যশোর লাইভ: অছাত্র ও হত্যা মামলার আসামীরা এখন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এমন অভিযোগ করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলেছেন, এসব নেতারা এলাকার নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে একাধিক হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ও আছেন। এ নিয়ে গোটা এলাকায় নানান প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ভাল ভাবে নিচ্ছেন না ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
এলাকাবাসী জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় যশোর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ব্যালটের মাধ্যমে যশোর জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষনা করেন। এই কমিটির সভাপতি হিসেবে রওশন ইকবাল শাহী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছালছাবিল আহমেদ জিসানকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনে ৫৪০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র ১২০ জন ভোট দেন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করে মোট ৪০ জন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে সভাপতি পদে ২ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জনকে প্রার্থী করে সম্মেলনে আগত নেতৃবৃন্দ সমঝোতা করার চেষ্টা করেন। এরা হলেন- সভাপতি পদের জন্য রওশন ইকবাল শাহী ও সাব্বির রহমান লিমন আর সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ছালছাবিল আহমেদ জিসান ও সালাউদ্দিন কবির পিয়াস।
ফলে এই নির্বাচনে তাদের পক্ষীয় প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। এদিকে নির্বাচনে যে দুজন সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সম্পর্কে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগের পাহাড় জমতে শুরু করেছে।
এলাকার নেতা-কর্মীরা জানায়, সভাপতি ও সম্পাদক পদের জন্য যেসব নেতা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই। অনেকের বয়স বেশি। অনেকেই বিবাহিত। যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা একে অপরের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠান বলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা নিশ্চিত করেছেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠানো তথ্যমতে, জেলা ছাত্রলীগের নব নির্বাচিত সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।
এ ছাড়া তিনি বিবাহিত। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ছালছাবিল আহম্মেদ জিসানও একই হত্যা মামলার আসামি। নির্ভরশীল একাধিক সূত্র বলছে নির্বাচিত এই দুই নেতা নামেমাত্র ছাত্র। আসলে তাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে বহু আগেই। কিন্তু রাজনীতি করার কারণে তারা নামে মাত্র ছাত্র হিসেবে খাতায় নাম রেখেছেন।
অপর একটি সূত্র বলছে, নব নির্বাচিত সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী যশোর ল কলেজের এবং জিসান যশোর সরকারি এমএম কলেজের বিএ পাস কোর্সের নিয়মিত ছাত্র।
কিন্তু রওশন ইকবাল শাহী ও ছালছাবিল পক্ষীয়রা কোনো প্রকার সমঝোতার মধ্যে না গিয়ে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেন। কারণ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীরা বলছেন, এই সম্মেলনে যাদের কাউন্সিলর হিসেবে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছিল তাদের অধিকাংশ জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আরিফুর ইসলাম রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হেসেন বিপুল কর্তৃক মনোনীত। যারা এই কাউন্সিলে শাহী ও ছালছাবিল জিসানকে সমর্থন দেন। ফলে বিপক্ষ প্যানেলের সমর্থনে কাউন্সিলরদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা।
অপরদিকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট পদ্ধতি এড়িয়ে সমঝোতার উদ্যোগের পক্ষে ছিলেন যশোরের অধিকাংশ এমপি। আর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন অটল। বিষয়টি টের পেয়ে বর্তমান কমিটি নির্বাচনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
ঢাকা, ১২ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: