এনএসইউ লাইভ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)। আলোচনা-সমালোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি)। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বর্ধিত স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি কেনায় অনিয়মের অভিযোগে এই মামলা করা হয়।
এরই জেরে গঠন করা হয় নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। তবে এতেও স্বস্তি মেলেনি। নব গঠিত এই ট্রাস্টিজ নিয়ম মেনে গঠন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে আগের ৪ ট্রাস্টির আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক জানান, প্রথমত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ট্রাস্টি বোর্ড ভাঙার কোনো প্রভিশন নেই। অপরদিকে নতুন যে বিওটি করা হয়েছে তাতে একই পরিবারের চারজন রয়েছেন। তারা হলেন- ড. জুনাইদ কামাল আহমদ, জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজা জামিল ও শীমা আহমেদ। উত্তরাধিকার হিসাবে তাদের রাখা হয়েছে। কিন্তু এটা পুরোপুরি বেআইনি। এটা কিছুতেই মানা যায় না।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ তোয়াক্কা না করে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে গত ১৬ আগস্ট ১২ সদস্যের নতুন বোর্ড গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বাদ পড়েন সাতজন। যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে চারজন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দুদুকের মামলায় কারাগারে আছেন। অভিযোগ উঠেছে, জামিন ও তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত না করে তাড়াহুড়ো করে ট্রাস্টিজ থেকে সাতজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ তদন্তে দেখা গেছে, ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। যার কারণে নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে, কি কারণে কতিপয় সেসব ট্রাস্টির নাম-পরিচয় গোপন করা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট কবে প্রকাশিত হয়েছে? যাদের নামে অভিযোগ এসেছে তাদের কি জানানো হয়েছে? তাদের কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে? এর একটিও করা হয়নি যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির একাধিক সদস্য জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডে কারা থাকবেন, এ বিষয়ে ইউজিসির কোনো পরামর্শই নেওয়া হয়নি। এই বোর্ড নিয়ে ইউজিসিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
এদিকে নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজে মিসেস ফৌজিয়া নাজকে উদ্যোক্তা ট্রাস্টি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনো উদ্যোক্ত ট্রাস্টি কিংবা উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারীও নন। মূলত তিনি মনোনীত ট্রাস্টি সদস্য। এছাড়া নর্থ সাউথের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলামকে শিক্ষাবিদ কোটায় ট্রাস্টি করা হয়েছে। তবে আইন অনুযায়ী ট্রাস্টি সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ধরনের বেতন বা সুবিধা নিতে পারবেন না। কিন্তু উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সুবিধা ও বেতন-ভাতাপ্রাপ্ত। একজন ট্রাস্টি সদস্যের কোনো লাভজনক পদে থাকার ক্ষেত্রে আইনগতও বিধিনিষেধ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। পরে তিনি বলেন, আমাকে বিওটিতে রাখা হয়েছে, তাই আছি। কারও কোনো অভিযোগ থাকলে প্রেসিডেন্টের কাছে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে এনএসইউ-এর সাবেক প্রক্টর এবং শিক্ষক নাজমুল আহসান জানান, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আর বর্তমান সময়ের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এক নয়। যারা এনএসইউ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তারা ছিলেন সত্যিকারের উদ্যোক্তা। বর্তমানে নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠনে অনিয়ম যে হয়নি, তা অস্বীকার করা যাবে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতির কয়েকজন সদস্য জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা আগে প্রকাশ করা হোক। তারপর অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েও যদি কোনো সদুত্তর না আসে, তাহলে ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনের প্রশ্ন আসতে পারে। এখন যা হচ্ছে তা নেহায়েত চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত। এভাবে হলে অন্য প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিবে।
দেশের শিক্ষা খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, যে প্রক্রিয়ায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া বর্তমান ট্রাস্টিদের বাদ দেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হবে। এতে সরকারের ওপর একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদরা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ হারাবেন।
ঢাকা, ১২ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: