Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

অনেকদূর হেঁটে ৫০০ টাকার টিউশনিও করেছেন এই এমপি!

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০১৮, ১০:২৮

লাইভ প্রতিবেদক : অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা চলাকালে বাবাকে হারিয়েছেন তিনি। টানাটানির সংসারে পড়ালেখাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় তার। কোনমতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে সাহস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। হলে সিট না পেয়ে বহু কস্টে কেটেছে তার। আর্থিক কষ্টের কারণে এক পর্যায়ে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হন তিনি। নতুন উদ্যোমে আবার ঢাকায় আসেন। টিউশনি করিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছেন। মাত্র ৫০০টাকার টিউশনির জন্য বহুদূর হেঁটে গিয়েছেন। এভাবেই জীবনের গল্পে ধীরে ধীরে সফলতার মুখ দেখেছেন আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। হয়েছেন সংসদ সদস্য। হবিগঞ্জের এই সংসদ সদস্যের সফলতার গল্পটা এমনই।

জানালেন, স্কুল জীবনে বাবা মানিক চৌধুরীকে হারিয়ে টানাটানির সংসারে পড়ালেখাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল তার। সেখান থেকে এ পর্যন্ত আসার পর টেনে তুলে সংরক্ষিত আসনে বানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য আওয়ামী লীগ তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঋণ স্বীকার করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার বাবা আমাদের জন্য পয়সা কড়ি কিছু রেখে যেতে পারেননি। আমি যখন মেট্রিক পাস করলাম তখন আর্থিক অবস্থাটা এমন পর্যায়ে ছিল আমাদের চলা কঠিন ছিল। বৈশাখ মাসে আমাদের যে ধান বিক্রি হতো সেই টাকা দিয়ে ৬ থেকে ৭ মাস চলার পর আবার টানাটানি শুরু হয়ে যেত। আব্বা মারা যাওয়ার পর অভাব আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

কেয়া চৌধুরী বলেন, দৈন্যতার মধ্যেই আমি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিই এবং পাস করি। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম আমি অনার্স পড়বো। অনার্সের জন্য ইডেন কলেজে চান্স পাই দর্শনে। চান্স পাওয়ার পর থাকার জায়গা ছিল না। এ নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ি, হলেও সিট পাইনি। সেসময় ইডেনের বিএনপি নেত্রীরা আমাকে খুব অসহযোগিতা করে, তাদের কথায় চলতে হতো, যা কখনও করিনি।

এরপর আর পেরে উঠছিলাম না। কিন্তু আম্মা কোনোভাবেই পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে চলে গেলাম বাড়িতে। কিছুদিন পর আবার ঢাকায় আসি লালমাটিয়া কলেজে ভর্তি হলাম। ওখানেও একই সমস্যা, থাকার জায়গা নেই। প্রথম দিকে মিরপুর এক ভাইয়ের বাসায় থাকতাম। অনেক পথ হেঁটে ৫০০ টাকার একটি টিউশনি করতে যেতেন, একটা ছোট্ট বাচ্চাকে পড়াতে। হেঁটে যেতেন টাকা বাঁচানোর জন্য।

জানালেন, আমি কলেজ থেকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে দিয়ে প্রায়ই যেতাম এবং ওখানে সময় কাটাতাম। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে কার্জন চাচা নামে একজন থাকতেন। উনি নেত্রীর খুব কাছের মানুষ। আমি যখন যেতাম তখন হয়তো উনি নামাজ পড়ে ঢুকতেন, আমিও ঢুকতাম। প্রায়ই যেতাম তো- একদিন কী কারণে যেন তিনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন-তুমি প্রায়ই আস কই থাক?

আমি বললাম, চাচা আমি হোস্টেলে থাকি। বললেন-বাড়ি কই, আমি বললাম হবিগঞ্জ। তখন উনি বললেন, হবিগঞ্জের মানিক চৌধুরীকে চেনো? তার কথা শোনে আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। আমি বললাম, আমি তো উনারই মেয়ে,’ বলেন কেয়া চৌধুরী।

কার্জন চাচার আব্বার কথা মনে আছে কারণ খন্দকার মোস্তাক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আব্বাকে সাড়ে ৪ বছর ডিটেনশনে রাখা হয়েছিল।

সেই কথাগুলো কার্জন চাচার মনে আছে। আব্বার কথা জানতে পেরে চাচা বলেন, বেটি তুমি আগে কইবা না! দ্রুত নেত্রীর সঙ্গে দেখা করো। আমি তখন মাত্র ঢাকায় আসছি রাস্তা-ঘাটও ভালো করে চিনি না।

তখন উনি একটা ফরম দিয়ে বললেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা পূরণ করে দাও। আমার মনে পড়ে সেদিন বৃহস্পতিবার ছিল, আমি ফরম পূরণ করে দিয়ে আসি। যেহেতু আমাদের ঢাকায় কোনো ঠিকানা নেই তাই আমার ছোট মামা ইস্কাটনে থাকেন সেই ঠিকানা দিলাম আর লালমাটিয়ার অস্থায়ী ঠিকানা দিলাম। সপ্তাহখানেক পর মামার বাসা থেকে ফোন এলো- তোমার একটা চিঠি এসেছে। এখান থেকে প্রতিমাসে তুমি একহাজার করে টাকা পাবা।

টাকা পাওয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। যেখানে আমি ৫০০ টাকার জন্য কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে টিউশনি করছি সেখানে কিছু না করেই ১ হাজার টাকা পাবো-এটা ছিল কল্পনার বাইরে। এর ৪-৫ মাস পরে ২ হাজার করে দেওয়া হয়। তখন আমার কঠিন সময় ছিল। জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তখন সার্পোট দিয়েছেন সেই সাপোর্টের জন্য আজ আমি এই জায়গায় এসেছি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর হবিগঞ্জ-সিলেট জেলার সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন কেয়া চৌধুরী। তার বাবা মানিক চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মানিক চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে প্রথম কৃষি পদক নিয়েছিলেন।

[কার্টেসি : বাংলানিউজ]

ঢাকা, ১৯ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ