Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বঙ্গবাজার নিয়ে ভয়ংকর তথ্য দিলেন এক ভুক্তভোগী

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:১২

ফাইল ছবি

রাজিব ফেরদৌস: বঙ্গবাজারের ঘটনা নিয়ে আমি একদম চুপ ছিলাম। ইচ্ছা করেই চুপ ছিলাম। কিন্ত আমার চুপ থাকাটা একটু বেমানান ছিল। কারণ আমার অফ লাইন অনলাইন বন্ধু লিস্টের অনেকেই জানেন আমারও তাদের মত সেইম বিজনেস। অর্থাৎ কাপড়ের ব্যবসা। আমি বঙ্গবাজার, ঢাকা নিউমার্কেট, নূরজাহান মার্কেটসহ সারাদেশের কাপড়ের ব্যবসায়ীদের বিশেষ করে রেডিমেট গার্মেন্টস বিক্রেতাদের সাথে কতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত গত ১১ বছর ধরে তা আমার আশেপাশের সবাই জানেন। তবুও কেন আমি এত বড় দুর্ঘটনায় চুপ থাকলাম? হ্যাঁ, আজ মনে হলো কিছু লিখি। তাই লিখতে বসলাম। তবে প্রথমেই বলে নেই, আমার এই লেখা অনেকেরই গায়ে জ্বালা ধরাবে। অনেকেই আমাকে কমেন্টে গালি দিয়ে বসতে পারে। সেসবের তোয়াক্কা আমি করিনা।

বঙ্গবাজার, বলুন আর ঢাকা নিউ মার্কেট বা নুরজাহান মার্কেট বলুন, ভালো মন্দ ব্যবসায়ী সব জায়গাতেই আছে। যারা সৎভাবে ব্যবসা করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের জন্য আমার সবসময়ই সহমর্মিতা ছিল এবং থাকবে। কিন্তু আজ আমি এই ব্যবসায়ীদের এমন একটি অন্ধকার দিক তুলে ধরবো যা হয়তো সাধারণ মানুষ জানে না। বা জানার কথাও না। অনেককেই বলতে শুনেছি, বঙ্গবাজারের দোকানদাররা কাস্টমারের সাথে মারাত্মক বাজে ব্যবহার করতো। একই কথা খাটে নিউমার্কেটেরও অনেক দোকানদারের ক্ষেত্রে। হয়তো নিউ মার্কেটে আগুন লাগেনি বিধায় তাদের কথা কেউ বলছে না। কিন্তু প্রেক্ষপট একই। তবে আমি এই বিষয়টি নিয়ে বলবো না। আরো একটি গভীর অন্ধকার দিক আছে এইসব ব্যবসায়ীদের। বলবো সেটা নিয়ে।

আমি 2011 সাল থেকে কাপড়ের ব্যবসায়ে জড়িত। মূলত আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। আমাদের বললাম কারণ এখানে আমরা তিনজন পার্টনার। একজন মারা গেছেন। ফিল্ডে আমরা দুইজন থেকে ব্যবসা পরিচালনা করছি। আমাদের ব্র্যান্ডের নাম পিজিয়ন ফ্যাশন লিমিটেড। মূলত বড়দের এবং ছোটদের টি শার্ট নিয়ে কাজ করি। 2012 সালের পর আমাদের ব্র্যান্ড সারা দেশে এতটাই পপুলার হয় যে, এমন কোনো দোকানদার নেই যে পিজিয়ন বললে চিনতো না। সেই সময় আমাদের ব্যবসা লোকাল বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল।

আমাদের ফ্যাক্টরি থেকে মূলত দোকানদাররা পাইকারি টি-শার্ট কিনে নিয়ে তাদের দোকান থেকে খুচরা বা আবারও পাইকারি সেল দিত। আমরা মাল বানিয়ে কুলাতে পারতাম না। আলহামদুলিল্লাহ এখনও এমনটাই আছে। এর কারণ আমাদের প্রডাক্টের গুণগত মান। আমার মনে পড়ে না, আজ পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রডাক্ট কারো কাছে পুশিং সেল দিয়েছি। বরং অনলাইনে একবার বিক্রি শুরু করে তা বন্ধ করে দিয়েছি চাহিদা মত দিতে না পারার কারণে। আমাদের ব্যবসাটা এখন পুরোটাই অফলাইনে। যাইহোক, আমাদের সেই প্রডাক্ট তখন ঢাকা নিউ মার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, বঙ্গ বাজার, সিটি প্লাজাসহ সারা দেশের দোকানদারদের কাছে হট কেক ছিল। ছিল কেন বলছি তা একটু পর ক্লিয়ার করবো।

তো ব্যবসায়িক খাতিরেই এই দোকানদারকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ এলো। আমরা তখন তাদের সাথে ধীরে ধীরে বাকির ব্যবসা শুরু করলাম। সারা বছর বাকি নিত ইদের আগে আগে টাকা দিত। তবে এইখানে একটা কিন্তু ছিল। আর সেই কিন্তুটা ছিল ভয়াবহ। আমরা ফর্মে ছিলাম বলে আমাদের সাথে যাদের বাকির ব্যবসা ছিল তারা আমাদের সাথে ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে পারতো না। পারতো না বলতে প্রথম তিন চার বছর সেটা করেনি। কিন্তু পরিস্থিতি আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে থাকলো। সারা বছর বাকির লেনদেন করে তারা ইদের আগে টাকা দিতে গড়িমসি করতো। উদাহরণ স্বরূপ কারো কাছে যদি পাঁচ লাখ পাই, তারা সেটা 3 লাখ অফার করতো। আমরা অবাক হয়ে দুই লাখ টাকা কম দেয়ার কারণ জানতে চাইলে, তারা যেটা বলতো সেটা শুনে আমরা আকাশ থেকে পড়তাম।

তারা বলতো, ভাই সারা বছর ব্যবসা করেছি, এখন এক লাখ টাকা তো কম নিবেনই। ব্যবসা তো আর কম করেননি। আর আমার দোকানে রোজার মাসে পাঁচজন সেলস ম্যান পালাক্রমে কাজ করেছে। সারা রাত তারা আপনার প্রডাক্টের এ্যাডভেটাইজ করে কাস্টমারের কাছে বিক্রি করেছে, তাদের এক একজনকে দশ হাজার করে ইদ বোনাস দিয়েছি পঞ্চাশ হাজার। আর বস্তায় হাজার পঞ্চাশেক টাকার মাল রেখেছি। নিয়ে যায়েন। তাদের এই হিসাব দেখে আমাদের কান গরম হয়ে যেত।

আমরা আবার তার খাতা দেখতাম। পাঁচ লাখ টাকার বাকিওয়ালা সারা বছর আমাদের সাথে যে ব্যবসা করেছে তাতে এক লাখ টাকাও লাভ হয় নাই। অথচ সে তার মত করে হিসাব করে দুই লাখ টাকা কম দিচ্ছে। আমরা যেন কোমায় চলে যেতাম। প্রতিবাদ করে লাভ হতো না। পুরো মার্কেট তাদের পক্ষে কথা বলতো। আর সেলসম্যানগুলো এতটা মূর্খ আর গোয়াড় যে তাদের সাথে কথা বলার রুচিও হতো না। দোকানদারের ভাব এমন থাকতো যে, এই টাকা নিলে নেন, না নিলে যান।

তখন থাকতো এমদম চান রাত। ওদিকে ফ্যাক্টরির বেতন বোনাস দিতে হবে। পাওনাদার বিদায় করতে হবে। মাথা কাজ করতো না। টাকা না নিয়ে চলে আসারও উপায় নেই। দোকানদারের কমিশন কর্তন আর সেলসম্যানের ইদ বোনাস না হয় কষ্ট হলেও মানা যেত, কিন্তু মাল যে ফেরত দিত সেটা ছিল একদমই অহেতুক। চান রাত পর্যন্ত মাল বেচে এমনিতেই কিছু মাল থেকে যায়। কিন্তু তারা সেটা দোকানে রাখতো না। ফেরত দিয়ে দিত। অথচ একদিন আগেও ফ্যাক্টরিতে গিয়ে কাড়াকাড়ি করে মাল নিয়ে আসতো।

বঙ্গ বাজার, নিউ মার্কেটসহ বড় বড় মার্কেটের দোকানদারদের প্রায় 98 ভাগই এই ঘটনা ঘটাতো। প্রথম দিকে ফ্যাক্টরীর মালিকরা বুঝতো না। কারণ প্রথম এক দু বছর ভালো লেনদেন করতো। টাকা সব দিয়ে দিত। কিন্তু পরে এদের আসল রূপ প্রকাশ পেত। সেই রূপ যে কতটা ভয়াবহ তা যারা তাদের সাথে ব্যবসা করেছেন তারা সবাই জানেন। আমি খুব কাছ থেকে এইসব দেখেছি। পাওনা টাকা চাইতে গেলে তারা ভিক্ষুকের মত আচরণ করতো। এখনও এমনটাই করে তারা। অথচ বাকি নেয়ার সময় পা চাটতেও দ্বিধা করে না। নানা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে এদের বাধে না। একসময় বাকি টাকা তোলার জন্য রোজার ভিতর ইফতার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত মার্কেটে দৌড়েছি। চান রাত শেষ করে ইদের দিন সকালে বাসায় এসেছি। সেইসব দিন মনে পড়লে এখন গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। বিশ রোজার পর থেকে দেখতাম গা শিউরে ওঠার মত দৃশ্য। রাত তিনটা চারটার দিকে মার্কেটের চায়ের দোকানে বসে বসে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা চোখের পানি ফেলতো। কারণ একটাই। সারা বছর বাকি ব্যবসা করেছে, এখন দোকানদারের কাছে যে টাকা পাবে, তা দিচ্ছে না। কেটে কুটে যা দিচ্ছে তাতে তার মূলধনই ওঠে না। লাভ তো দূরে থাক। প্রতিবাদ করেও লাভ নেই। প্রতিদিন এইরকম ব্যবসায়ীদের অভিশাপে ভারী হতো বঙ্গ বাজার, নিউমার্কেট, নূরজাহান মার্কেট। উপরে আমার যে পার্টনার মারা গেছে বলে উল্লেখ করেছি, সেই পার্টনার একবার নিউ মার্কেটের এক দোকানে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে দোকানী টাকা দেবে না বলায় সে একটু উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল। তখন দোকানী তাকে ধরে মার পর্যন্ত দিয়েছিল। সেই সময় তার সাথে আমিও ছিলাম। আমাকেও কলার চেপে ধরে টেনে হিচরে দোকান থেকে বের করে দিয়েছিল। সমিতিতে বিচার দিয়েও বিচার পাইনি। তারা ছিল সিন্ডিকেট।

আমরা সেই সময়ই একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেই। বাকির ব্যবসা থেকে টোটালী সরে আসি। টোটালী মানে একদম টোটালী।

কিন্তু সেটা অতটাও সহজ ছিল না। কারণ মার্কেটে দোকানদারদের কাছে আমাদের তখনও ৪২ লক্ষ টাকা পড়ে আছে। সেই টাকা সহজে তোলা যাবেনা। তুলতে হলে আবার বাকি দিতে হবে। কিন্তু আমরা তো বাকির ব্যবসা আর করবো না। তাই বুকে পাথর বেধে ৪২ লক্ষ টাকা মার্কেটে ফেলে রেখে 2017 সালে আমরা মার্কেট থেকে সরে আসি। সরে এলাম মানে টোটালি সরে এলাম। সেই সব দোকানদাররা এখনও পর্যন্ত আমাদের টাকা শতকরা 98 জনই পরিশোধ করে নাই। তারা এই দেনা নিয়েই দিব্যি নামাজ পড়ে। রোজা রাখে। বড় বড় ব্যবসায়িক সমিতির হর্তাকর্তা। অনেকে আবার এসি দোকানে বসে বসে পা নাচায়।

আমরা আল্লাহর রহমতে কষ্ট হলেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এখন একদম নগদের উপরে আমাদের ব্যবসা খুব শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু যারা একেবারে নতুন ব্যবসায়ী ছিল, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল, তারপর সব খুইয়ে আজ ফ্যাক্টরি ছেড়ে দিয়ে পথের ফকির তাদের অভিশাপে এখনও বঙ্গ বাজার, নিউ মার্কেটের বাতাস ভারী হয়ে আছে। আমরা সরে এসেছি বলে এই ঘটনা কি বন্ধ হয়েছিল? মোটেও না। এখনও নতুন ব্যবসায়িদের সাথে এটা করে তারা। বঙ্গ বাজার না হয় পুড়ে গেছে, কিন্তু নিউ মার্কেট এবং তার আশেপাশের দোকানদাররা এখনও এটা করে। পাঁচ লাখ করে করে তারা দশটা পার্টির কাছে 50 লাখ টাকা বাকি করবে। ঠিক ইদের আগে আগে তারা সেই টাকা দেবে না। নানা বাহানায় কম দেবে। সেই টাকা দিয়ে তারা ইদের পর নতুন আরেকটি দোকান ভাড়ার অ্যাডভান্স নেবে। ফ্ল্যাট কিনবে। সন্তানদের বিদেশ পাঠাবে পড়ালেখার জন্য। আমি নিজে এসেব এত কাছ থেকে দেখেছি যে লিখে সেটা বোঝানো যাবে না।

একবার এদেরকে বাকি দিলেই সেই জালে জড়িয়ে যেত উৎপাদকেরা। সেই জাল ভেদ করে আর বের হওয়া যেত না। বের হতে গেলে সব টাকা রেখে চলে আসতে হতো। আমরা না হয় সেটা পেরেছিলাম কিন্তু সবাই কি সেটা পারে? আমি বলছি না, এটা শতভাগ দোকানদারের চিত্র। তবে হ্যাঁ 98 থেকে 99 ভাগই এমন। যে দুই এক ভাগ ভালো, এবং লেনদেন ভালো আলহামদুলিল্লাহ তাদের সাথে আমাদের এখনও বাকির ব্যবসা আছে। তারা আমাদের কাছে ট্রাস্টেড।

আর সেটা দেখেই অনেক ফ্যাক্টরীর মালিক মনে করে আমরা যেহেতু ধুমধারাক্কা ব্যবসা করছি তাহলে বোধহয় ব্যবসাটা অনেক সহজ। তখন তারা অল্প পুঁজি নিয়ে মাল বানিয়ে মার্কেটে যায়। তারপর বাকির ফাঁদে পড়ে। তারা মনে করে পিজিয়ন যেহেতু বাকির ব্যবসা করে তাহলে বাকিতে রিস্ক নেই। আর তখনি তারা ফেসে যায়। আমরা অনেককেই ওয়ার্নিং দেই। কিন্তু অনেকে আবার লোভে পড়েও আমাদের কথা তোয়াক্কা করে না। কিন্তু তারা এটা বোঝে না যে, আমরা কত টাকা মার্কেটে ফেলে দিয়ে তারপর দু একজন ভালো দোকানদার পেয়ে তারপর ব্যবসা করছি।

সত্যি বলতে আজকে তাদের এই আগুনে ব্যবসা পুড়ে যাওয়া দেখে আমার খুব একটা সহমর্মিতা কাজ করে না। কারণ আমি জানি তাদের পুড়ে যাওয়া এই ক্ষতির বেশিরভাগ অংশই বইতে হবে সেই সব পাওনাদারদের, সেই সব ছোট ছোট ফ্যাক্টরীর মালিক বা উদ্যোক্তাদের। যাদের কাছ থেকে এই দোকানদাররা লক্ষ লক্ষ টাকার মাল এনেছে ইদের আগে আগে। তারা এখন স্রেফ বলে দেবে ভাই দোকান পুড়ে গেছে টাকা কোথা থেকে দেব? এই দোকানদারদের ব্যাংকে কোটি টাকা আছে, ঢাকায় ফ্ল্যাট আছে। সেসব থেকে তারা কিন্তু এক টাকাও পাওনা পরিশোধ করবে না। তবে হ্যাঁ, যে দু একজন সত্যিকার অর্থেই ভালো ব্যবসায়ী, সৎ ব্যবসয়াী তাদের ব্যাপারটা ভিন্ন হতে পারে।

আমার উপরের লেখাটি ক্ষোভ থেকে নয়, বরং নতুন ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সতর্ক বার্তাও। বঙ্গবাজার না হয় পুড়ে গেছে, কিন্তু অনেক মার্কেট এখনও আছে। আর সেই সব মার্কেটের দোকানদারদের ব্যবসার পলিসি একই রকম রয়ে গেছে। বঙ্গ বাজার হয়তো আবার দাঁড়াবে। কিন্তু ওইসব দোকানদারদের খাসলত চেঞ্জ হবে না এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত। আজকে দেখলাম আধিপত্য নিয়ে বঙ্গবাজারের দোকানদারদের মধ্যে হাতাহাতি। আগুনের লেলিহান শিখা তো এখনও নেভেনি। এর মধ্যেই এই অবস্থা? দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আগুন শুধু তাদের দোকান আর মালপত্রই পুড়িয়েছে, ভিতরের অহংকার, অমানুষ এবং লোভটাকে পোড়াতে পারেনি।

লেখক: রাজিব ফেরদৌস।

ঢাকা, ১৬ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ