবকিছু যেন ওলট পালট করে দিল।

ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের পর অনেকটা থমথমে অবস্থা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মোড়ে মোড়ে পাহাড়া বসিয়েছে। পুলিশও রয়েছে ক্যাম্পাসে। এমন আতংকিত ক্যাম্পাসেও ক্লাস পরীক্ষা নিয়ে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না। কারণ এটা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। এখানে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার নজির খুব একটা বেশি নেই। যাই হোক ঘটনায় ফিরে আসি।

ক্লাস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে হলে ফিরছিলাম। এরই মাঝে এক ছাত্রীকে বেশ আতংকিতই দেখলাম। মুহসীন হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে আতংকের ছাপ। কোন রিকশা না পাওয়ায় হয়তো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। একপর্যায়ে কোন কারণ ছাড়াই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে সে। বন্ধুরা এটা লক্ষ্য না করলেও আমি তাদের রেখে ওই ছাত্রীর কাছাকাছি গেলাম।

কি হয়েছে আপনার?
প্রশ্নটা শুনেই যেন আঁতকে উঠলো সে।
কিছু হয়নি, ভয় লাগছে।
বলে কি এই মেয়েটা দিন দুপুরে ভয় কিসের?
ভয় পাচ্ছেন কেন?
প্রশ্নটা করতে আমার দিকে তাকালো সে।
চোখ লাল হয়ে আছে। ফুপিয়ে কান্নার স্পষ্ট ছাপ তার চোখে মুখে। তবে এরমাঝেও তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল।
কিছুক্ষণ আগেই নাকি ওই পথে অস্ত্রসহ একদল ছাত্র মহড়া দিয়েছে। এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না সে। কোন দিকে যাবে এই ভেবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আর এখন কোন রিকশাও পাচ্ছে না।
রুমা পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্রী। ঢাবিতে পড়াশোনা করছে চাচার বাসায় থেকে। এই শহরে নতুন। তাই পথঘাটও তার অচেনা। প্রথমবর্ষ তাই বন্ধু-বান্ধব এখনও জুটেনি ভাগ্যে। একা একাই বাসায় ফিরছিল সে। এমন সময় ওই ঘটনাটায় আতংকিত হয়ে পড়ে সে।

ঘটনাটা বুঝতে পেরে বললাম, কোথায় যাবেন?
ভয় নেই, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। চলুন আপনাকে রিকশা করে দেই।
কথাটা শুনে অনেকটাই আস্বস্ত হলো রুমা।
মালিবাগ যাবো, সেখানে সরাসরি রিকশা যায় নাকি?
রিকশায় যাওয়া যায়, তবে চেইঞ্জ করতে হবে।
এখান থেকে বাংলামোটর, সেখান থেকে মালিবাগ। অথবা বাসে গেলেও হয়।
বাসে যাওয়ার ইচ্ছা নেই জানালো রুমা।
আজ চাচা ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি। আমাকে একা একাই যেতে হচ্ছে।
রুমার এমন উত্তরে বুঝতে পারলাম প্রতিদিন কেউ না কেউ তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে। আজ সে একাই এসেছে।
রুমাকে রিকশা ঠিক করে দিলাম। জানালাম বাংলামোটরে গিয়ে ওভারব্রিজ পার হয়ে রিকশায় উঠতে সরাসরি মালিবাগ, চিন্তা নেই।
এরই ফাঁকে মোবাইল নম্বরটাও চেয়ে নিলাম।
বাসায় গিয়ে জানাবেন।
রুমার সরল উক্তি ঠিক আছে।
রুমা চলে যাচ্ছে, আমিও হলের দিকে রওনা দিলাম।
হলে আড্ডা চলছিল। এরই মাঝে রুমার এসএমএস বাসায় আমি। আপনাকে ধন্যবাদ...
সেই থেকে শুরু আমাদের মোবাইলে কথা বলা...

অচেনা ঢাবি ক্যাম্পাস, ঢাকা শহরের অলিগলি আমিই তাকে চিনিয়েছি। পুরান ঢাকার খাওয়া দাওয়ার স্বাদ আমিই তাকে দিয়েছি। ৩ বছরে আমরা নিজেদের উজাড় করে ভালোবেসেছি।

হঠাৎই যেন সবকিছু উলট-পালট হয়ে গেল। রাতের বেলায় কথা হয় না। ক্যাম্পাসে দেখা হলে এটা সেটা বলে এড়িয়ে যাওয়া। ফোন করলে দীর্ঘক্ষণ ওয়েটিংয়ে থাকা। এভাবেই চলছিল। এসবের কোন উত্তর আমি কখনও জানতে চাইনি। শুধু ভালো সময়ের অপেক্ষা করেছি।

হঠাৎ এক বিকেলে আমার এক বান্ধবী জানালো রুমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্র বিসিএস ক্যাডার। সব আয়োজন শেষ খুব শিগগিরই তাদের বিয়ে। খবরটা শুনে মন খারাপ হয়নি তেমন, নিজের দিকে তাকালাম। কি আছে আমার? পড়াশোনা শেষ হবে কবে, চাকরি হবে কবে আর কবেই বিয়ে! এমন অনিশ্চয়তার চেয়ে মেয়েটার ভালো একটা গতি হয়েছে, এটা ভালো নয় কী!

রুমা আমার জীবন থেকে চলে গেছে। যাওয়ার আগে বিদায়টাও নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। আমিও তার সামনে গিয়ে কখনও দাঁড়াইনি। হয়তো আমারই ভালোবাসার কমতি ছিল, তাই তাকে ধরে রাখতে পারিনি।

তবে তুমি জানতে আমি কিন্তু ইচ্ছে করলে পারতাম তোমাকে জোর করে ধরে রাখতে। রাজনীতির সুবাদে সেই ক্ষমতা নিশ্চই আমার ছিল। তবে সে ইচ্ছাটা আমার ছিল না। যে চলে যাওয়ার তাকে জোর করে আটকে রাখা যায় না।

তবে মনে মনে আজও কষ্ট পাই। রুমা, তুমি একবার এসে অামাকে বলতে পারতে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমাদের সম্পর্কটা তুমি আর রাখতে চাও না। এভাবে চোরের মত চুপিচুপি কেন তুমি চলে গেলে। জানি এই প্রশ্নের উত্তর আমি আর কখনও পাব না। ভালো থেকে তুমি...

[ছদ্মনামে লেখা ক্যাম্পাসের ভালোবাসার গল্পটি জীবন থেকে নেয়া]

ঢাকা, ২৬ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ