Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের শাস্তি দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

''দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে''

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২২, ০৪:৩৪

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

লাইভ প্রতিবেদক: নড়াইলের লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িত ধর্মান্ধ মৌলবাদী সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ৬ দফা দাবিতে কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। রবিবার (১৭ জুলাই) রবিবার বিকাল ৪ টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য অশোক সাহা, সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন মজুমদার, ভাস্কর্য শিল্পী রাশা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন মজুমদার বলেন, "নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে প্রশাসনের সামনে জুতার মালা পড়িয়ে লাঞ্ছিত করার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার লোহাগড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করা হয়েছে। হামলাকারীদেরকে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। নড়াইলের প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মৌলবাদী অপশক্তির আস্ফালন দেখার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করিনি। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেয়নি। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তির দোসর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদেরকে প্রয়োজনে আবার বীর মুক্তিযোদ্ধারা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে। এর আগে কুমিল্লায় মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল বিএনপি-জামায়াত। ধর্মকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই এদের মূল উদ্দেশ্যে। লোহাগড়ায় ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রত্যেকটা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।"

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, "দেশে আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে। নড়াইলে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বারবার হামলাই প্রমাণ করে জামাত-বিএনপি-হেফাজত আবার সক্রিয় হয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। প্রত্যেকটা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। নড়াইলের প্রশাসনের দায়িত্ব কি? তারা কেন এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে পারছে না? একটি বিচার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে জড়িত প্রত্যেককে শাস্তি দিতে হবে। প্রতি শুক্রবারকে টার্গেট করে বিএনপি-জামাত নাশকতার পরিকল্পনা শুরু করেছে। নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে বিএনপি-জামাত-হেফাজতের সন্ত্রাসীরা সরাসরি জড়িত ছিল। নড়াইলের প্রশাসনের সামনে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পড়ানো হয়েছিল। লোহাগড়ায় ঘটনায় প্রশাসন এখনো কেন নীরব ভূমিকা পালন করছেন? অবিলম্বে নড়াইলের ডিসি ও এসপিকে অপসারণ করতে হবে। কারণ তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। অতীতের হামলাগুলোর কঠোর বিচার হলে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না।"

আল মামুন আরোও বলেন, "বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতেও বিএনপি-জামাত-হেফাজত ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছিল। দেশের জনগণ তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, অতীতের ন্যায় আবারও জনগণ বিএনপি-জামাত-হেফাজতকে রাজপথে সমুচিত জবাব দিবে। বিগত ২০০১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ছয় শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল, আহত হয়েছিল ৩০ হাজারেরও বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, ১২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছিল। সংঘবদ্ধভাবে হামলা, নির্যাতন, লুটতরাজে নিঃস্ব হয়েছিল লক্ষাধিক হিন্দু পরিবার। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এবং জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৫১২৩।দেশবাসীর বিবেকের নিকট প্রশ্ন- বিএনপি-জামাত-হেফাজত কি সত্যিই ইসলামের চর্চা করে? এরা প্রকৃতপক্ষে আবু জেহেলের অনুসারী অভিশপ্ত গোষ্ঠী। কারণ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিএনপি-জামাত-হেফাজত ইসলাম ধর্মের লেবাশ লাগিয়ে প্রতিনিয়ত ইসলাম পরিপন্থী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে যাচ্ছে। এদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেছিলেন। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি অপশক্তি স্বাধীনতা বিরোধীরা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাহাত্তরের সংবিধানকে কেটে ছিঁড়ে ধ্বংস করে আবার বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলো। সমগ্র দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে মৌলবাদী অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।"

নড়াইলের ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য অশোক সাহা বলেন, "অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের বাড়ি ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়েছে। মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দিয়ে আমাদেরকে এখনো হত্যার হুমকি দিচ্ছে কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পুরো গ্রাম নারী শূন্য হয়ে গেছে। বাড়ি লুটপাট করা হয়েছে। ভয়ে আমরা বাড়িতে অবস্থান করতে পারছি না। নিজের দেশে আমরা এখন অসহায়। সরকারের নিকট দাবি, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি না হলে এদেশ ছেড়ে আমাদেরকে চলে যেতে হবে।"

ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, "কোন নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেনি। একাত্তরে সকল ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। সকল ধর্মের মানুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়, সকল ধর্মের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র ও ধর্ম দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ধর্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসলে সেই ধর্ম কলুষিত হয়। ধর্মকে পুঁজি করে ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইসলাম ধর্মকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলোর সংবিধানে কোথাও রাষ্ট্র ধর্ম উল্লেখ নেই। এমনকি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়াতেও রাষ্ট্র ধর্মের কথা উল্লেখ নেই। তাদের সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি রয়েছে। রাষ্ট্র সকলকে সমান চোখে দেখবে। এটাই ইসলাম শিক্ষা দেয়। রাষ্ট্র কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে অন্য ধর্মের মানুষদের খাটো করার অধিকার রাখে না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এরশাদ ও জিয়া অত্যন্ত সুকৌশলে সংবিধানে সাম্প্রদায়িক বিষ ঢুকিয়ে মানুষের মগজ ধোলাই করে দিয়েছিল। যার ফলাফল এখনো বাংলাদেশকে ভুগতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হলে বাংলাদেশ অনেক আগেই সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের বিরোধিতা কারীরা দেশ ও জাতির শত্রু। জিয়া ও এরশাদ কর্তৃক অবৈধভাবে সংশোধিত সংবিধানের পক্ষে যারা কথা বলে তারা প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের দোসর। এদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। শুধু নড়াইল নয়, দেশের প্রত্যেকটি সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার করতে হবে।"

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন

সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা-এই চার মূলনীতির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। বাহাত্তরের সংবিধানের ১ম অনুচ্ছেদে এই রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া ও এরশাদ অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত সংবিধান কেটে ছিঁড়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। জিয়া ও এরশাদের অবৈধ শাসনামলে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক সদস্যদের বিনা বিচারে ফাঁসি দিয়ে লাশ গুম করা হয়েছিল। জিয়া ও এরশাদের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে জাতির সামনে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র আবার শুরু হয়েছে। এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। কারণ সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রকৃত শত্রু। এরা বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এখন দেশের মানুষ অনেক সচেতন। ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রকৃত চরিত্র ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। সামনে আরোও হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। সেই ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য প্রতিনিয়ত বিএনপি-জামাতের ধর্ম ব্যবসায়ীরা ষড়যন্ত্র করছে। এরা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু। ধর্মীয় সভাগুলোতে জামাত-শিবিরের কিছু নামধারী আলেম অন্যধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। পবিত্র মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে এরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। এহেন ইসলাম ধর্ম বিরোধী কর্মকাণ্ড কখনোই বরদাশত করবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ধর্মীয় লেবাশধারী উগ্রবাদীদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দণ্ডপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে যারা নাশকতা করে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিলো, সেই মৌলবাদী অপশক্তিরাই সম্প্রতি ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এরা শান্তির ধর্ম ইসলামের শত্রু। এরা কখনোই ইসলাম ধর্মের আদর্শ ধারণ করে না। ধর্মীয় লেবাশে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে এরা জঙ্গিবাদ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এরা ইসলাম, দেশ ও জাতির শত্রু। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের দোসররা এহেন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড দ্বারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মের নামে এরা অপরাজনীতি শুরু করেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আবেগকে পুঁজি করে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্যে হাসিলের চেষ্টা করছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, করোনা সংকটেও কিছু ধর্মীয় লেবাশধারী ওয়াজ বক্তা দেশে করোনা নেই বলে প্রতিনিয়ত গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষদের জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, "দেশের মাদ্রাসাগুলোতে যৌন নিপীড়ন বন্ধে নজরদারী বাড়ানোর পাশাপাশি ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় সভায় ওয়াজের নামে গুজব ছড়ানো ও উস্কানিমূলক অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশের অনেক মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় না, জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় না, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয়না যা দেশের সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংবিধান বিরোধী এসব কর্মকাণ্ডই ধর্মীয় উগ্রবাদকে আরোও উসকে দিচ্ছে। মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্যথায় দেশপ্রেম ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চাইলে সকল রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই বঙ্গবন্ধু কে জাতির পিতা হিসেবে মেনে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে হবে। অন্যথায় এদেশে তাদের রাজনীতি করার কোন নৈতিক অধিকার নেই।''

তিনি আরও বলেন, ''পবিত্র মসজিদ হচ্ছে মুসলিমদের জন্য ইবাদতের স্থান। কিন্তু সেই মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। অবিলম্বে ধর্ম ব্যবসায়ীদের এসব অপকর্ম বন্ধ করতে হবে। ইবাদত ও ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জায়গাগুলো অপব্যবহার করে ধর্ম ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। অতীতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার সাথে জড়িত অনেককেই এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িতদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সমগ্র দেশে আরোও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।"

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো যথাক্রমে-

১। নড়াইলের লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িত ধর্মান্ধ মৌলবাদী সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় নড়াইলের ডিসি ও এসপিকে প্রত্যাহার করতে হবে।


৩। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৪। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবিলম্বে আইন করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং দেশের সকল মসজিদ-মাদ্রাসায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে।

৫। বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

৬। সকল ধরনের মাদ্রাসায় নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ, শহীদ মিনার নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করতে হবে।

ঢাকা, ১৭ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ