লাইভ প্রতিবেদক: সংলাপ নিয়ে যত কথা। এটা সত্যিকার অর্থে আসলেই কোন আজে আসবে কি না এনিয়ে রয়েছে নানান কল্পকথা। কেউ বলছেন এটি কেবলই আলোচনা। এর অগ্রগতি নিয়ে রয়েছে সন্দেহ আর সংশয়। শেষতক আলোচনা কেবল টেবিলেই থাকবে যা হওয়ার তাই হবে। এদিকে নির্দলীয় উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব মেনে নেয়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এটা হয়না। সংবিধান ঠিক রেখেই সংলাপ চলবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবিত নির্দলীয় উপদেষ্টা পরিষদ, সংসদ ভেঙে দেয়া ও সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েনের দাবি নাকচ করে দিয়েছে সরকার।
গণভবনে আজ দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে, ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আমাদের চারটি প্রধান দাবির একটিও মানা হয়নি।
সকাল ১১টায় শুরু হওয়া সংলাপ চলে প্রায় তিন ঘন্টা। ওবায়দুল কাদের সংলাপের ফলাফল নিয়ে বলেন, তাদের কয়েকটি প্রস্তাব সংবিধান সম্মত না হওয়ায় সেগুলো মেনে নেয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, বিদেশি পর্যবেক্ষক, রাজবন্দিদের মুক্তি এসব বিষয়ে কথা হয়েছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি মেনে নিতে কোন আপত্তি নেই।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজবন্দিদের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, তারা আরও দাবি উপস্থাপন করেছেন। আমরা বলেছি, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোনো ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। তারা আরও সংলাপের দাবি জানিয়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সংবিধান পরিপন্থী ও সাংঘর্ষিক কিছু বক্তব্য তারা নিয়ে এসেছেন, যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। সংলাপ এখানে শেষ। শিডিউল ঘোষণার পর তারা যদি কোনো ব্যাপারে আবার বসতে চান, আপত্তি নেই।
এদিকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আজ বেলা ১১টায় গণভবনে এই সংলাপ শুরু হয়। এতে অংশ নেন ঐক্যফ্রন্টের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আলোচনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে নিয়ে কামাল হোসেন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণভবনে পৌঁছান।
অন্যদিকে ৭ই নভেম্বর উপলক্ষে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদ গণভবনে পৌঁছান কামালের পরপরই।
সংলাপে জাতীয় ঐক্যের পক্ষে জেএসডির আসম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরামও অংশ নিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গণভবনে ঢুকে লবি হয়ে ব্যাংকোয়েট হলে নির্ধারিত আসনে বসেন।
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আনিসুল হক, দীপু মনি, শ ম রেজাউল করিম ও আবদুস সোবহান গোলাপ।
এছাড়া শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবারের সংলাপেও থাকছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
প্রসঙ্গত কামাল হোসেন জোটের সাত দফা দাবি তুলে ধরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘সংবিধানসম্মত বিষয়ে’ আলোচনার জন্য গত ১লা নভেম্বর ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানান।
ওই সংলাপ শেষে ড. কামাল হোসেন বলেন, এ আলোচনায় বিশেষ কোনো সমাধান তারা পাননি। জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির ফখরুল বলেন, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট নন। গত ৪ঠা নভেম্বর আবার সংলাপ চেয়ে কামালের পক্ষ থেকে আরো একটি চিঠি দেয়া হয়। এই চিঠির প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফা আজ সংলাপে বসছে উভয় জোট।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল বলছেন সংলাপ নিয়ে নানান গুঞ্জন আছে। অনেকেই মনে করেন এই সংলাপ আলোরমুখ দেখবে কি না এনিয়ে রয়েছে অনেক কথা। কোন জোট কতটুকু ছাড় দেয় এনিয়েই গুঞ্জন। তবে খুব বেশী ছাড় দেয়া হবে কি না এবিষয়টি এখনও ষ্পষ্ট নয়। শেষতক সংলাপের ভাগ্যে কি আছে কেউ কিছু বলতে পারে না।
ঢাকা, ০৭ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: