Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

স্বাধীন শিক্ষাদানে শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবার ২০১৭, ০২:১৪

 

১৯৯৪ খ্রীস্টাব্দ ৫ অক্টোবর থেকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। UNESCO-ILO -এর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বের শিক্ষকদের মর্যদা সমুন্নত রাখার জন্য এই দিনটি পালন করা হয়। বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০১৭-এর প্রতিপাদ্য হল "Teaching in Freedom, Empowering Teachers" অর্থাৎ “স্বাধীন শিক্ষাদানে শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন”। 

UNESCO-ILO ঘোষণায় শিক্ষকরাই হবেন শ্রেষ্ঠ পেশাজীবি গোষ্ঠী এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারি। প্রাক্ প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। 

সামাজিক, মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিক্ষকদের ভূমিকা সর্বক্ষেত্রে বিবেচ্য। একটি শিক্ষিত ও আধুনিক জাতি গঠনে শিক্ষকরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আর এই শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এবং পেশাগত মানোন্নয়নে রাষ্ট্রের দায়িত্ব অপরিসীম। 

শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। এই শিক্ষকরাই সমাজের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। শিক্ষকরা হলেন সমাজের যোগ্যতম ব্যক্তি এবং তাদের আসন সবার ঊর্ধ্বে শোভা পাবে। একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষকদের অবদান সবার শীর্ষে। সত্যি কথা বলতে কি, UNESCO-ILO ঘোষণা বাংলাদেশে আদৌ বাস্তবায়ন হয়নি। 

স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও শিক্ষকদের মর্যাদার উন্নতি হয়নি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষকদের সরকারি করেন এবং ডঃ কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন যা শিক্ষা ও শিক্ষকের মানোন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল। 

শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণীত হলেও সেখানে শিক্ষকদের মর্যাদার কথা UNESCO-ILO-এর ঘোষণা অনুযায়ী বলা হয়নি। শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলা হলেও, আজও বাস্তবায়ন হয়নি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগও নেই। খসড়া শিক্ষা আইন প্রণীত হয়েছে। 

সেখানে শুধু শিক্ষকদের সম্ভাব্য অপরাধের কথা উল্লেখ করে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যর্থতা শুধু শিক্ষকদের সাফল্য অন্যদের। সকল দায়-দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর বর্তায়। কিন্তু সেই শিক্ষকদের মর্যাদা ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সর্বনিম্নে। 

এখানে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা স্তর বিদ্যমান রয়েছে। সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, প্রাইভেটসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তবে সকল পর্যায়ের শিক্ষকরাই তাদের প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। নানা অজুহাতে শিক্ষকদের মর্যাদা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও শ্রীলংকায় UNESCO-ILO ঘোষণা অনুযায়ি শিক্ষকদের মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। 

বাংলাদেশে শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে নয়, শিক্ষকরা পদমর্যাদায়ও পিছিয়ে আছে অন্যদের চেয়ে। তাছাড়া শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারি-বেসরকারি নানা পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। এমন কি পদে পদে হেনস্থা হতে হচ্ছে অবাঞ্ছিত লোকদের দ্বারাও। মনে হয়, শিক্ষকরা রাষ্ট্র ও সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এখানে শিক্ষকতা পেশা আকর্ষণীয় নয়; ফলে মেধাবীরা আকৃষ্ট হন না এই পেশা গ্রহণ করতে। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করতে হবে। শিক্ষকের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। UNESCO-ILO রেজুলেশন অনুযায়ি শিক্ষকদের মর্যাদা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশে শতকরা ৯৭% শিক্ষা  প্রতিষ্ঠান বেসরকারি এবং এখানে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক শিক্ষকতা করেন। তারা এমপিও-এর মাধ্যমে সরকারি বেতনের একটি অংশ পান। 

তাছাড়া লক্ষাধিক শিক্ষক সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেও এমপিও পান না। তারা দারুণ অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি কোন মর্যাদা পান না এবং তারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন সরকারি- বেসরকারি বহুমাত্রিক কর্তৃপক্ষের দ্বারা। শিক্ষাক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে শিক্ষকরা দিশেহারা। স্বাভাবিক জীবন অচল হয়ে পড়েছে। 

ভাবতে অবাক লাগে, বেসরকারি শিক্ষকরা উৎসব ভাতা পান ২৫%, বাড়িভাড়া ১,০০০/- টাকা। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা পান না। আরও মর্মস্পর্শী বিষয় হচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষকরা অবসরকালীন নামমাত্র কিছু টাকা পেয়ে থাকেন এবং তা পাচ্ছেন অবসরের তিন-চার বছর পর। কেউ কেউ জীবদ্দশায় পান না। রোগে-শোকেও সেই টাকা হাতে পান না। 

তাছাড়া শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হচ্ছে পদে পদে সর্বত্র। তাই এখনও সময় আছে শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদায় ভূষিত করার। বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০১৭ উপলক্ষে সরকারের প্রতি নিম্নোক্ত দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য তুলে ধরছি। ১) UNESCO-ILO রেজুলেশন বাস্তবায়ন ২) শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন ৩) শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রদান ৪) সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ ৫) অবসরকালীন টাকা ৩০ দিনের মধ্যে প্রদান ৬) বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতাসহ সকল ভাতা সরকারি বিধি অনুযায়ি প্রদান করা ৭) বৈশাখী ভাতা ও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান ৮) চাকুরির বয়স ৬৫ তে উন্নীত করা। 

পরিশেষে চলতে চাই, শিক্ষার মান উন্নত করতে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বাজেটে শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ২০% বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিচালিত হবে শিক্ষকদের দ্বারা। শিক্ষকরাই হবেন জাতীয় উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার। তাহলেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবে রূপান্তরিত হবে। 

 

মোঃ আবুল বাশার হাওলাদার
সভাপতি
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি

 

ঢাকা, ০৪ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ