Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১০ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওদের থামান, এমসি কলেজকে বাঁচান

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০১৭, ০৪:২২

 
সোহেল আহমদ: সেমি পাকা ছাত্রাবাস। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেন অন্যরকম এক সৌন্দর্য খেলা করে। বলছি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসের কথা। ওই ছাত্রাবাস নিয়েই গর্ব কমুরারিয়ানদের। 
 
সিলেটে প্রতিষ্ঠিত প্রথম কলেজ এটি। অতীতের ধারাবাহিক সাফল্যের পাশাপাশি নিয়মিতই জ্ঞানের রাজ্যে সফলতার অংশ হয়ে শিরোনাম হচ্ছে এমসি কলেজ। আর ছাত্রাবাসের কথা উঠলে অকপটে উঠে আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম।
 
১৯১৯ সালে যখন তিনি কলেজে এসেছিলেন ছাত্রদের বলেছিলেন, 'ছাত্রদের মধ্যে সহজে আসন গ্রহণ করতে পারি, গুরুরূপে নয় তাদের মধ্যে বসে।'
 
ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ঐতিহ্যে ২০১২ সালের ৮ জুলাই 'শিবির তাড়ানো'র নামে আগুন লাগায় ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় নেতাকর্মী। এঘটনার পর অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী ছাত্রাবাসে এসে অশ্রু জড়ান, দ্রুত সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন ছাত্রাবাসের। আমলাতন্ত্রের গতানুগতিক ঝামেলা এড়িয়ে প্রায় ৫কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি ব্লক পুন:নির্মাণ ও একটি ব্লক সংস্কারের পর ২০১৪ সালের অক্টোবরে হলের উদ্বোধনও করেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু আদৌ বাস্তবে দু'টি ব্লকের উন্নয়ন ছাড়া বাকিগুলোর অবস্থার উন্নতিটা বেশ নাজুক।
 
শোনা যায়, হোস্টেলে সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রিন্সিপাল স্যারের অফিসে শিক্ষার্থীরা গেলে 'ছাত্রলীগ নেতার অনুমতি' না নিয়ে যাওয়ায় শাসানো হয় তাদের। সর্বশেষ ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার আগুন লাগানোর ৫ বছর পূর্তির পাঁচদিন পরের দিনটিকে আবার স্বরণ করিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগের ছেলেরা। 
 
অভিযোগ আছে, প্রাশাসনিক ভবন আর প্রিন্সিপাল অফিসে দৌড়দৌড়ি করা ছাত্রলীগ নেতারাই ছাত্রাবাস ভাঙচুরের কারিগর।
 
গত বুধবার দু'গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হলো টিলাগড় পয়েন্টে অথচ টেনে নিয়ে আসা হলো ছাত্রাবাসে। ভাঙচুরের ঘটনার অনেকটা সেই একই কারণ। কথিত 'শিবির কর্মী'র অনুপ্রবেশ ঘটেছে ছাত্রলীগে। কেউ রাখতে চায় কেউবা চায় না। এই তো সুযোগ...
 
এমসির সবুজ ক্যাম্পাসে প্রায় নিয়মিত হয় অস্ত্রের মহড়া, প্রতি মুহূর্তে ক্যাম্পাসে তটস্থ থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। অনেকটা নিরুপায় কলেজ প্রশাসন, একুশ লাখ শিক্ষার্থীর ভার নিয়ে চলা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরও ক্ষমতা নেই এসকল কথিত 'শিক্ষার্থী সন্ত্রাসীদে'র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। আর পুলিশ প্রশাসনতো 'রাজনৈতিক নেতাদের' হুকুমের গোলাম। পাঁচ বছর আগের ছাত্রাবাস পোড়ানো সন্ত্রাসীদের ছবি চোখের সামনে থাকলেও আসামি খুঁজে পায় না প্রশাসন, এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করতেও 'দম' লাগে। তদন্ত কর্মকর্তা আসে যায় অগ্রগতি নেই দেখে শেষ পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ আদালতের।
 
এই ক'মাস আগেও এক সংস্কৃতিকর্মীর উপর ছাত্রলীগের হামলার বিষয়টা জানাতে তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম কলেজ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী এক নেতার কাছে। তিনি অবিশ্বাস্যভাবে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের কিছুসংখ্যক কথিত নেতার উদাহরণ দিয়ে অকপটে বলে উঠলেন, 'এমসি কলেজ রাজনীতিতে অছাত্র, চোর আর বাটপারে ভরে গেছে।'
 
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে এখন কোনো অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে কিনা তা একান্তই কিংবা বাধ্যতামূলক যে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের তৎপরতা বা তাদের কতটা বাগে আনা গেলো সেটাই মুখ্য হয়ে যায়। তাদের সামনে মোটামুটি মাথা নুইয়ে যদি অনুষ্ঠান করেন তাহলে আপনার অনুষ্ঠান  শান্তিপূর্ণভাবে সফল আর না হলে...
 
অবস্থাটা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে এখন যদি খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও আসেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বসার আনন্দের কথা হয়তো এখন আর ঘুণাক্ষরেও আনতেন না।
 
পরিবর্তনশীল সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজনীতির যেমন প্রয়োজন, রাজনীতিতে নেতৃত্ব তৈরিও ঠিক তেমনি প্রয়োজন। ভাষা আন্দোলন বা স্বাধিকার আন্দোলনসহ অতীতের যেকোনো আন্দোলনে বাঙালি ছাত্রসমাজের ভূমিকা টেনে রাষ্ট্রের 'রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা' তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। আবার অনেক বুদ্ধিজীবির চিন্তাচেতনা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজগুলোতে 'ছাত্র সংসদ' নির্বাচনের দাবীতে সীমাবদ্ধ। অথচ এই সমাজে বা ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যারা প্রতিনিধিত্ব করবে তাদের নৈতিকতার উন্নয়নে কোনো উচ্চবাচ্য করেন না।
 
২০১২, '১৪ ও '১৬ সালে এ ক্যাম্পাসে এসেছেন শিক্ষামন্ত্রী। মতবিনিময় সভার কথা ব্যানারে থাকলেও কয়েক মিনিট বক্তব্য ঝেড়ে দেশে শিক্ষার উন্নয়নের রেশিও ছাড়া তার কাছ থেকে আর কোনো গল্প শুনেনি শিক্ষার্থীরা।
 
সদ্য ১২৫ বছর পেরোনো ঐতিহ্যবাহী এ ক্যাম্পাসে বর্তমান সময়ে সৃজনশীলমুখী কর্মকান্ডের গতিশীলতা পেয়েছে। যে সময়ে ক্যাম্পাসে মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, সৃজনশীলতার ট্র্যাকে ফিরছে একদল শিক্ষার্থী। যে প্রতিষ্ঠান সিলেটে তথা বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনকে সামনের দিক থেকে নেতৃত্ব দেবার কথা সেখানে শকুনের অযাচিত থাবা খামচে ধরে চলেছে সৃজনশীলতাকে।
 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে ছাত্রলীগের প্রতি যে নির্দেশ দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে কাজ করছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুজ্জামান সোহাগ ট্যুইট করলেন, 'আমরা দুই ভাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার অর্পিত দায়িত্ব পালনকারী মাত্র।' কিন্তু বাস্তবে চলছে কার্যত এর উল্টোযাত্রা।
 
আমাদের সিলেটের ছাত্রলীগ বিশেষ করে দীর্ঘদিন অনুমোদিত কমিটি না থাকা এমসি কলেজ ছাত্রলীগের কিছু উশৃঙ্খল নেতা-কর্মী নিজের স্বার্থের প্রাধান্য দিতে গিয়ে শিক্ষাঙ্গন, সমাজব্যবস্থা এমনকি রাষ্ট্রকে নৈতিকভাবে দিনের পর দিন দুর্বল করে দিচ্ছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর এ ক্যাম্পাসের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে, নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়া ছাত্রলীগ নামধারী 'সন্ত্রাসী'দের দৌরাত্ব নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়। জরুরি হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ এবং দৃঢ় পদক্ষেপ।
 
এখনি লাগাম টেনে না ধরতে পারলে এমসি কলেজের ঐতিহ্যকে মাটিচাপা দেবে এই ছাত্রলীগ নামধারী 'সন্ত্রাসীরা'। আমরা সাধারণের প্রত্যাশা পথ ছেড়ে বিপথে ছাত্রলীগ 'মূলে' ফিরবে, ক্যাম্পাস কিংবা হলে নিরাপদ থাকবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
 
 
লেখক : শিক্ষার্থী, এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
 
 
 
ঢাকা, ১৪ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ