লাইভ প্রতিবেদক: বহু জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করেছে সরকার। জানাগেছে বিভিন্ন সংস্থা তাদের দুর্নীতি, স্বেচ্চারিতা, অনিয়মসহ বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। কয়েকজন ট্রাস্টির বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগও প্রমানিত হয়েছে। এমনটি প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের মতো কাজও করেছে একজন ট্রাস্টি। দীর্ঘ তদন্ত পরেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ১২ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড নতুন করে গঠন করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, প্রায় ৬ মাসের অধিক সময় ধরে তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি, কয়জন শিক্ষক ও কর্মকর্তার ব্যাপারেও নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তার নজির মিলেছেন। কেউ কাজ করে আবার কেউ কাজ না করেও মোটা অংকের বেতন তুলে ট্রাস্টিদের সঙ্গে নানান অপকর্মের সহায়তারও প্রমাণ মিলেছে গোয়েন্দাদের কাছে। বিষয়টি ছিলো অনেকটাই স্পর্শ কাতর। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল কারার ফাইল গায়েব করার মতো ঘটনারও প্রমান পেয়ে তদন্তকারী দল। এখনও কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা আছেন নজরদারিতে। পাকা প্রমান পেলেই তাদেরও বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে বলে তথ্য মিলেছে।
ওই আদেশ থেকে জানা গেছে, নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে উদ্যোক্তা ট্রাস্টি হিসেবে আছেন বেক্সিমকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আহমেদ সোহেল ফসিউর রহমান, ইউনাইটেড ফসফরাস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফৌজিয়া নাজ, টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ কালাম, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম কামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল কাশেম ও মিনহাজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইয়াসমিন কামাল।
এছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ হিসেবে আছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। আর উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারী হিসেবে বোর্ডে আছেন ইনকনট্রেড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হারুন, উদ্যোক্তা জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজা জামিল ও শীমা আহমেদ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সিনিয়র ইকোনোমিস্ট ড. জুনাইদ কামাল আহমাদ।
ওই আদেশে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) কিছু সদস্য ও কর্মকর্তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় ও জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা, জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে প্রমাণিত হয়। যা দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘন।
তা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চার সদস্য আর্থিক দুর্নীতির দায়ে দুদকের মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছেন। তাছাড়া ট্রেজারার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি নথিতে জালিয়াতির ঘটনায় একজন ট্রাস্টির বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিতে অন্তর্ভুক্ত থাকা সমীচীন নয় বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বোর্ড অব ট্রাস্টি পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনা করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং সরকারের আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মিলিত সভার সুপারিশ বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর উদ্যোক্তা ট্রাস্টি ও উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারীদের সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি পুনর্গঠন করা হয়েছে বলে সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন। তবে নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলেও ভিন্ন একটি সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা, ১৬ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: