মোঃ রেজোয়ান হোসেন: সারা দেশে যখন ভয়াবহ বন্যা চলছে, পার্শবর্তী দেশ ভারতেও একই অবস্থা, খাবারের জন্য মানুষ হাহাকার করছে, কখন ত্রাণ নিয়ে কেউ আসবে তাদের সাহায্য করার জন্য সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। শুকনা চিড়া মুড়ি খেয়ে দিনের পর দিন পার করছে। আর আপনি দামি রেস্টুরেন্টে গিয়ে অথবা বাসায় রান্না করে “ইয়ামি ওয়াউ” ক্যাপশন লিখে বিভিন্ন ধরণের খবারের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন। সত্যই বিষয়টি একটু আবাক করার মতই। মুখে আমরা মানবতা মানবতা করে চিল্লাই কিন্তু সহানুভূতির বেলায় শূন্য।
এবারে আসা যাক খাবারের ছবি ফেসবুকে দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত এই প্রসঙ্গে। অতীতে মানুষ ছবি তুলত বিশেষ কোন দিনে, বিশেষ সময়ে, বিশেষ মুহুর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে। সেই যুক্তিমতে আপনি যখন খাবারের ছবি শেয়ার করছেন, তখন আপনি এই মুহুর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইছেন। তাহলে হতে পারে ঐ খাবার আপনি জীবনে প্রথমবারের মত খাচ্ছেন এর আগে কখনও খাননি অথবা বাংলাদেশ একটি দরিদ্র রাষ্ট্র হওয়া স্বত্বেও আপনি যে দামি রেস্টুরেন্টে গিয়েছেন এবং দামি খাবার অর্ডার করেছেন সেটি সবাইকে জানাতে চাইছেন।
আপনি ভালো করেই জানেন আপনার ফ্রেন্ডলিস্টের অনেকেরই ঐ দামি রেস্টুরেন্টে যাবার এবং ঐ সকল দামি খাবার অর্ডার দেওয়ার মত সামর্থ নেই। তার মানে কি এটা দাড়ায় না যে, আপনার ভেতরে সহানুভূতি নেই, আপনি নিজেকে বিত্তবান হিসেবে জাহির করতে চাইছেন অথবা আপনার শেয়ার করা ছবির খাবারগুলো আপনি জীবনে প্রথমবারের মত খাচ্ছেন?
বর্তমান সময়ে তরুণ সমাজের একটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে খাবারের আগে ঐ খাবারের ছবি ফেসবুকে না দিলে যেন খাবার পেটে গিয়ে হজম হবে না। যেরকমটা খাবার আগে গ্যাসের রোগীদের গ্যাসের ওষুধ সেবন করাটা বাধ্যতামূলক। এতা যদি বর্তমান সময়ের ট্রেন্ড হয়, তাহলে আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে। কারণ আমাদের দেশের বেশীরভাগ রেস্টুরেন্টে চাইনিজ খাবার সরবরাহ করা হয়। আর আমরা চাইনিজ সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করছি সামাজিক যোগাযোগ মাধমে।
আমরা যে সাংস্কৃতি রেখে যাব আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরা সেখান থেকে শুরু করবে। এতে করে তারা আমাদের হাজার বছরের বাংলা সাংস্কৃতিকে খুজে পাবেনা।
ফেসবুকে খাবারের ছবি শেয়ারের মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে দিচ্ছি, আমরা সহানুভূতিশীল নয় সেটার পরিচয় দিচ্ছি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাংলা সাংস্কৃতি চেনার পরিবর্তে বিদেশী সাংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
মোঃ রেজোয়ান হোসেন
এম এস এস শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।
ঢাকা, ২২ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: