লাইভ প্রতিবেদক: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৬টি শর্ত দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় খালেদা জিয়া একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়।
এই পরিবর্তন হতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে।
ভোট হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোবাইল ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
ভোটের জন্য ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না।
এসব শর্তের বিষয়ে খালেদা জিয়া নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামত জানতে চাইলে সবাই উচ্চস্বরে হাত উচিয়ে এই শর্তের প্রতি সমর্থন জানান।
নেতাদের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ নেই।
দলের নেতা ও এ দেশের মানুষের সঙ্গে আছি। তিনি দলের নেতাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ-প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান:
এদিকে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আমার জীবন থাকা পর্যন্ত আমি আপনাদের পাশে আছি।
জনগণ আপনাদের পাশে আছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দেশ রক্ষা, সরকারের অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্য গঠনের ডাক দেন।
তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জনগণের জান-মাল রক্ষায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি।
দেশের প্রেক্ষাপটে যাই ঘটুক না কেন, প্রতিবাদ করলে নেতাকর্মীদের তা শান্তিপূর্ণভাবে করার নির্দেশ দেন।
সভায় যা বললেন:
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমার বেশি হলে জেল হবে। এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী, ভক্ত আছেন, তাদেরও জেলে যেতে হয়েছে।’ তবে সরকার বিএনপি ও দলটির নেতাকর্মীদের কিছুই করতে পারবে না। এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই।’
আজ শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভার দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
এ সময় খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্যধারণের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমি এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে আমার মা-বাবা, ভাই-বোন ও সন্তানকেও হারিয়েছি। কিন্তু রাজনীতি ছাড়িনি। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে রক্ষা করা। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা যাই কিছু দেখাক না কেন, আপস করা চলবে না। আমি সকালেও বলেছি, এখনও আবার বলছি, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি এবং থাকবো।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (প্রশাসনের কর্মকর্তারা) দেশের সেবক। তাদের বিরুদ্ধে না গিয়ে কাজ করতে হবে। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। বিপদের সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলের মধ্যে কেউ হঠকারিতা তৈরি করবেন না। হঠকারী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খালেদা জিয়ার বক্তব্যের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাহী কমিটির সভার রাজনৈতিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে :
যেকোনো মূল্যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখা; খালেদা জিয়া-তারেক রহমান ও বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র যেকোনো মূল্যে শান্তিপূর্ণভাবে রুখে দেওয়া। সভায় গুম-খুন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শেয়ার মার্কেটের লুটপাট ও ব্যাংক ডাকাতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়।
মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক প্রস্তাবে উল্লেখ করেন, 'বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। তবে সেই নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হতে হবে এবং নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ থাকতে হবে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় প্রস্তাবে। পাশাপাশি জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্ত রুখে দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে বলে রাজনৈতিক প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
ফখরুল বলেন, নির্বাহী কমিটির সভায় ৪২ জন সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। তাদের বক্তব্যে এই প্রস্তাবগুলোই আলোচনায় উঠে এসেছে। আগামীকাল রোববার এসব প্রস্তাব গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
ঢাকা, ০৩ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: