Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যাতাকল ‘ক্রাশ প্রোগ্রামিং’

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বার ২০১৬, ০৬:৫৮

সোহেল আহমদ : শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সেশনজটের কবল থেকে মুক্তি দিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করেছে ‘ক্রাশ প্রোগ্রামিং’। স্নাতক শিক্ষার্থীদের ৪ বছরের কোর্স শেষ করতে আগে যেখানে ৬-৭ বছর লেগে যেত এখন সে জায়গায় চার বছরের ভিতরেই শেষ হবে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক ও ৩ বছরে শেষ হবে ডিগ্রি (পাস) কোর্স।

শিক্ষা জীবনের শেষ দিকে এসে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে সময় অপচয় (!) কমানোর চেষ্টায় অনেকটা সফলও হতে চলেছে জাবি কর্তৃপক্ষ। এ সফলতার পুরো কৃতিত্বটা নিতেই পারে কর্তৃপক্ষ কিন্তু...

শিক্ষার্থীরা কি শুধুই ৪ বা ৩ বছর পরে কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাক্ষর করা একটি শক্ত কাগজ নিয়ে বের হওয়ার চিন্তা থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়? নাকি উচ্চশিক্ষার শেষ ধাপ থেকে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। জীবনের এ পর্যায়ে এসে আরো বেশি শিখতে চায়, নিজেকে জানতে চায়, ছড়িয়ে দিতে চায় নিজেকে। অদূরে দুচোখ মেলে স্বপ্ন দেখতে চায়, সমাজ-রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা করার খোরাক পেতে চায়। আধুনিক একবিংশ শতাব্দীতে সবাই দ্রুত সামনে চলেছে।  

গতি বাড়ছে সবকিছুর। কিন্তু সময়ের অপচয় রোধ করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ ক্রাশ প্রোগ্রামের যাতাকল বসিয়েছে। আর সেই যাতাকলের মধ্যে পড়ে পিষ্ট হচ্ছে লাখও শিক্ষার্থীর স্বপ্ন, সম্ভাবনা।

বিষয়টা এখন এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে কোনোমতে সময়মত সার্টিফিকেটটা শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিতে পারলেই হলো, ব্যাস! আমরা পেরেছি, আমরা সফল। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান, সেশনজট দেখেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভেঙে দিয়ে এর অধিভূক্ত কলেজগুলোকে স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত করার কথা বললে জেগে উঠে জাবি কর্তৃপক্ষ, নিয়ে আসে 'ক্রাশিং প্রোগ্রাম'। একাডেমিক ক্যালেন্ডারে বেধে ফেলা হয় ক্লাস, ফরম পূরণ, পরীক্ষা গ্রহন এবং ফলাফল প্রকাশের সময়সূচী।

সিদ্ধান্তটা ভালই ছিলো, তবে এখন এটা যাতাকলে পরিণত হয়েছে। পাঠ্যদান, বিদ্যার্জন হলো কি হলো না এসব দেখভাল করার কথা বেমালুম ভুলে গেল কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য একটাই, এই দেখুন আমরা পেরেছি। আমরা সব নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসেছি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০১৩-১৪ সেশনে এপ্রিলে শুরু হওয়া ১ম বর্ষের ক্লাস স্নাতক ৪র্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশ সমেত শেষ হবে ২০১৭ এর এপ্রিলে। ১২ মাসের একেকটা শিক্ষাবর্ষে ক্লাস হবে ৭-৮ মাস, ফরম পূরণ-পরীক্ষা সবমিলিয়ে শেষ হবে ১১ মাসে।

প্রতি বর্ষে ৭-৮ মাসের ক্লাসে হয়তো পুষিয়ে দেয়া যেতো, শেষ করা যেতো একেকটি বিষয়ের নির্ধারিত সিলেবাস। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছে এ অলীক স্বপ্ন আদৌ কি পূরণের? রুটিন অনুযায়ী একেক শিক্ষাবর্ষের প্রতি মাসে ক্লাস হওয়ার কথা ১০০ এর উপরে কিন্তু বাস্তবপক্ষে ৩০টি ক্লাস করাটাও অনেক দূরের ব্যাপার।

শিক্ষাবর্ষের প্রায় সময়ই আজ এক বর্ষের ইনকোর্সতো কাল মাস্টার্সের ভাইভা, পরশু গ্রীষ্ম, ঈদ, পূজা-পার্বনের বন্ধ।

এর বাইরে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিতির পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষকদেরও অনুপস্থিতি। শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতির বিষয়ে ৫ মার্কের বিষয় থাকলেও মানা হয়না এর কিছুই। বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত নামকরা কলেজের বর্তমান চিত্র এটি।

আর মফস্বলের অবস্থাতো আরও নাজুক। সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৫৫৭টি কলেজে স্নাতক পড়ানো হয়। মফস্বলের কলেজে স্নাতক কোর্স চালু আছে কিন্তু নেই স্নাতকের শিক্ষক। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষক ক্লাস নেন স্নাতকে। সপ্তাহান্তে ভাগ্যের জোরে কয়েকটা ক্লাস করারই সৌভাগ্য হয় ভবিষ্যৎ গ্রাজুয়েট সার্টিফিকেট ধারীদের। আর অক্সিজেন দিয়ে মফস্বলে তাও যে স্নাতক নামে একটা কোর্স চালু আছে তাই নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর সবার।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়ুয়ারা মান্ধাতার আমলের চিন্তা থেকে বের হওয়ার স্বপ্ন খোঁজার জায়গা পায়না। জাগ্রত হয়না, বিস্তৃতি ঘটাতে পারেনা নিজ প্রতিভার। ব্যতিক্রম দুয়েকজনের উদাহরণের বিষয়টা আলাদা।

সুখী, সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার ট্রাকে চলেছে প্রিয় দেশ। উন্নত দেশ গঠনে আমাদেরও অবদান রাখার প্রয়োজন হয়তো আমাদেরও আছে কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নেই, সবাই সবার মতন করে চলছে। স্বায়ত্বশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যস্ত তাদের ২০-২৫ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে।

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের চিন্তাটা না হয় মন্ত্রনালয়ের! কিন্তু মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে থাকাকালীন স্বপ্নবুণা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ লাখ শিক্ষার্থীর দিকে খেয়াল রাখবে কে?



লেখক : শিক্ষার্থী, এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।


ঢাকা, ১৪ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ