
গাজিপুর লাইভ: বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, বহুমাত্রিক কারণে একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় সোনালি অধ্যায়। এই অধ্যায়ে মানুষ তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় পার করে। এসব স্মৃতি কি চাইলেই ভোলা যায়! সেই ক্যাম্পাসের চিরপরিচিত আঙিনায় মানুষ পায় বন্ধু, সহপাঠী কিংবা প্রিয়জন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পর চাইলেই কি দেখা হয় সবার সঙ্গে? কদাচিৎ এসব প্রিয় মানুষের দেখা মেলে। কাজের ফাঁকে ক্যাম্পাসে কাটানো স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলে যেন মনের অজান্তেই মুখের কোণে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসির রেখা।
জীবনের চলার পথে এসব প্রিয় মানুষের সঙ্গ অতি কাঙ্ক্ষিত। বহুকাল পরে দেখা হলে তো আর কথাই নেই, স্মৃতিচারণে, আড্ডায় যেন কথার ফুলঝুরি ফোটে। জুমাবার সারাদিন এমনই দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে টঙ্গীর পূবালী সোসিও কালচারাল সেন্টার (পিএসসিসি) এর রিজোর্টে। দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের পেয়ে শিশুদের মতোই খুনসুটিতে মেতেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পলিটিকেল সাইন্স এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন মাস্টার্স-৯৩ (ডুপসা) ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। আড্ডার আসরে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তারা ফিরে গিয়েছিলেন সেই তরুণ কাঁচা বয়সে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবুজ ক্যাম্পাসে স্মৃতি কথায়।
আড্ডার সঙ্গে সঙ্গে চলছিল বিভিন্ন স্টাইলে তোলা সেলফির ঘনঘটা। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মুখর প্রাণের স্পন্দন জেগেছিল পুরো রিজোর্ট জুড়ে। ডুপসার ৪র্থ ফেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি ডে-২০২৩ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পলিটিকেল সাইন্স এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন মাস্টার্স-৯৩ (ডুপসা) এর উদ্যোগে আয়োজিত এ মিলনমেলা শুরু হয় ২৭ জানুয়ারী জুমাবার-'২৩ সকাল সাড়ে ৮টায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রাক্তনদের ভিড়। সকালের নাস্তা চলে হরেক রকম ফল ও খাশির নেহারী ও রুটিতে। সঙ্গে চা-কফি তো রয়েছেই।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় মিলনমেলার আনুষ্ঠানিকতা। প্রথমে নারীদের বিভিন্ন খেলাধুলা। শিক্ষার্থীরা আড্ডা দেওয়া শুরু করলেও সেই আড্ডা ভেঙে যায় জনসমুদ্রের মুখে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায় স্বামী-স্ত্রী- ছেলে-মেয়ে বা সন্তানদের ব্যবধান। সকাল ১১টায় বাচ্চাদের বিভিন্ন আয়োজন, এলামনাইদের ফুটবল খেলাসহ আরো কত কি। দুপুর সাড়ে ১২টায় 'অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। তার পর নামাজের বিরতি চলে। বিরতির শুরু হয় ভোজনের পালা। শাহী কাচ্ছি, রুস্ট, কালিয়া , ছিংড়ি, বোরহানি ও পায়েস। সেকি জম্পোস খাওয়া। উপদেষ্টা পুলিশের এসপি দেলোয়ার হোসেন জানালেন আমরা এই আয়োজনে এসে খুবই আনন্দিত। এ ধরনের আয়োজন আমাদের বন্ধুদের সম্পর্ককে আরো শানিত করবে।
উপদেষ্টা ড. আলগীর হোসেন জানান, আমি আলমগীর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবার ক্রেষ্ট দিয়েছি। আগমীতে আরো ভাল কিছু করবো ইনশাআল্লাহ। উপদেষ্টা প্রফেসর গোবিন্দ জানালেন আমরা এ ধরনের উদ্যোগরেক বার বারই স্মানের চোখে দেখি। আগামীতেও এধরনের আয়োজন দেখতে চাই। এর পর শুরু হয় সেই কাঙ্খিত হাউজিং খেলা। প্রায় এক ঘন্টা ব্যাপি চলে এই আলোচিত খেলাটি। পরিচালনা করেন বিশিষ্ট ধারা ভাষ্যকার জয় ও জাহিদ।
এলামনাইদের সন্তানরা যারা বিভিন্ন পরীক্ষায় ভাল করেছে তাদরে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এসময় আলমগীর ফাউন্ডেশনের কর্নধার ড. আলমগীর হোসেন ও তার স্ত্রী ডা. তাসলিমা আক্তার নিজেই উপস্থিত থেকে ক্রেস্ট বিতরণে অংশ নেন। এর মাঝে মাঝে চলতে থাকে গান। তার বিশেষ আকর্ষণ শুরু হয়। লটারী। এই লটারীতে ছিল ৩০টি আইটেম। প্রখম পুরস্কার পেয়েছেন টিপু ও দ্বিতীয় পুরস্কার পান ফরহাদ।
মিলনমেলা ঘুরে দেখা যায়, অ্যালামনাইদের বসার জন্য বিভিন্ন চাইনিতে গোল হয়ে বসে সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। নানান কথায়, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মজার ঘটনায় হেসেই কুটিকুটি হয়ে একে অপরের ওপর ঢলে পড়ছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একেকজনকে দেওয়া মজার নামগুলোও পরিস্কার মনে আছে তাদের। এসব নিয়েই চলছিল নানান খুনসুটি। চলছিল শিক্ষকদের স্মৃতিচারণ। এর মাঝে চলছিল সেলফির বাহার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনে চলছিল বেশিরভাগ সেলফির বন্যা।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানগুলোর ফাঁকে ফাঁকে চলেছে গ্রুপ করে করে বন্ধুদের জমজমাট আড্ডা, গল্প আর গান। বিদেশে থাকা বন্ধুরাও ভিডিও কলে যুক্ত হন বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে।
ডুপসার সভাপতি মহসিন ক্যাম্পাসলাইভকে জানান আমাদের এই আয়োজন করতে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা ও কস্ট থাকলেও বন্ধুত্বের কাছে সবই যেন নস্যি। আমরা আন্তরিকতা দিয়ে চেষ্টা করেছি আয়োজনকে সফল করতে। সকলের সহায়তায় ও বিশেষ কয়েকজনের সার্বিক তৎপরতায় এটা সম্ভব হয়েছে। সকলের মঙ্গল ও সর্বাঙ্গিন কল্যাণ কামনা করছি।
সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ ক্যাম্পাসলাইভকে জানালেন, সব কৃতিত্ব বন্ধুদের। তাদের সহায়তা পেয়েছি। ভালবাসা পেয়েছি বলেই এই আয়োজন সফল ও স্বার্থক বলে দাবী করতে পারি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে অনুষ্ঠানকে সফলতার মাত্রায় পৌছাঁতে সার্বিক চেষ্টা ছিল। আর এই ধরনের আয়োজনে ভুলক্রটি হতেই পারে। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দু:খিত।
ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম //এমএফ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: