মো: আবুল বাশার হাওলাদার: কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেই চলছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের কথা শোনা যাচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় এবং নিয়োগ বাছাই পরীক্ষায়ও প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে।
এব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা কলাম লিখছেন এবং টকশোতে তুলকালাম করছেন টিভির পর্দায়। শিক্ষামন্ত্রী মিডিয়ার সামনে শিক্ষকদের ওপর দায় চাপিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছেন। তিঁনি নানা পদক্ষেপ জোরেশোরে হাতে নিয়েও এ জঘন্য কাজ বন্ধ করতে পারেননি।
লক্ষ্য করা গেছে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে নানাভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। কখনো বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে, কখনো দেশব্যাপী, কখনো বিচ্ছিন্নভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। বিশেষ করে এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে অহরহ।
তাছাড়া অপেক্ষাকৃত কঠিন বিষয়গুলো ফাঁস হচ্ছে পুরোটাই। দেখা যাচ্ছে ফাঁসের কৌশল ভিন্ন ভিন্ন। তবে যেভাবেই ফাঁস করা হোক না কেনো, এর মাধ্যম হচ্ছে ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইস। শিক্ষক বলুন আর যাকেই বলুন, সবাইতো আর ফেরেশতা নন। সুযোগ পেলে কেউ কেউ এ গর্হিত কাজটি করতে পারে।
চলমান শিক্ষাব্যবস্থা ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস কোনোক্রমেই ঠেকানো সম্ভব নয়।শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় হতাশায় ভুগছেন। তাঁর সাফল্য আছে, ব্যর্থতাও আছে...এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন ফাঁস ব্যর্থতারই অংশ। এর জন্য তিঁনি একা দায়ী নন। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে।
কিন্তু সমস্যা সমাধানের সুষ্ঠু কোনো প্রস্তাবনা লক্ষ্য করা যায় না। আমি প্রশ্ন ফাঁস রোধকল্পে আমার নিজস্ব মতামত তুলে ধরছি...
(১) ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া। (অনলাইনভিত্তিক মনিটরে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পূর্বে ভেসে ওঠবে প্রশ্নপত্র)।
(২) এমসিকিউ প্রশ্ন পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। (যেহেতু এই পদ্ধতির প্রশ্নই ফাঁস হয় বেশি)।
(৩) জেলাভিত্তিক ভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করলে অনেটাই সুফল পাওয়া যাবে।
(৪) বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে পরীক্ষা পদ্ধতির নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
(৫) সনাতন পদ্ধতিতে বড় বড় প্রশ্ন প্রণয়ন করা যেতে পারে। যেমন, ১০০ নম্বরের প্রশ্নে ৫ থেকে ১০টি প্রশ্ন করে স্বল্প সময়ে প্রণয়ন করা সম্ভব এবং পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে প্রশ্ন সরবরাহ করা যায়।
(৬) প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে ডিজিটালাইজড পাবলিক হল নির্মাণ করে পরীক্ষা নেয়া যায়।
(৭) পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্বে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে অনলাইনে পাবলিক হলগুলোর মনিটরে প্রেরণ করতে হবে। তবে সেখানে নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
(৮) প্রশ্ন প্রণেতাদের কমপক্ষে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্যানেল তৈরি করে তাদের দ্বারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্ন করাতে হবে।
(৯) পরীক্ষা দেখভাল করার জন্য একটি শক্তিশালি মনিটরিং সেল থাকবে যারা সার্বক্ষণিক ভাবে নিয়োজিত থাকবে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করার জন্য।
(১০) প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতব্যবস্থা, ইন্টারনেট সংযোগ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ আধুনিক ডিভাইসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখিত প্রস্তাবনাগুলো এখনই পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে অধিকাংশই প্রয়োগ করা সম্ভব এবং প্রশ্ন ফাঁস রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে আমার বিশ্বাস। তাই ঢালাওভাবে সমালোচনা না করে সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে সকলকে একযোগে।
শুধু শিক্ষামন্ত্রীকে তিরস্কার করে বা শিক্ষকদের শাস্তি দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা যাবে না। পরিশেষে বলতে চাই, ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইস দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে... আরো উন্নত ডিভাইস দিয়ে এই ফাঁস রোধ করা সম্ভব।
লেখক,
মোঃ আবুল বাশার হাওলাদার
সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন
ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: