Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

‘এমন তুহিন ছাত্রলীগে বার বার আসেনা’

প্রকাশিত: ২৫ আগষ্ট ২০১৭, ০৩:২১


রাজশাহীর অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজে কেটেছে খুব ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির ছোট্ট সেই ছেলেটির। সেদিন কে জানতো এই ছোট্ট ছেলেটিই হয়ে যাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তথা গোটা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্য নিবেদিত প্রাণ?

কে জানতো যে, কয়েক যুগ ধরে যে বিশ্বিবিদ্যালয়ে রাজত্ব করে আসতো পাকিস্তানী বংশধর, রাজাকার ও ৭১ এর ঘাতক-দালালদের হাতে সৃষ্টি হায়নার দল ছাত্রশিবির, সেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই শিবিরকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকাটি থাকবে সেদিনের সেই ছোট্ট ছেলেটির, যার নাম এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিন।


প্রকৃতপক্ষে, তুহিন ছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের জন্য ত্রাস। কিন্তু ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির এই ছেলেটি কিভাবে হলো এই ত্রাস?


২০০৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক, শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মাজেদুল ইসলাম অপুর হাত ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে পথ চলা শুরু এই এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের। তারপর যখন তার কোনো পদ পদবি ছিলোনা তখন থেকেই মনে প্রাণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা এই তুহিনের একটিই উদ্দেশ্য ছিলো যে শিবিরকে এই ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করতে হবে। সেই উদ্দেশ্য বুকে ধারণ করেই এগিয়ে যেতে থাকলেন তিনি।

একে একে আন্দোলন-সংগ্রামে শিবিরকে মোকাবেলা করতে বড় ভুমিকা রাখা শুরু করল এই নিবেদিত প্রাণ ছেলেটি। নিজ নামেই পরিচিতি লাভ করতে থাকে এই তুহিন। স্থান করে নিতে শুরু করে ছাত্রলীগের ভালোবাসার পাত্র হিসেবে। ততদিনে আওয়াল কবির জয়- মাজেদুল ইসলাম অপু কমিটি ও আহম্মেদ আলী মোল্লা-আবু হোসাইন বিপু কমিটিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়ে যান তিনি। ছাত্রশিবিরের চোখ পড়তে শুরু করে এই তুহিনের দিকে। টার্গেট করতে শুরু করে যেকোনো ভাবে এই ত্রাসকে ধ্বংস করার।

তারই ধারাবাহিকতাই ২০১২ সালের ২ অক্টোবর শিবির যখন সরাসরি অতর্কিত হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তখন সেটা কঠোর হাতে প্রতিরোধ করে এই এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিন, তখনকার সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম, তানিম, সেতু, বর্তমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক রুনু সহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে পরেরদিন দেশের জাতীয় দৈনিকে এই ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাদেরকে সন্ত্রাস আখ্যায়িত করে বড় করে শিরোনাম করা হয়েছিলো এবং কিছু টেলিভিশন চ্যানেলে তাদেরকে সন্ত্রাস বলে টক শোর আয়োজন করা হয়েছিল।

বহিষ্কার করা হয় তুহিন-তাকিম সহ ৯ নেতাকর্মীকে। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন জাগে এই সকল সাংবাদিক ও সুশিলদের কাছে যারা তাদেরকে সন্ত্রাশ আখ্যায়িত করেছেন সেদিন। কি করা উচিত ছিলো সেদিন ওদের? শিবিরের হায়নারা যখন অতর্কিত হামলা করেছিল ছাত্রলীগের উপর তখন কি ওদেরকে মোকাবেলা না করে দাদা ঠাকুর বলে আপ্যায়ন করা উচিত ছিলো? নাকি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা উচিত ছিলো? তারপর যদি মার্ডার হতো ওই হায়নাদের হাতের পিস্তলের বুলেটে এবং চাপাতির আঘাতে এই তুহিন, তাকিম, তানিম, সেতু, রুনুরা তাহলে এই সুশীল ও সাংবাদিকরা দুর্বৃত্তের হাতে খুন বলে টক শো করে ও শিরোনাম ছাপিয়ে খালাস পেতো।

হয়তোবা সেদিন কোনো মিডিয়াতে এই ব্যাপারে টক শো নাও হতে পারতো। তাছাড়া আর কি? (ঠিক যেমনটি করা হয়েছিল তার মাত্র কয়েকদিন পরে ২১ নভেম্বর ২০১২ তে যখন তাকিমের উপর নৃশংস হামলা করে হাত পায়ের রগ কেটে দিয়েছিলো এবং মারাত্মকভাবে জখম করেছিল এই মানুষ রূপী জানোয়াররা)। যাহোক, সেদিন এই ত্যাগী নেতাদের প্রতিরোধের মুখে হেরেছিলো ওই হায়নার দল। বিতাড়িত হয়েছিল ক্যাম্পাস থেকে।

তারপর থেকে শিবিরের আরো বেশি টার্গেটে পড়ে যায় এই তুহিন সহ তাকিম, তানিম ও আরো কিছু নেতাকর্মী। মাত্র এক মাস ১৯ দিন পর ২১ নভেম্বর ২০১২ তে শিবিরের হায়নারা হামলা করে বহিষ্কৃত সহ সভাপতি (বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমটির সদস্য) আখেরুজ্জামান তাকিমের উপর। জীবন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২১ দিন আই সি ইউ তে থেকে কোনোরকম বেঁচে যান তাকিম। সেদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুঝেছিলো প্রকৃতপক্ষে শিবিরের ত্রাস কারা।

তাই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় তুহিন, তাকিম সহ ছাত্রলীগের ৯ নেতাকর্মীর। শিবিরের পরবর্তি টার্গেট থাকে তুহিন। সেটা জানার পরেও নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও শিবিরের সঙ্গে কোনো আপোষ করিনি এই ত্যাগী নেতা তুহিন। ২০ জুলাই ২০১৩ বিশাল সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দেশ কাঁপানো নেতা, প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন ছাত্রনেতা, সাবেক সাধারন সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সাইফুজ্জামান শিখর ভাই সহ অনেক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এম মিজানুর রহমান রানা এবং সাধারন সম্পাদক ঘোষিত হয় এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিন। তারপর থেকে কয়েকবার শিবির তুহিনকে হত্যার হুমকি দিলেও তিনি কোনো আপোষে আসেননি।

তার ভাষা একটাই, ‘জীবন দিবো তবুও শিবিরে সঙ্গে আপোষে যাবোনা। শিবিরিকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছি, করেই যাবো’। যার ফলে ২২ আগষ্ট ২০১৩ ঘটে যায় আরেকটি বর্বরোচিত ঘটনা। ওই হায়নার দল হামলা করে এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কান্ডারী, শিবিরের ত্রাস, এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের উপর। কেটে দিয়েছিলো হাত ও পায়ের রগ।

শুধু তাই নয় পিঠের উপর ও শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রায় অর্ধশত চাপাতির কোপ বসিয়ে দিয়েছিলো এবং ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুলটি কেটে নেওয়ার পর মৃত মনে করে ফেলে রেখে যায়। সেদিন ওরা তুহিন নামের অধ্যায়ের ইতি ঘটাতে চেয়েছিলো। কিন্তু না। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং তীব্র মনোবলের জন্য দীর্ঘদিন পঙ্গু হাসপাতালে ট্রিটমেন্টের পরে মোটামুটি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন আবার। তারপরেও থেমে থাকেননি তিনি। পায়ে বল না থাকায় ক্রাসের উপর ভর দিয়ে চলতে চলতে আবারও মাথায় নেন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের ভার। কারণ ছাত্রলীগকে যে ভালোবেসেছে অন্তর থেকেই। ছাত্রলীগের জন্য যে সর্বদা প্রস্তুত জীবনটাকে বিলিয়ে দিতে। তাইতো বলি, এমন তুহিন ছাত্রলীগে বার বার আসে না।


আজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ইউনিটে এমন তুহিনের মতো কিছু নেতাকর্মী বড়ই দরকার যারা কখনো আপোসে আসবে না এই রাজাকারদের সঙ্গে। তাহলে চক্রান্ত করে দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না পাকিস্তানের দালাল, জামাত-শিবিরের হিংস্র জানোয়াররা। এ বাংলার মাটিতে আর কখনো তৈরি করতে পারবে না পাকিস্তানের ঘাটি। গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

 

মোঃ সোলাইমান হোসাইন
অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক সহ সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী হল শাখা।

 

ঢাকা, ২৪ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ