সাদমান জাহিন : বিটিভিতে যখন সপ্তাহে একটা নাটক হতো মানুষ হুমড়ি খেয়ে দেখতো। তখন ছিল বহুব্রীহি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই- নাটক মানেই ছিল হুমায়ূন আহমেদ।
.
চ্যানেল আই, একুশে টিভি যখন যাত্রা শুরু করে শুরুর দিকে অসাধারণ কিছু নাটক উপহার দেয়। 'বন্ধন' নাটকের 'ব্যস্ত শহরে, ঠাস বুনোটের ভীড়ে...' অর্ণবের গলার এই গান, এখনো আমাদের নস্টালজিক করে ফেলে।
.
মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী এসে হঠাৎ সবকিছু বদলে দেন। পুরনো ট্রেডিশনের শুদ্ধ ভাষা পালটে গিয়ে হয়ে যায় ইয়াং জেনারেশনের ভাষা, দৈনন্দিন কমেডি- সিটকম টাইপের। একান্নবর্তী, সিক্সটি নাইন, কবি, উনমানুষ কিংবা ক্যারাম এক একেকটা ভীষণ জনপ্রিয় নাটক ছিল।
মোশাররফ করিম, তিশা- এদের আবির্ভাবও সেই সময়ের গল্প।
.
আমার মনে আছে, ঈদ আসলে প্রথম আলোর টিভি গাইড কেটে রাখতাম। দাগ দিয়ে রাখতাম কোন কোন প্রোগ্রাম মাস্ট দেখতে হবে- ভূমিকম্প কিংবা সুনামি হলেও যেন মিস না হয়। ফারুকী, হানিফ সংকেত কিংবা হুমায়ূন আহমেদের নাটক, কোন চ্যানেলে কয়টায় হবে মুখস্ত ছিল।
.
তারপর কি একটা ফাজলামি শুরু হল- ঈদ উপলক্ষে তিনদিন, পাঁচ দিন, সাত দিন, দশ দিনের অনুষ্ঠানমালা। প্রথমে যখন পাঁচ-সাতটা চ্যানেল ছিল ব্যাপারটা মানা যেতো, পঁচিশ-ত্রিশটা চ্যানেল থাকলে নিজের পছন্দমতো প্রোগ্রাম খুঁজে পেতে রীতিমতো বেহুঁশ হতে হয়।
.
আজকে টিভি চ্যানেলগুলো একসাথে সাজাতে বসলাম। এতো এতো চ্যানেল-আর সবগুলোতে একসাথে বিজ্ঞাপন হচ্ছে। যে দুটো একটায় প্রোগ্রাম হচ্ছিল- একটাতে নায়ক ন্যাকা গলায় কথা বলছে, আরেকটায় নায়িকা। বিরক্ত হয়ে উঠে গেছি।
.
টিভি চ্যানেলের কর্তারা, আপনাদের বোঝা উচিৎ- দর্শকরা নিজের সময় সম্পর্কে প্রচন্ড সচেতন। তারা অহেতুক রিস্ক নিয়ে কিছু দেখতে যায় না, সময় মাটি হওয়ার ভয়ে। এর চেয়ে বরং তারা গেম অব থ্রোন্স, নারকোস কিংবা কোরিয়ান ড্রামা দেখতে পছন্দ করে। কারণ সেখানে অন্ততঃ সময় নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। ব্যতিক্রম কিছু আছে। সবাই নতুন কিছু চায়। ন্যাকা ন্যাকা নাটক কিংবা গ্রামের ভাঁড়ামিপূর্ণ কমেডি দিয়ে বেশিদিন দর্শক আটকে রাখা অসম্ভব।
.
এমন না যে ভালো কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে না। অবশ্যই হচ্ছে। কিন্তু এতো অনুষ্ঠানের ভীড়ে তাদের খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়। কোয়ান্টিটির থেকে যেটা ম্যাটার করে সেটা হল কোয়ালিটি। ডিরেক্টর কিংবা অভিনেতাদের যেমন গন্ডায় গন্ডায় কন্টেন্ট বানানো ঠিক না, তেমনই চ্যানেলেরও উচিৎ যাচাই বাছাই করে তারপর কন্টেন্ট পরিবেশন করা। এতে মানুষ ভরসা পাবে ভালো কিছু দেখার, প্রোগ্রাম কমুক, ক্ষতি তো নেই!
.
যে মুহুর্তে কোয়ালিটি কন্ট্রোলের কথা লিখছিলাম, তখনই দেখলাম এটিএন বাংলায় সাড়ে দশটায় নাকি মাহফুজ রহমানের সংগীতানুষ্ঠান হবে। থাক, থেমে যাই তাহলে...
সাদমান জাহিন
বুয়েট
ঢাকা, ০৫ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: