Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

হৃদয়ে একখণ্ড বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: ১৪ আগষ্ট ২০১৭, ২৩:১৭

আমিনুল মহিম: চারিদিকে ভোরের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। ভাঙতে শুরু করেছে ভোরের নীরবতা। সূর্যটা লালিমা ছড়িয়ে জাগরণী গান শুনাচ্ছে। রাস্তাটা এখনো ফাঁকা। মাঝে মধ্যে দু'একটা যানবাহনের যাতায়াত। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার খানাখন্দ গুলোতে কিছুটা পানির উপস্থিতি পরিলক্ষিত। বৃষ্টি ভেজা রাস্তা এখনো জনমানব শূন্য। আর কিছু সময় পরেই নীরবতা ভেঙে জেগে ওঠবে ক্যাম্পাস। ডুব দিবে চিরচেনা ব্যস্ততায় । প্রাণ ফিরে পাবে প্রাণের ক্যাম্পাস।

রাস্তা থেকে ১০/১২ হাত দূরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক। কিছুক্ষণ আগেই ফটকটা খুলে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বরত আনসারদের কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন মনে হলো। কাকা ডাকা ভোরের নীরবতা এখন ইতিহাসের পথে। সকালের সূর্যটাও নিবুনিবু করে আবার জ্বলে ওঠছে। আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। সূর্যটা কে অন্য দিনের মত তেজস্বী মনে হলোনা।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটা কেমন জানি গুমোট ধরে আছে। চারিদিকে আজানা এক বিষণ্ণতার ছাপ চোখে পড়ছিল। প্রধান ফটক থেকে সামনে যেতে যেতে চোখে পড়বে বাহারি রঙের ফুল। কিন্তু কি আশ্চর্য ! প্রতিনিয়ত সৌরভ ছড়ানো ফুল গুলো আজ অনেকটা নির্জীব দেখাচ্ছে। কেমন জানি মরা মরা হয়ে আছে সেগুলো। এরপরে কিছুদূর যেতেই চোখ আটকানো একটা প্রতিকৃতি বা স্মৃতিফলক। যেটা দেখেই নিজের ভেতরে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। সেই প্রতিক্রিয়ায় থাকবে পরম শ্রদ্ধা, বুকভরা ভালোবাসা, আর হৃদয়ের কোণে লুকানো কৃতজ্ঞতা। তবুও অপলক চেয়ে থাকা ফলকটি দেখেই অজানা কারণে হু হু করে ওঠবে ভেতরটা। অন্তত আগস্ট মাসের কথা মাথায় আসলে মুহূর্তেই যেকারো বুক ধড়পড় করবে। নিশ্বাস ভারী হয়ে যাবে। বুকের বাম পাশ টায় চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হবে। স্মৃতিফলকের ব্যক্তিটি আর কেউ নয় বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের মহান নায়কের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ! যাঁর হাত ধরে শত বছরের নির্যাতিত বাঙ্গালি জাতি ফিরে পেয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। সাথে পেয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ।

বলছিলাম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদয় জুড়ে থাকা একখণ্ড বঙ্গবন্ধু'র কথা ! ক্যাম্পাসের মূল ফটক থেকে আনুমানিক ২০ গজ দূরত্বে এটির অবস্থান। কংক্রিট এর তৈরি চতুর্ভুজাকৃতির ফলকটি দেখলে মনে হবে বঙ্গবন্ধু এখনো বলছে, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"। জ্বল জ্বল করা চোখগুলো বলতে চাইছে, আমার বাঙ্গালি কে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা"। সত্যি এ যেন সময় যন্ত্রে ছড়ে একাত্তরে ফিরে যাওয়া।

ইতোমধ্যে ব্যস্ত হয়ে ওঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থী বহন করা বি আর টি সি'র ডাবল ডেকার গুলো সাঁই সাঁই করে প্রবেশ করছে। একে একে আসছে শিক্ষক কর্মকর্তাদের বহন করা মাইক্রোবাস গুলো। যে যার মত করে কেউবা ক্লাস আবার কেউবা অফিসের পানে ছুটছেন।

"ক্যাম্পাসে আসলে একবারের জন্য হলেও প্রতিকৃতি'র সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তখন হৃদয়ের ভেতরটা এক অদ্ভুত শীতলতায় শিহরিত হয়। হৃদয় জুড়ে বয়ে যায় ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞার বন্যা। মনে হয় এই মানুষটা কত ত্যাগইনা স্বীকার করেছে দেশ জাতির জন্য। মানুষটার আদর্শ আমায় অনুপ্রাণিত করে। অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃস্বার্থ সংগ্রামের ফসল বাংলাদেশ। এই যে দেখছেন আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছি সেটা সম্ভব হতোনা, যদিনা স্বাধীনতা পেতাম। দুঃখের বিষয় কি জানেন, স্বাধীনতার এই স্থপতিকে বিনিময়ে আমরা কিছুই দিতে পারিনি। স্বাধীনতার চার দশক পার হলেও আমরা কি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পেরেছি?" বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নুরুল করিম।

আকাশে চলছে রোধ-মেঘের লুকোচুরি। নোবিপ্রবি'র আকাশ যেন হারিয়ে খুঁজছে নিজেকে। বৃষ্টিতে ধুয়ে-মুছে সতেজ হয়ে ওঠা প্রতিকৃতি টি দিনের আলোতে চকচক করছিল। সময়টা গত বছরের আগস্ট মাস। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যটা যখন নীল আকাশে লালিমা ছড়িয়ে অস্ত যাচ্ছিল। ঠিক এমন একটা সময়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি টি উদ্বোধন করা হয়েছিল। সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত এটি নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসের মধ্যমণি হয়ে আছে। চোখ বন্ধ করলে মনে হয় যেন বঙ্গবন্ধু তরুণদের হাত ইশারায় ডাকছে। আর বলছে, "হে তরুণ তোমরাই পারবে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে। তোমরাই পারবে আমার অপূরণীয় স্বপ্নকে পূরণ করতে। তোমাদের দিকেই আমি চেয়ে আছি"।

আসলেই, তিনি একজন শেখ মুজিব, তিনি একটি দেশ, একটি স্বপ্ন, তিনিই বঙ্গবন্ধু। যাঁর আদর্শ অনুকরণীয় তো বটেই সাথে অনুসরণীয়ও। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি। তাই বলা হয়, একটি মুদ্রার এপিঠ যদি হয় বাংলাদেশ ওপিঠ হবে শেখ মুজিব।

দৃষ্টিনন্দন প্রতিকৃতি টির উদ্যোক্তা এবং স্থপতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান। বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ শুধু একজন বঙ্গবন্ধু একনিষ্ঠ ভক্তই নয় তিনি বঙ্গবন্ধু আদর্শ বুকে ধারণ করা অকুতভয়ী সৈনিকও। তাইতো নোবিপ্রবি'র উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

"বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সারাজীবন সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে সংবিধান দিয়েছেন তাতে অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার কথা বলা হয়েছে। যুগে যুগে যে মহান মানুষ গুলো জন্ম নিয়েছে তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু অন্যতম" বিভিন্ন সময় এভাবেই বঙ্গবন্ধু কে বিশ্লেষণ করেছেন উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান।

''আমরা ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তাই আমাদের তরুন প্রজন্মকে যেমন মুক্তি যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, তেমনিভাবে জানতে হবে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে। সেজন্যই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে চড়িয়ে দিতে এই প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে'' বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন করা নিয়ে এভাবেই অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

কালো মেঘে চেয়ে গেছে আকাশ। এই বুঝি নামবে বৃষ্টি ! না, আবারো শুরু আলো-ছায়া'র খেলা। কালো মেঘ, ম্রিয়মাণ রোদ, কিংবা কান্নারূপ বৃষ্টি সবই এই "অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর" পঙক্তির মর্মার্থই প্রকাশ করছে। কি? আঁচ করা যায় কিছু? এবার রহস্য ভেদের পালা। মেঘ, বৃষ্টি'রা হয়ত জেনে গেছে চলছে আগস্ট মাস। শোকাবহ আগস্ট ! স্বপ্ন ভঙের আগস্ট! এই মাসেই আমরা হারিয়েছি বঙ্গবন্ধু নামক বাংলাদেশকে। অধিক শোকে আমরা আজ পাথর ! চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও আমরা পারছিনা। ১৫ আগস্ট! কি নির্মম, কি ভয়াবহ।
যিনি দিয়ে ছিলেন তাকেই কিনা আমরা কেড়ে নিলাম। আফসোস! অনেক বড় সম্পদ হারিয়েছে বাংলাদেশ। যাঁর ক্ষত এখনো শুকাতে পারেনি এদেশ।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু'র স্মৃতিফলক টির কথা বলছিলাম। অন্যবারের ন্যায় এবারো আগস্ট মাস ব্যাপী শোক কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন । আগস্ট মাস ব্যাপী নানা শোকায়োজনে প্রতিদিন প্রতিকৃতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এর বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের নিবেদিত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে। যা আরেকবার প্রমাণ করে "কীর্তি মানের মৃত্যু নাই "।

শেষ প্রান্তে এসে আরেকবার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে ফিরে তাকাতেই মনে পড়েছে শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে অন্নদাশঙ্কর রায় এর লেখা আশ্চর্য দু’টি চরণ 'যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।' চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এই স্মরণ-রচনা, যেমন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে শেখ মুজিবুর রহমানের অর্জন।

 

আমিনুল মহিম

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

ঢাকা, ১৪ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ