Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
দিনাজপুরে সাত লাখ লোকের বৃহত্তর আয়োজন

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ‌ ঈদের জামায়াত

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৫৯

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ‌ ঈদের জামায়াত

লাইভ প্রতিবেদক: আজ সারাদেশে একযুগে পালিত হলো ঈদুল ফিতর। দেশের সবচাইতে বড় জামায়াত হয়েছে দিনাজপুরে। সেখানে সাত লাখ মুসল্লি জামায়াতে নামাজ পড়েন। এই জামায়াত অনুষ্টিত হয় গোর এ শহীদি ময়দানে। তার পর শোলাকিয়ায় হয়েছে সোয়া লাখ লোকের ঈদের দ্বিতীয় জামায়াত। ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেষ ঈদের জামায়াত আদায় করলেন মো. আবদুল হামিদ। শনিবার সকালে জাতীয় ইদগাহ মাঠে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে স্বাগত জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস।

সকাল ৮ টা ৫৫ মিনিটে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঈদের প্রধান জামায়াত। মোনাজাতে গুনাহ থেকে মুক্তি এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নামাজ শেষে বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আর এই শুভেচ্ছা বিনিময় হবে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার শেষ‌ ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়।

এদিকে করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২১ সালে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। কিছু বিধিনিষেধ মেনে ২০২২ সালে ঈদুল ফিতরের নামাজ জাতীয় ইদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হলেও এতে অংশ নেননি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেবার বঙ্গভবনে ঈদের জামাত আদায় করেন তিনি। নামাজের পর ক্রেডেনশিয়াল হলে ঈদ শুভেচ্ছাও বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি। সেবছর ঈদুল আজহার নামাজও বঙ্গভবনে আদায় করেন রাষ্ট্রপতি।

দিনাজপুরে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামায়াত:

আমাদের দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, দেশের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২২ এপ্রিল) সকাল ৯টায় প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের এ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়।

ঐতিহাসিক এ ঈদের জামায়াতে অংশ নিতে সদর উপজেলা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের কয়েকটি জেলার মুসল্লিরা আসেন। জামায়াতে ইমামতি করেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম শামসুল হক কাসেমি।

এ জামায়াতকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ছিল কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি। মাঠের আশপাশে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও তৎপর ছিলেন। হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেত-কর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সর্বস্তরের জনগণ।

পঞ্চগড় জেলা থেকে ঈদের জামাতে আসা রাসেল ইসলাম ঢাকা বলেন, এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় ও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামায়াতে নামাজ আদায় করে খুব ভালো লাগল। জীবনে প্রথম লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে নামাজ পড়তে পেরে ভালো লাগছে।

জেলার চিরিরবন্দর উপজেলা থেকে নামাজ পড়তে আসা শাহরিয়ার সরকার বলেন, আমি এর আগেও ঐতিহ্যবাহী এই ময়দানে নামাজ পড়েছি। এবার এসেছি বন্ধু-বান্ধব বড় ভাইসহ। সবাই মিলে আনন্দ করে একসঙ্গে লাখ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করলাম। এক সঙ্গে সবাই মিলে নামাজ পড়ে বেশ ভালো লাগলো। নামাজ শেষে ঈদগাহ মাঠের সমন্বয়ক, পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, আয়তনের দিক দিয়ে এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ।

এর আয়তন প্রায় ২২ একর। এবার দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ মুসল্লি এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থায়নে এ মাঠের সুন্দর মিনারটি নির্মিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটিকে আরও সুন্দর করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ঈদগাহ মাঠের এ সমন্বয়ক। ঈদের নামাজের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ , জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম।

লাখো মুসল্লির শোলাকিয়ায়

বেশি মানুষ এ ময়দানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। শোলাকিয়ায় নামাজ আদায়ে দুই দিন ধরেই গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোরসহ ৬৪টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিশোরগঞ্জে লোক আসতে শুরু করে।

অনেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাসায়, আবাসিক হোটেল, শহরের মসজিদগুলোতে এবং ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে রাতযাপন করেন। ভোররাতে ট্রেন, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও হেঁটে হাজারো মানুষ কিশোরগঞ্জে আসেন। সবার গন্তব্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া। সকাল সাড়ে ৮টার আগেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সকাল ১০টায় নামাজ শুরু হলে শোলাকিয়া মাঠে উপচেপড়া ভিড়ের কারণে আশপাশের রাস্তা-ঘাট, বাড়ির ছাদ, নরসুন্দা নদীর পাড়ে মুসল্লিরা নামাজের কাতার করে দাঁড়িয়ে যান।

ঈদগাহ ময়দানের রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগে পরপর তিনবার শটগানের গুলি ছুঁড়ে মুসল্লিদের নামাজে দাঁড়ানোর সংকেত দেওয়া হয়। নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট. মো. জিল্লুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিশিষ্টজনেরা এ মাঠে নামাজ আদায় করেন।

 

এদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ‘শোলাকিয়া স্পেশাল এক্সপ্রেস ট্রেন’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে ভোর ছয়টায় ছেড়ে সকাল আটটায় কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ স্টেশনে আসে।

অন্যটি ভোর পৌনে ছয়টায় ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে সকাল সাড়ে আটটায় কিশোরগঞ্জে পৌঁছে। ট্রেন দুটি দুপুর ১২টায় আগত মুসল্লিদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সংশ্লিস্টরা জানান, ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়া ময়দানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ঈদ জামাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় এ বছর চার স্তরে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মাঠ ও আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ৬টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়।

এবারের ঈদের জামায়াতে টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারেনি মুসল্লিরা। ফায়ার সার্ভিসসহ ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে প্রস্তুত ছিল মেডিকেল টিম। ছিল পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম। ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তায় বোমা শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়করণের একটি দল ঢাকা আসে শোলাকিয়া মাঠে। এছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি সদস্যের উপস্থিতি ছিল পুরো এলাকায়।

এদিকে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত এই জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমীন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আইন প্রণেতা, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জাতীয় ঈদগাহে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বাংলাদেশের শান্তি ও অগ্রগতি এবং জনগণ তথা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এছাড়া, দেশ ও এর স্বার্থে, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেও দোয়া করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঈদগাহে নারীদের ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।

ঢাকা, ২২ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএমসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ