আরাফাত আবদুল্লাহ : রিলেশনে গোলমালের জের ধরে ক্যারিয়ার বিসর্জনের গল্পটা আজকাল ডাল ভাতের মতো হয়ে গেছে। একেবারেই সিম্পল আর খুব কমন ঘটনা। রিলেশনে টানা হেঁচড়া থেকে মানসিক অশান্তি। এরপর পড়াশোনায় ঢিলেমি। ফলাফল হচ্ছে খারাপ রেজাল্ট এবং পরবর্তিতে ক্যারিয়ারে ঝামেলা তৈরি হওয়া।
সব থেকে মেধাবী ছেলেটার যে পজিশনে থাকার কথা ছিল আজকে সে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। অফিস টাইমে টং দোকানে বসে চা খায়।
ক্লাসের সব থেকে ট্যালেন্টেড মেয়েটার সিজিপিএ 3.9 থেকে একটানে নেমে গেলো 3.1 এ। কেউ জানে না কেন এমন হয়েছে। মেয়ের এই পরিবর্তন দেখে বাপ মাও অবাক!
আমার কেন জানি মনে হয় জীবনের একটা পর্যায়ে এসে স্বার্থপর হওয়া জরুরী। একটা সময়ে এসে ইমোশনগুলোকে বস্তাবন্দি করে রাখা উচিত। একটা সময়ে রিলেশন, ইথিক্স এই জিনিসগুলো বাদ দেয়া উচিত। মোস্ট অব দ্যা টাইম এইসব ইমোশন ভালো ফল বয়ে আনে না।
ছ্যাঁকা খেয়ে বেকা হয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার যে গল্পগুলো প্রচলিত আছে সেগুলো খুব কম মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। বেশিরভাগ মানুষ সত্যিকার অর্থেই ছ্যাঁকা খেলে নিজের মাঝে আর ফিরে আসতে পারে না। কিংবা ফিরে এলেও অনেক দেরি হয়ে যায়। তখন কিছু করার থাকে না।
মনটা হতে হবে ইস্পাতের মতো। গার্লফ্রেন্ডকে আরেক ছেলের সাথে দেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন। যে হাতগুলো নিয়ে আপনি খেলতেন সেই হাতগুলো এখন অন্যের দখলে। এটা মেনে নিন। মেনে না নিলে আপনি ভেঙ্গে যাবেন। মেনে নিলে দুই দিন অশান্তিতে থাকবেন। তৃতীয় দিন থেকে ঠিকই শান্তিতে থাকবেন।
যে ছেলেটার সাথে আপনার গল্প তৈরি হওয়ার কথা ছিল সে এখন বাইকের পেছনে আরেক মেয়েকে বসায়। এটা দেখার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন। যে কেয়ারটুকু আপনার পাওনা ছিল সেই কেয়ারটুকু এখন পাচ্ছে অন্য কেউ। ব্যাপারটা দেখুন এবং ভুলে যান। লুকিয়ে থাকার কোন মানেই হয় না। কিপ ওয়াচিং। একসময় দেখবেন ব্যাপারটা সয়ে গেছে। আগের মতো আর পেইন লাগবে না।
একটা রিলেশন, সেটা যদি দশ বছরের সম্পর্কও হয় তারপরেও এই জিনিসের জন্য নিজের ক্যারিয়ারের একটা সেকেন্ড নষ্ট করাও উচিত নয়। যে আপনাকে ছেড়ে গেছে সে কিন্তু আপনাকে ছাড়া ভালোই আছে। সে কিন্তু আনন্দেই আছে। ভালো নেই আপনি। কারণ আপনি বোকা। বিসিএসের গুরুত্বপূর্ণ পড়াটা ভুলে গেলেও আপনি নিজের প্রেমিকাকে ভুলতে পারেন না। সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নের ফাঁকে ফাঁকে তার অসাধারণ চেহারাটা ভেসে উঠে।
বাইক দেখলে আপনার মন খারাপ হয়ে যায়। মনে পড়ে বয়ফ্রেন্ডের কথা। আপনার মতো ট্যালেন্টেড ছাত্রীর যে একটা উজ্জ্বল ক্যারিয়ার আছে সেটা আর মাথায় আসে না। নিজের স্বার্থে মানুষকে ছাড় দিতে শিখুন।
জীবনটা অনেক সুন্দর।
আপনিতো সারাজীবন এনগেজড ছিলেন না। এমন একটা সময় ছিল যখন আপনি কারো হাত নিয়ে খেলতেন না। দিন কিন্তু কেটে যেতো ভালোভাবেই। এমন একটা সময় ছিল যখন আপনি কারো বাইকের পেছনের সঙ্গী ছিলেন না। জীবন কিন্তু তখনও কেটে যেতো। নিজেকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে আনন্দ সেটা গ্রহণ করতে শিখুন। দেখবেন বস্তাবন্দি ইমোশন আপনাকে আর কপোকাত করতে পারছে না।
অন্যের সৃষ্টি হয়ে নয়, বরং নিজেই স্রষ্টা হয়ে বাঁচুন। মনে রাখবেন স্রষ্টারা সবসময় একাই হয়। তাদের কোন সঙ্গি / সঙ্গিনী থাকে না।
আমরা অনেক কিছুই হারাতে পারি। কিন্তু হারতে পারি না।
Arafat Abdullah (মধ্যরাতের অশ্বারোহী)
University Of Chittagong
ঢাকা, ০৫ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: