Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

''ড. আকবর আলী খান একজন উন্নয়ন যোদ্ধা ছিলেন''

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবার ২০২২, ০৪:১০

"ড. আকবর আলী খান: বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজে তার অবদান" শীর্ষক ওয়েবিনার

এনএসইউ লাইভ: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে "ড. আকবর আলী খান: বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজে তার অবদান" শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সানপা) এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

ড. আকবর আলী খান ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী শিক্ষাবিদ, গবেষক, বুদ্ধিজীবী এবং প্রখ্যাত আমলা- যিনি বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিবও ছিলেন। তিনি তার কর্মজীবনে একাধিক ভূমিকা সফলভাবে পালন করেছেন। তিনি ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজে তার অবদানকে স্মরণ ও আলোচনার জন্য এই ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীরা একমত পোষণ করেন যে তার মৃত্যু দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে একটি উল্লেখযোগ্য শূন্যতা তৈরি করেছে।

ওয়েবিনারের বিশিষ্ট আলোচকবৃন্দ ছিলেন; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, বিআইজিএমের পরিচালক এবং সাবেক অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, সাবেক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ওয়েবিনারে বক্তব্য দেন। সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) উপদেষ্টা অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান। ওয়েবিনারে দেশ-বিদেশ থেকে শিক্ষাবিদ, গবেষক, সরকারি কর্মচারী, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আবদুল মুঈদ চৌধুরী বলেন, ড. খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে তাঁর সহপাঠী ছিলেন এবং ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর জ্ঞানের প্রতি অপার তৃষ্ণা ছিল। ড. খান একজন সুপরিচিত সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন কিন্তু অবসর গ্রহণের পর তার খ্যাতি আরও শীর্ষে উঠেছিল। সরকারী নীতির পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের জন্য তিনি শুধুমাত্র বিদ্বানদের কাছ থেকে নয়, দেশের জনগনের থেকেও সম্মান অর্জন করেছিলেন।

ইআরডি’র সাবেক সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, স্মরণ করিয়ে দেন যে কিভাবে ড. খান তার লেখনী- দ্য ডিসকভারি অফ বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেতনায় অবদান রেখেছিলেন। তার চাকরি জীবনে, তিনি সত্যিকারের যুগান্তকারী গবেষণা কাজের সাথে জড়িত ছিলেন যা পাবলিক সেক্টর ম্যানেজমেন্টের ত্রুটিগুলির উপর আলোকপাত করেছিল। ড. খান তার গবেষণায় দেখিয়েছিলেন যে আমলাতন্ত্রে বিদ্যমান কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন ব্যবস্থা সরকারী কর্মচারীদের সক্ষমতা এবং কর্মক্ষমতা বিচার করার জন্য অপর্যাপ্ত।

এছাড়াও, ড. খান পরবর্তীতে তার বই- ফ্রেন্ডলি ফায়ারস, হাম্পটি ডাম্পটি ডিসঅর্ডারস এবং গ্রেশ্যামস ল সিনড্রোম অ্যান্ড বিয়ন্ড: অ্যান অ্যানালাইসিস অফ দ্য বাংলাদেশ ব্যুরোক্রেসির মাধ্যমে শাসন ও আমলাতন্ত্রের অভাবের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেন। জনাব ভূঁইয়া মন্তব্য করেন যে ড. আকবর আলী খান সত্যই একজন সামাজিক দার্শনিক ছিলেন। জ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ অনেক শাখায় বিস্তৃত ছিল এবং রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে গভর্নেন্স পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখনীর জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

বিআইজিএমের পরিচালক এবং প্রাক্তন অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক মনে রেখেছেন যে কীভাবে তাকে ড. খান একজন জুনিয়র সহকর্মী হিসাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিন্তা করার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ড. খান ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং সর্বদা কেবল সরকারি কর্মচারীদের জন্যই নয়, সত্য কথা বলার জন্য নাগরিকদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

সিপিডি’র বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, একজন মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা, লেখক এবং অর্থনৈতিক চিন্তাবিদ হিসাবে ড. খানের কৃতিত্ব তুলে ধরেন। তিনি মন্তব্য করেন, ড. খান একজন উন্নয়ন যোদ্ধা এবং একজন নীতিনির্ধারক ছিলেন যার অবদান এবং নৈতিক বিষয়ে অবস্থান বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বেসামরিক কর্মচারীদের অনুপ্রাণিত করবে। প্রচলিত অর্থনৈতিক চিন্তাধারার মধ্যে থাকাকালীন তিনি সমালোচনামূলকভাবে গঠনমূলকও ছিলেন। অনেক বিষয়ে তিনি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে পদত্যাগ, যা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনে অবদান অনেক রেখেছিল। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রের উচিত ছিল তার মৃত্যুতে আরও যথাযথ মর্যাদায় তাকে স্মরণ করা।

উন্মুক্ত আলোচনা চলাকালীন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনাব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, উল্লেখ করেন যে আমলাদের পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই এই জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে, ড. আকবর আলী খান প্রমাণ করেছিলেন যে পণ্ডিত-আমলারা অপরিহার্য এবং এভাবে তিনি সরকারী কর্মচারীদের জন্য মডেল হয়ে থাকবেন।

কর্মজীবনের স্মৃতিচারণা করে সাবেক অতিরিক্ত সচিব আফতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে রাগারাগি করতেন। কিন্তু আকবর আলি খান কখনো উচ্চবাচ্য করেননি। কোনো কিছু সংশোধনের প্রয়োজন হলে তিনি নিজেই করে দিতেন। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার প্রতীক।’

সানপা’ র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. হাবিব জাফরুল্লাহ, বলেছেন যে তিনি বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক শাসনের পথপ্রদর্শক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে তার পদত্যাগ ছিল একটি সাহসী পদক্ষেপ। তাঁর অবসর-পরবর্তী বছরগুলি ফলপ্রসূ ছিল কারণ তিনি লিখেছিলেন। ওয়েবিনারটি এসআইপিজি-এর উপর একটি ভিডিও উপস্থাপনার মাধ্যমে শুরু হয় এবং ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মহাসচিব, সানপা এবং উপ-সচিব, পরিকল্পনা কমিশন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-এর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।

ঢাকা, ০৪ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ