লালমনিরহাট লাইভ: একি ঘটালেন ছাত্রনেতা। প্রতিবন্ধী না হয়েও ভাতা তুলে ফুরফুরা মেজাজে দিব্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। অবশেষে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। বেকায়দায় পড়েন সেই নেতা। শারীরিক কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। অসচ্ছলও নন। তবুও প্রতিবন্ধী ভাতা তোলেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম সরকার বাবু (৩০)। সম্প্রতি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া চালু করলে সবার সামনে আসে বিষয়টি।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম দিব্যি দামি মোটরবাইক নিয়ে চলাফেরা করছেন। সব সময় পড়ছেন দামি পোশাক। এমন সুস্থ মানুষ কিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে ভাতা তোলেন সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। সব খানে চলছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে জেলা কমিটির নেতারাও বিব্রত।
জানাগেছে মাইদুল ইসলাম সরকার বাবু আদিতমারীর উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের বসিনটারী গ্রামের নজরুল ইসলাম সরকারের ছেলে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মাইদুল ইসলাম বাবু মেঝো। মাইদুল ২০১৬ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেন।
২০১৯ সালে তিনি বিয়ে করেন এবং বর্তমানে তিনি এক কন্যা সন্তানের বাবা। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসাও করেন মাইদুল। সবশেষ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি। ২০১৮ সালে আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওই কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন। এখনও আছে বহাল তবিয়তে।
তারা ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবন্ধী না হয়েও সমাজসেবা কার্যালয় এই ছাত্রলীগ নেতাকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেন। শুধু তাই নয়, এরপর মাইদুল ইসলাম প্রতিবন্ধী কোটায় সরকারি চাকরির চেষ্টাও করেন। সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মাইদুল ইসলামের নামে ইস্যু করা বইয়ের নম্বর ৭৯৬। ওই বইয়ের বিপরীতে দুই দফায় মোট ১১২৫০ টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। বিষয় নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
এদিকে এ ব্যাপারে আদিতমারী সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয় ও সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর মাইদুলের অ্যাকাউন্টে ৯ হাজার টাকা অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে জমা হয়। এই টাকা তিনি ওই বছরের ২০ অক্টোবর উত্তোলন করেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ১৫ মার্চ একই খাত থেকে ভাতা হিসেবে আরও ২২৫০ টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসেবে জমা হয়।
এই টাকা তিনি উত্তোলন করেন গত ২৩ মার্চ। এ ব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে আদিতমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইদুল ইসলাম সরকার বাবু মোবাইল ফোনে জানান, ‘২০১৮ সালে আদিতমারীতে আমার ওপরে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করে। এতে আমি গুরুতর আহত হই।
তিনি আরো জানান, আমার ডান হাতের একটা আঙুলে বিকলঙ্গতা দেখা দেয়। চিকিৎসকের প্রত্যয়নও আছে। তারপর থেকে আমি প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ ফরম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিই। পরে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা উত্তোলন করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা গ্রহণের সমুদয় টাকা ফেরত দিতে চাই।
এ বিষয়টি আমি আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশন আলী মন্ডলকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।’ প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ সূত্রে জানা যায়, মাইদুল ইসলাম দুর্ঘটনাজনিত শারীরিক মৃদু টাইপের প্রতিবন্ধী বলে ফরমে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত চিকিৎসকের প্রত্যয়নে তিনি মাঝারি মাত্রার শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক।
তার প্রত্যয়নটি দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নূর আরেফিন প্রধান। ২০২০ সালের ২৩ জুন তারিখে প্রতিবন্ধিতা সংক্রান্ত সরকারি ফরমে স্বাক্ষর করেন সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশন আলী মন্ডল। ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রোকুনুজ্জামান এ ব্যাপারে জানান, ছাত্রলীগ সম্পাদক মাইদুল ইসলামের প্রতিবন্ধী ভাতা তোলার বিষয়টি তার জানা নেই। প্রতিবন্ধী ভাতা উপজেলার কমিটি থেকে পাশ হয় বলেও জানান তিনি।
এদিকে সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশন আলী মন্ডল বলেন, ‘সেসময় মাত্র ১৯ দিন আগে আমি এই উপজেলায় যোগদান করি। প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্তদের সবকাজ শেষ করে আমার সামনে ফাইল আসে তাতে স্বাক্ষর করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতার টাকা উত্তোলনের জন্য মাইদুল ইসলাম অনলাইনে নিবন্ধন করেননি।’ এ ব্যাপারে এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এলাকাবাসী জানান এধরনের জালজালিয়াতি আমরা এর আগে কখনও শুনিনি। আমরা এসব শুনে হতভম্ভ হয়েছি।
ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: