নরসিংদী লাইভ : সন্দেহভাজন দুই নারী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নরসিংদীতে পুলিশের ঘিরে রাখা বাড়িতে তারা অবস্থান করছিল। দুজনই দাবি করেছেন, তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। বুধবার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেছেন। বিকেলে মাধবদী বাজার বড় মসজিদ এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম।
সিটিটিসির প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আত্মসমর্পণ করা দুই নারী জঙ্গির নাম ইশরাত জাহান ওরফে মৌসুমী ওরফে মারিয়া ওরফে মৌ (২৪) ও খাদিজা আক্তার ওরফে মেঘনা (২৫)। তাদের মাধবদী থানায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন বিবাহিত আর অপরজন অবিবাহিত। মঙ্গলবার ভগীরথপুরের অপারেশন গর্ডিয়ান নট অভিযানে নিহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান। তিনি বলেন, দুজন স্বামী-স্ত্রী। সাংগঠনিক নাম আবু আবদুল্লাহ আল বাঙ্গালী ও আকলিমা আক্তার মনি। তবে আসল পরিচয় পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে আবু আবদুল্লাহ বাঙ্গালী জঙ্গিগোষ্ঠীর মিডিয়া সেন্টারের প্রধান।
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, আমাদের ইনটেলিজেন্সের কাছে পাওয়া তথ্যানুযায়ী আমরা ধারণা করছিলাম এই আস্তানায় একাধিক নারী জঙ্গি অবস্থান করছে। তাই আমরা শুরু থেকেই তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। যদিও তারা ব্লাস্ট করার চেষ্টা করেছিল পুলিশকে লক্ষ্য করে। কিন্তু আমাদের টিমের ব্যাপক তৎপরতায় কোনো সমস্যা হয়নি। সব শেষ আমরা তাদের আত্মসমর্পণ করাতে পেরেছি। সারা বিশ্বে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করানো একটি বিরল ঘটনা। জঙ্গিরা সাধারণত আত্মসমর্পণ করে না।
সিটিটিসির প্রধান আরো বলেন, জঙ্গিরা চলতি মাসের শুরুর দিকে এই এলাকার ভগীরথপুর ও গাংপারে বাসা ভাড়া নেয়। তবে তারা কী উদ্দেশ্যে জড়ো হয়ে আস্তানা গেড়েছিল, কী তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল তার সুনির্দিষ্ট তথ্য আমরা পাইনি। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এই এলাকায় তাদের অবস্থান পূজার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তাই এলাকার লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইশরাত জাহান মৌ, খাদিজা আক্তার মেঘনা ও আকলিমা আক্তার মনিসহ চার নারী জঙ্গিকে ২০১৬ সালে গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সাত-আট মাস কারাবাসের পর তারা জামিনে বের হয়ে আসে এবং পরিবারে না ফিরে পুনরায় জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়।
পুলিশ আরো জানায়, মেঘলা ও মৌ একসময় মিরপুরের জনতা হাউজিং এলাকায় থাকতেন। মৌ মিরপুরের ইসলামিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি এবং ২০১২ সালে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের বিসিআইসি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৬০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। মেডিক্যাল ও ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ফার্মগেটের ইউসিসি কোচিং সেন্টারেও ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। কিন্তু নানা কারণে তা আর এগোয়নি। একপর্যায়ে মৌ জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এ ছাড়া মেঘনা জনতা হাউজিংয়েরই একটি বাড়ির পঞ্চম তলায় এক পরিবারের সঙ্গে সাবলেট হিসেবে থাকতেন। মেঘলা ২০১৩ সালে জিপিএ ৪.৭০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই রোকনুজ্জামান নামের এক যুবকের সঙ্গে তার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। রোকন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
ঢাকা, ১৮ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: