Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

কোথা সে মুসলমান?

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৩, ০১:৫৪

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল

ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল: যে দেশটায় আড়াই লাখের বেশি মসজিদ রয়েছে। যেখানটায় সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ মুসলমান। সেখানে কি করে এতসব মানব সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা? মুসলমানের গুণাবলী এবং পৃথিবীতে প্রভুর প্রতিনিধি প্রেরণের হেতু আশরাফুল মাখলুকাতের শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদাররা কি করে অনিয়ম অন্যায় অনৈতিকতা পাপাচারে আবিষ্ট থেকে দিনাতিপাত করতে পারে? এমন কি হওয়ার কথা ছিল? রমজান সমাগত। একে ঘিরে ঘরে ঘরে নানা পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সারা বিশ্ব এ মাসে ভালো কাজের সাথে সম্পৃক্ত থেকে শারীরিক মানসিক সামাজিক এবং মানবিকভাবে নিজেকে শাণিত করে পরবর্তী মাস গুলো চলার ছবক নেয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অন্য ধর্মের অনুসারীরাও এ মাসের মর্যাদা ও সম্মানের পানে চেয়ে আলগা নজরে দেখে যা মানবতা কে অভিভূত করে। অথচ খোদ মুসলমানের আচরণে দেখা দেয় নানা অসঙ্গতি যা স্মরণ করিয়ে দেয় এসবের শানে নুযুল কি? কেন এমন আচরণ?

ফি বছর রমজানে বাজারে আগুন লাগবে এ যেন নিয়তি। এমন অতীত খুঁজে বের করা দুষ্কর যেখানটায় তাপের উত্তাপ অনুভূত হয়নি। এবং যা ঘটা করে এ জনপদেই বেশি দৃশ্যমান হয়। অথচ রমজানকে ঘিরে সারা পৃথিবীতে মুনাফার লাগাম টানা মূল্যছাড় প্রতিদানের নেশায় বুদ হয়ে থাকার নজীর দেখা যায়। পশ্চিমা দুনিয়া জার্মানি ফ্রান্স দক্ষিণ কোরিয়া চায়নাতে এ মাসে কার্ড এবং হালাল খাবারের রয়েছে নানা ছাড়। আরব বিশ্বে নামীদামী কোম্পানিগুলো ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্যদ্রব্যে ছাড় দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে। চলতি বছর আটশোর বেশি পণ্যে দাম কমিয়েছে কাতার। ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে মেলার আয়োজন করেছে মিশর। সৌদিআরব ওমান মালয়েশিয়া এবং মালদ্বীপের পণ্যে ও ছাড়ের হিড়িক দেখা যায়। এ সময়ে এসব অঞ্চলের মুসলমানেরা ভালো কাজের নেশায় এবং আশায় লালায়িত থাকে।এমন অবয়ব বনি আদমের মাঝে আনন্দ এবং স্বস্তির আবহ তৈরি করে। অথচ আমাদের দেশে এ মাসকে ঘিরে দেখা দেয় উল্টো পথে যাত্রার হীন প্রবণতা।

যেখানটায় ক্রেতাদের জিম্মি করে পণ্যে ভেজালের বেসাতি মজুত করে কৃত্রিম সংকট বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের ভোগান্তি এবং অনিশ্চিত গন্তব্যের ইঙ্গিত বহন করে। এমন কেন হয়? মুসলমানেরা পরস্পর ভাই। যার হাতে অপর ভাই নিরাপদ নয় সে মুসলমান নয়। এমনক্ষণেও পৈশাচিক মনোবৃত্তি। স্বয়ং রাসূল (সা:) এসবের ভয়াবহতায় বিহবল হয়ে বলেন কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা উপস্থিত হবে পাপাচারী হিসেবে, সেই সব ব্যবসায়ী ব্যতীত যারা খোদাভীরু সৎকর্মশীল এবং সত্যবাদী। অথচ এমন কর্মে আমরা অনেক পিছিয়ে।পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা মানব সমাজের কোথাও ইতিবাচকভাবে গ্রহণীয় নয়। এতে নানা পদের অস্থিতিশীলতা এবং ভোগান্তি দেখা দেয়। ইসলাম এসবে কখনোই উৎসাহ দেয় না বরং রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা।হাদীসে বলা আছে যে ব্যক্তি চড়া দামের আশায় খাদ্যদ্রব্য চল্লিশ দিন পর্যন্ত বিক্রয় না করে মজুত করে -ঐ ব্যক্তির উপর থেকে আল্লাহ তার জিম্মাদারী উঠিয়ে নেন। মহানবী(সা:) এ বিষয়ে আরও বলেন ন্যায্য মূল্যের জিনিস সরবরাহকারী রিযিক প্রাপ্ত এবং মজুদ করে সংকট সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত। একবার ভাবুন এদেশে এসব কোন সম্প্রদায়ের লোকজন বেশি করছে। আফসোস!

তাকওয়া অর্জনের এ মাসে ওজনে কারসাজি ভেজাল পণ্যের সয়লাব মিথ্যার বেসাতি এসবের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা কি ইঙ্গিত বহন করে? খোদ রোজা রেখে ইফতার ইতেকাফ তারাবি দান খয়রাতে নিমজ্জিত ব্যক্তির দ্বারা ও এ কান্ডের উপস্থিতি দেখা যায়। এসব কি মুসলমানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? এহেন কর্ম করে কল্যাণ প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা কতটুকু যৌক্তিক? অথচ কোরআনে এ বিষয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা আছে যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় তখন পূর্ণমাত্রায় নেয়। এবং যখন মানুষকে মেপে দেয় তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, পুনরায় জীবিত হতে হবে, সেই মহা দিবসে যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে। এ ব্যাপারে হাদিসে ও বলা হয়েছে যে ব্যক্তি বিক্রয় যোগ্য দ্রব্যের দোষ থাকা সত্ত্বেও তা গোপন রেখে বিক্রয় করে সে সর্বদা আল্লাহর গজবে নিপতিত হবে। এসব ত আমরা নিয়ত অবলোকন করছি।

একজন মুসলমানের নানা গুনাবলী থাকার কথা।প্রতিবেশীর অধিকার নিশ্চিত করা তাদের সাথে সদ্ভাব স্বজন সম্পর্কে সম্মান ভালো কাজের আদেশ মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা অসামাজিক কার্যকলাপ পাপাচার জবরদখল রাহাজানি জালিয়াতি এসবে আমলে না নেয়াই মুমিনের পরিচয়। অথচ বাস্তবে আমরা কি দেখি? সময়ের বাস্তবতায় ব্যক্তি স্বাতন্ত্রীকরণ লোভ-লালসা এবং স্বার্থের বশবর্তী হয়ে প্রায়শই দেখা যায় প্রতিবেশী আত্নীয়ের সাথে সদ্ভাবের ঘাটতি এবং ভালো আচরণের অভাব। অথচ হাদিসে বলা আছে ঐ ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয় যে পেট ভরে খায় আর পাশেই প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে। এসব অসঙ্গতি এদেশের মানুষের আচরণ মননে প্রতিফলিত যা কি চাইলেই অস্বীকার করা যাবে? হাল-আমলে ধর্মীয় চালচলনের অভ্যেস বাড়ছে যা খানিকটা আশা জাগায়। এহেন পরিবেশ পরিস্থিতিতে ও যখন প্রতিবেশী এবং আত্মীয়তাকে অবজ্ঞা এবং তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হয় তখন কিভাবে স্বস্তির ঢেকুর আসবে? এসবে আর যাই হোক মুসলমানের পরিচয় প্রকাশিত হয় না। প্রভু বলেই দিয়েছেন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমল কবুল হয় না।

তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার আধুনিকায়নের নানা প্রপঞ্চের সরব উপস্থিতির সুবাদে জীবনযাপনের জাগতিক আধ্যাত্মিক সামাজিক মানবিক ধর্মীয় আয়োজন নাগালে চলে এসেছে। পলকের ইশারায় সবকিছুই সহজেই দৃশ্যমান হয়। এমন দিনেও হেলিকপ্টার খ্যাত মাওলানারা বায়ুমন্ডল ভেদ করে শান শওকত সহযোগে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আবেগ অনুভূতিকে পুঁজি করে গ্রাম থেকে শহরে চষে বেড়ায়। তখনই বা কি বলার আছে? কাদা লেপন ছোট বিষয়কে বড় করে জিইয়ে রেখে সমাজে বিতর্কের অবতারণা ঘটানো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে না যেয়ে মনগড়া যুক্তি উপস্থাপন নানা দল উপদলে আমজনতাকে বিভক্তি করে আখেরে ফায়দা হাসিলের নেশায় মত্ত থাকে। সত্যিই সেলুকাস! হাল আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারেরাও প্রচলিত নিয়মে কোষাগারে অর্থ জমা না দিয়ে এমনকি নিয়ম নীতির পাত্তা না দিয়ে ছুটি ছাটা বিহীন ভরা শীত মৌসুমে মাঠে-ঘাটে বয়ান করে চষে বেড়ায় কিভাবে? ইসলাম কি এসব সমর্থন করে? কথিত ধর্মীয় নেতারা রোজ এসব কিভাবে করে যাচ্ছে? মুসলমান এবং ইসলাম নিয়ে যদি কেউ প্রায়োগিক গবেষণা করতে চায় জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ হচ্ছে উর্বর ক্ষেত্র।বাস্তবে কি এদেশের মুসলমানেরা ইসলামিক কানুন নীতিমালা আদর্শ চর্চা করে? এদেশে প্রায় বাড়িতে গিলাফবদ্ধ কোরআন আছে ঢিলাকুলুপের মাসয়ালা মেসওয়াকের উপকারিতা খুৎবার উপজীব্য উপাদেয়। এখানটায় ঘুষ দূর্ণীতি হক বাতিল ভালো-মন্দ বিনয় আন্তরিকতা এসবের বেশ ঘাটতি। যা কি কাম্য?

বিশ্ব এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার এবং কল্যাণকামিতা ইসলামের রোশনাই কে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সমর্থন জানাচ্ছে। ইসলামের আভায় কোরআন হাদিসের মমার্থ উদ্ঘাটনের মাধ্যমে ইদানিং অনেকে ই শান্তির পথে আসছে। অথচ এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মননে এসবে বড়ই বিচ্যুতি।মুনাফেকি এবং কাপুরুষোচিত মনোভাব যেন এখানকার মানুষের নিত্য স্বভাব। নজরুলের জবানীতেই আমাদের জাতীয় চরিত্র সুন্দর ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছি আমরা তখনও বসে, বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি কোরাআন হাদিস চষে। যা নির্মম বাস্তবতা! ইসলাম এবং মুসলমান সমার্থক হলেও তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুসরণের বিস্তর ফারাকের বদৌলতে নানা কৌতহলের তৈরি করছে। প্রকৃত অর্থেই যা ভালো নয়।কোরআনের অমীয় বানী হাদিসের কথামালা নবী-রাসূল এবং সাহাবাদের জীবনচরিত গোটা মানবকূলকে বিমোহিত এবং অভিভূত করেছে।এ ধর্মের অনুসারীদের ভাবখানা দেখে মনে হয়, তারা যেন উল্টো রথের যাত্রী। সর্বসাধারণে আন্তরিকতা ই দ্বীনদারী মহানবীর কথামালা থেকে যেন আমরা যোজন যোজন দুরে। ফলতঃ আফসোসের স্বরেই বলতে হয় আজো সেই কোরআন আছে হাদিস আছে সেই মান আর মানুষ নেই। ইতিহাসের এসব স্বর্ণালী অতীত আজ হ্যাজাক বাতি দিয়ে খোঁজতে হয়। যা হতাশা এবং চাপের জন্ম দেয়। আল্লাহ তে যার পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান যা নজরুলের জবানীতে আক্ষেপের স্বরেই উচ্চারিত হয়েছে। রমজান আমাদের দোরগুরায়। এ মাসে শপথ নেয়ার উপযুক্ত সময়। আত্মসমালোচনা এবং যথাযথ জ্ঞান অনুশীলন ও আমলের মাঝেই হারানো অতীত ফিরে পাওয়া যাবে। জাগাতে হবে প্রত্যাশা। দুনিয়ার শান্তি এবং আখেরাতের মুক্তির রসদ সংগ্রহে এখনই মনোযোগী হওয়া দরকার। এদেশ সবার, একে কাঙ্ক্ষিত মানে নিয়ে যাওয়ার প্রেষনা এবং প্রেরণা আমাদেরকেই দেখাতে হবে। কেননা জাতির কল্যাণে ই মুক্তির হাতছানি মিলবে।

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল
অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল: alioakkas@gmail.com

ঢাকা, ১৯ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ